শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ

ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে তুমুল লড়াই

ম ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার ইউক্রেনের সেনারা ম কিয়েভ এখনো বলেনি তাদের পাল্টা আক্রমণ শুরু হয়েছে
যাযাদি ডেস্ক
  ১০ জুন ২০২৩, ০০:০০
ইউক্রেন তাদের বহুল প্রতীক্ষিত পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। কারণ কিয়েভ কর্তৃপক্ষ এখনো স্বীকার করেনি। তবে সম্প্রতি তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে হামলা জোরদার করেছে। একের পর এক ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। এমনই এক ড্রোন হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত রাশিয়ার একটি ভবনের ছবি তুলছেন একজন। ছবিটি শুক্রবার রাশিয়ার ভোরোনজে শহর থেকে তোলা -আল-জাজিরা

ইউক্রেনের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে তুমুল লড়াইয়ের কথা জানিয়েছে রাশিয়া। শুক্রবার রণক্ষেত্রে এই লড়াই হয় বলে দাবি করছে মস্কো। তবে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পাল্টা আক্রমণ নিয়ে নীরবতা বজায় রেখেছে কিয়েভ। রণক্ষেত্র থেকে স্বতন্ত্রভাবে খবর সংগ্রহ করা প্রায় অসম্ভব। ফলে ইউক্রেনের আক্রমণের তীব্রতা বা মাত্রা কেমন বা রাশিয়ার প্রতিরক্ষা রেখা ভেদ করতে সক্ষম হয়েছে কিনা তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব হচ্ছে না। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, আল-জাজিরা

কিয়েভের পাল্টা আক্রমণে কয়েক হাজার প্রশিক্ষিত সেনা অংশগ্রহণ করার কথা। যাদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে পশ্চিমারা। গত কয়েক মাস ধরে প্রতিরক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া রাশিয়া বলছে, চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে ইউক্রেনের হামলা প্রতিহত করে যাচ্ছে। কিয়েভ এখনো বলেনি তাদের আক্রমণ শুরু হয়েছে।

রুশপন্থি সামরিক বস্নগাররা শুক্রবার জাপোরিঝিয়া রণক্ষেত্রে তুমুল লড়াইয়ের কথা উলেস্নখ করেছেন। ওরিখিভ শহরের কাছাকাছি অঞ্চলে ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সঙ্গে রাশিয়াকে সংযুক্তকারী একটি স্থল সংযোগের মাঝামাঝিতে এই লড়াই হয়। এই স্থল সংযোগকে ইউক্রেনের একটি সম্ভাব্য প্রধান নিশানা হিসেবে মনে করা হচ্ছে।

পাল্টা আক্রমণের শুরুটা নিপ্রো নদীর কাভোভকা বাঁধ ভেঙে সৃষ্ট বিপর্যয়ের আড়ালে চাপা পড়ে গেছে। বাঁধের পানিতে পস্নাবিত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। কৃষি ও প্রকৃতির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শুক্রবার কিয়েভ বলেছে, তারা একটি ফোন কল থেকে জানতে পেরেছে, বাঁধটি উড়িয়ে দিয়েছে নিয়ন্ত্রণে থাকা রুশ বাহিনী। রাশিয়া দাবি করছে, ইউক্রেন এই নাশকতা চালিয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, তারা এখনো প্রমাণ সংগ্রহ করছে। তবে এমন বিপর্যয় ডেকে আনার মতো ইউক্রেনের কোনো কারণ নেই। বিশেষ করে যখন তাদের বাহিনী আক্রমণের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। রণক্ষেত্রের সর্বশেষ বুলেটিনে রাশিয়ার সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা গত ২৪ ঘণ্টা ইউক্রেনের ২১টি ট্যাংক ধ্বংস করেছে।

বাখমুত শহরের পূর্বাংশে ভূখন্ড পুনরুদ্ধারের দাবি করেছে ইউক্রেন। গত মাসে প্রায় এক বছর ধরে লড়াইয়ের পর শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেয় রুশ সেনারা। এমন দাবি করলেও কিয়েভ দক্ষিণ রণক্ষেত্র নিয়ে কার্যত কিছু বলেনি। ধারণা করা হচ্ছে, এই রণক্ষেত্রেই ইউক্রেনের মনোযোগ রয়েছে সর্বাধিক। কারণ, তারা রুশ সেনাদের উপকূলের দিকে ঠেলে দিতে যায় ও ক্রিমিয়াকে রাশিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চাইছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতের ভিডিও বার্তায় ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বাখমুতে সাফল্যের জন্য ইউক্রেনের সেনাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তবে বিস্তারিত কিছু বলেননি।

ইউক্রেনীয় উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী হান্না মালিয়ার পূর্বাঞ্চলে তুমুল লড়াইয়ের কথা বলেছেন। তবে তিনি বলেছেন, ইউক্রেনীয় সেনারা মূলত রুশ আক্রমণ প্রতিহত করেছে। দক্ষিণাঞ্চলের বিষয়ে তিনি শুধু বলেছেন, ভেলিকা নভোসিল্কা অঞ্চলে লড়াই চলছে এবং রুশ সেনারা ওরিখিভ অঞ্চলে প্রতিরক্ষা জোরদার করছে।

ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার ইউক্রেনের সেনারা

রুশ সেনাদের হটাতে কয়েকদিন আগে পূর্ব দিকের অঞ্চলগুলোতে হামলা চালানো শুরু করে ইউক্রেন। তবে আমেরিকার দু'জন সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই হামলা চালাতে গিয়ে রুশ বাহিনীর 'শক্তিশালী প্রতিরোধের' মুখে পড়েছিল ইউক্রেনীয় সেনারা। এতে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা। এছাড়া হারিয়েছেন মার্কিনিদের পাঠানো সাঁজোয়া যানও।

দীর্ঘ অপেক্ষা ও প্রস্তুতির পর রাশিয়ানদের প্রতিরোধ ভাঙতে এই অভিযান শুরু করে ইউক্রেন। আগেই ধারণা করা হয়েছিল, এ বিষয়টি ইউক্রেনীয়দের জন্য কঠিন হবে। কিন্তু রুশ সেনারা যে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, সেটি 'ধারণারও বাইরে' বলে জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তাদের একজন বলেছেন, ধ্বংসপ্রাপ্ত অস্ত্রের মধ্যে আমেরিকার পাঠানো এমআরএপি সাঁজোয়া যানও ছিল। আর ক্ষতির পরিমাণ বেশ 'উলেস্নখযোগ্য'।

ইউক্রেনের সেনারা বাখমুতে কিছু সাফল্য অবশ্য পেয়েছে। কিন্তু ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, গ্রেনেড ও মর্টারসহ অন্যান্য অস্ত্রে সজ্জিত রুশ বাহিনী ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। কিছু কিছু জায়গায় রাশিয়ার সেনারা কয়েক ধাপে প্রতিরোধ তৈরি করেছে। যার মধ্যে বিস্তৃত অঞ্চলে মাইনও পুঁতেছে তারা। আর এসব মাইন ও প্রতিরোধ ইউক্রেনীয় সেনাদের সাঁজোয়া যানের ব্যাপক ক্ষতি করেছে।

তবে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণে এই ক্ষয়ক্ষতি বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছেন তারা। পশ্চিমা দেশগুলো আগেই জানিয়েছিল, পাল্টা আক্রমণ সফল হতে সময় লাগবে এবং এই অভিযানে সেনা, তাদের যুদ্ধাস্ত্র ঝুঁকিতে পড়বে। এছাড়া ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও কয়েকদিন আগে স্বীকার করেন, পাল্টা আক্রমণ তাদের জন্য অনেক কঠিন হবে এবং এই অভিযানে 'অনেক সেনা মারা যাবে'।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই সোইগু দাবি করেছেন, গত বুধবার বাখমুতে হামলা চালাতে আসে ইউক্রেনের সেনারা। তখন তাদের ঠেকিয়ে দেওয়া হয়। এরপর বৃহস্পতিবার তিনি দাবি করেন, জাপোরিঝিয়াতেও আক্রমণ চালিয়েছিল ইউক্রেনীয় বাহিনী। সেখানেও তাদের রুখে দেওয়া হয়।

ইউক্রেনে রাতভর রুশ বিমান

হামলায় হতাহত ৪

ইউক্রেনে রাতভর বিমান হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এতে এখন পর্যন্ত একজন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রুশ হামলায় একজন নিহত এবং আরও তিনজন আহত হয়েছে। হামলায় চারটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার চারটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ১০টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। এক বিবৃতিতে ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রুশ বাহিনী ১৬টি ড্রোন এবং ছয়টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে