সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
তোশাখানা মামলা

ইমরান খানের দন্ড স্থগিত, মিলছে না মুক্তি

রাষ্ট্রীয় গোপন তারবার্তা প্রকাশ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে দন্ড স্থগিত হলেও ইমরান এখনো নির্বাচনে অযোগ্য রয়ে গেছেন
যাযাদি ডেস্ক
  ৩০ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানের বিরুদ্ধে তোশাখানা দুর্নীতি মামলার রায় স্থগিত করেছে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট। মঙ্গলবার নতুন এই রায় দেওয়া হয়েছে। আদালত জানিয়েছে, কেন ইমরানের কারাদন্ডের রায় স্থগিত করা হলো, এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হবে। এ ছাড়া বর্তমানে কারাগারে আটক ইমরানকে জামিনে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশও দেয় আদালত। সাজা স্থগিত হওয়ার বিষয়টি ইমরান খানের জন্য বড় একটি রাজনৈতিক বিজয়। তবে সাজা স্থগিত হলেও এখনই মুক্তি মিলছে না পিটিআই চেয়ারম্যানের। তাকে রাষ্ট্রীয় গোপন তারবার্তা (সাইফার) প্রকাশ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এই মামলায় তাকে আজ (বুধবার) আদালতে তোলা হবে। সংবাদসূত্র : ডন, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, বিবিসি, আল-জাজিরা

গত ৫ আগস্ট সরকারি কোষাগার তোশাখানার মালামাল নিয়ে দুর্নীতি করার অভিযোগে ইসলামাবাদের একটি জেলা ও দায়রা আদালত তাকে তিন বছরের কারাদন্ড ও এক লাখ রুপি জরিমানা করে। এ ছাড়া পরবর্তী পাঁচ বছর তাকে যে কোনো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য ঘোষণা করে। ওই রায় ঘোষণার পরপরই ইমরান খানকে তার লাহোরের জামান পার্কের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে তিনি পাঞ্জাবের অ্যাটোক কারাগারে আটক আছেন।

জেলা ও দায়রা আদালত কারাদন্ড দেওয়ার পরই এর বিরুদ্ধে আবেদন করেন ইমরান খান। সোমবার এ ব্যাপারে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে শুনানি হয়। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি আমির ফারুক ও বিচারক তারিক মাহমুদকে নিয়ে গঠিত দুই সদস্যের বেঞ্চ সোমবার ঘোষণা দেয়, তারা ইমরানের কারাদন্ডের রায়ের ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্তে উপনীতি হয়েছেন এবং মঙ্গলবার স্থানীয় সময় ১১টায় এ ব্যাপারে রায় দেবেন। তবে সেই রায় দেওয়া হয় স্থানীয় সময় দুপুর ১টার পর।

সোমবারের শুনানির সময় নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী আমজাদ পারভেজ বিস্তারিত যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন। এতে ইমরানের কারাদন্ড বাতিলের বিরুদ্ধে নিজের যুক্তি উত্থাপন করেন তিনি। অপরদিকে, ইমরান খানের আইনজীবী লতিফ খোসা আদালতে গত ২৫ আগস্ট যুক্তি উত্থাপন করেন। তিনি দাবি করেন, তোশাখানা নিয়ে ইমরানের বিরুদ্ধে যে মামলা নির্বাচন কমিশন করেছে, এর কোনো বৈধতা নেই। এ ছাড়া এই বিচার চলাকালে বিচারিক প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি। তিনি আরও দাবি করেন, বিচার চলাকালে ইমরানকে আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। তার পক্ষের সাক্ষীদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়নি।

এর আগে গত বুধবার পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট এক পর্যবেক্ষণে জানায়, ইমরানের বিরুদ্ধে কারাদন্ডের যে রায় দেওয়া হয়েছে, সেই রায়ে গুরুতর ত্রম্নটি ছিল। ওই সময় সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, ইসলামাবাদ হাইকোর্ট এই রায়ের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটি দেখে পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এখনই ছাড়া পাচ্ছেন না ইমরান

ইসলামাবাদ হাইকোর্ট ইমরান খানের সাজা স্থগিত করলেও ইমরান খান এখনই কারাগার থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না। বর্তমানে পাঞ্জাবের অ্যাটোক কারাগারে বন্দি আছেন তিনি। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত সরকারি গোপন নথি আইন বিশেষ আদালত অ্যাটোক কারাগারে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। এতে ইমরানকে কারাগারেই আটক রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং আগামী ৩০ আগস্ট গোপন তারবার্তা প্রকাশ (সাইফার মামলা) মামলায় তাকে আদালতে উপস্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে।

কী এই সাইফার মামলা? প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়ার পেছনে আমেরিকার ষড়যন্ত্র রয়েছে, এই অভিযোগ ছিল ইমরানের। আর সেই অভিযোগের প্রমাণ দিতে গিয়ে তিনি একটি নথি প্রকাশ্যে আনেন। জনসভায় তা প্রদর্শনও করেন। সেটি নিয়েই ইমরানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। যদিও ইমরানের দাবি, তিনি যা দেখিয়েছিলেন, তা সাইফার, অর্থাৎ গোপন খবরের সাংকেতিক রূপ নয়।

পাকিস্তানের ইংরেজি সংবাদমাধ্যম 'ডন' সেই চিঠি প্রকাশ করেছে। অ্যাটোক কারাগারের সুপারিনটেনডেন্টের কাছে পাঠানো চিঠিতে বিশেষ আদালতের বিচারক হাসনাত মুহাম্মদ জুলকারনাইন বলেছেন, 'অভিযুক্ত ইমরান খান নিয়াজি, পিতা ইকরামুলস্নাহ খান নিয়াজি, ঠিকানা জামান পার্ক লাহোর- তাকে বিচারিক রিমান্ডে রাখার নির্দেশ দেওয়া হলো, যিনি এরই মধ্যে বিভাগীয় জেলে আটক আছেন।'

ইমরান খান নির্বাচনে অযোগ্যই থাকছেন

তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে যেদিন কারাদন্ড দেওয়া হয়, সেদিন ইসলামাবাদের সেই জেলা ও দায়রা আদালত তাকে নির্বাচনে 'অযোগ্য' ও পাঁচ বছরের জন্য রাজনীতি থেকেও নিষিদ্ধ করে। সেই দন্ড স্থগিত হওয়ার পর অনেকে মনে করছেন- ইমরান নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যে অযোগ্য ঘোষিত হয়েছেন, সেটিও বাতিল হয়ে গেছে। তবে পাকিস্তানি আইন বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবী মির্জা মইজ বেগ জানিয়েছেন, দন্ড স্থগিত হলেও ইমরান এখনো নির্বাচন করা থেকে অযোগ্যই রয়ে গেছেন।

আইনজীবী মির্জা বলেন, 'এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ শুধুমাত্র দন্ড স্থগিত হয়েছে, তিনি তোশাখানা দুর্নীতির যে অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন, সেটি রয়ে গেছে।' তিনি আরও বলেন, 'পাকিস্তানের সংবিধান অভিযুক্তদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখে। সে হিসেবে ইমরান খান এখনো নির্বাচন করার ক্ষেত্রে অযোগ্য রয়ে গেছেন। এ ছাড়া তিনি তার রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের নেতৃত্বও দিতে পারবেন না।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে