রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
বিবিসির প্রতিবেদন

গাজার আল-শিফায় হামাসের 'কমান্ড সেন্টার' থাকার প্রমাণ নেই

কোনো ধরনের অস্ত্রের ভান্ডার দেখতে পায়নি ইসরাইলি বাহিনী অভিযান শেষ হওয়ার আগেই অস্ত্র উদ্ধারের দাবি! গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১ হাজার ৫০০
যাযাদি ডেস্ক
  ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
গাজার আল-শিফা হাসপাতালে ইসরাইলি বাহিনীর অভিযান

ইসরাইল দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছিল, গাজা উপত্যকার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফা ভেতর হামাসের কমান্ড সেন্টার, অস্ত্র, বাঙ্কার ও অন্যান্য অবকাঠামো রয়েছে। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার সারাদিন হাসপাতালের ভেতর অভিযান চালায় সেনারা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম 'বিবিসি' জানিয়েছে, অভিযান শেষে কয়েকটি পুরনো রাইফেল, কয়েকটি বুলেট প্রম্নফ জ্যাকেট, তিনটি হ্যান্ড গ্রেনেড, কয়েকটি সিডি, একটি হ্যান্ডগান, একটি ল্যাপটপ, একটি ব্যাগ এবং কয়েকটি ছুরি উদ্ধার করে এনেছে ইসরাইলি বাহিনী। সেখানে শক্তিশালী অস্ত্র বা কোনো ধরনের অস্ত্র ভান্ডার দেখাতে পারেনি তারা। আর এ বিষয়টি নির্দেশ করছে, হাসপাতালের ভেতর হামাসের কমান্ড সেন্টার রয়েছে, এর যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা, এএফপি

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসপাতালে হয়ত বড় ধরনের কিছু পায়নি ইসরাইলি সেনারা। তবে হামাসের সদস্যরা জানত- তারা হাসপাতালে আসবে। ফলে যদি সেখানে তাদের কোনো কমান্ড সেন্টার থেকেও থাকে; সেটি হয়ত তারা সরিয়ে নিয়েছে।

তবে ইসরাইলি সেনারা দাবি করেছে, হাসপাতালের ভেতর থেকে তারা যেসব অস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি উদ্ধার করেছে, সেগুলোর মধ্যে খুবই ক্ষুদ্র একটি অংশ সামনে আনা হয়েছে। বিবিসি জানিয়েছে, এখন যা মনে হচ্ছে, বিতর্কিত এই অভিযানের পর এটির স্বীকৃতি পেতে ইসরাইল এখন সর্বোচ্চটা দেখানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু আল-শিফার ভেতর ইসরাইলি বাহিনী কোনো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে প্রবেশ করতে দেয়নি। এর ফলে তারা সেখানে কী পেয়েছে এবং কী পাওয়ার দাবি করবে, সেটির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হবে না। যদিও বিবিসি দাবি করেছে, তারা ইসরাইলি বাহিনীর সঙ্গে ভেতর গিয়েছিল। এদিকে, হামাস জানিয়েছে, হাসপাতালের ভেতর ইসরাইল অস্ত্র পাওয়ার যে দাবি করেছে, সেটি 'মিথ্যা ও নিম্নমানের প্রোপাগান্ডা।'

হাসপাতালে অভিযানের আন্তর্জাতিক তদন্ত চায় কাতার

এদিকে, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার বৃহত্তম হাসপাতাল আল-শিফায় ইসরাইলি বাহিনীর অভিযানকে 'যুদ্ধাপরাধ' এবং 'আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লঙ্ঘন' উলেস্নখ করে এ ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেছে কাতার। বুধবার এক বিবৃতিতে এই দাবি জানিয়েছে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরাইলের চলমান যুদ্ধে দূতের ভূমিকায় রয়েছে কাতার। বুধবারের বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, 'দখলদার ইসরাইলি বাহিনী এখন গাজার হাসপাতালগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। এটা পরিষ্কার যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লঙ্ঘন। কাতার এ ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করছে।'

বুধবার অভিযান শেষ হওয়ার আগেই ইসরাইলের রাজধানী জেরুজালেমে এক সংবাদ সম্মেলনে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, আল-শিফার গোপন স্থান থেকে উলেস্নখযোগ্য পরিমাণ অস্ত্র-গোলাবারুদ এবং সামরিক প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম জব্দ করেছে ইসরাইলি বাহিনী।

ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১ হাজার ৫০০

ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১১ হাজার ৫০০ জন। বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য দিয়েছে। গাজার সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে চার হাজার ৭১০ জন শিশু এবং তিন হাজার ১৬০ জন নারী।

একটি বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী হাসপাতালগুলোতে হামলা করায় মোট ২০০ চিকিৎসাকর্মী নিহত হয়েছেন। গাজায় ২২ জন বেসামরিক প্রতিরক্ষাকর্মী এবং ৫১ জন সাংবাদিকও নিহত হয়েছেন। সেখানে ইসরাইলি হামলায় আহত হয়েছেন ২৯ হাজার ৮০০ জন। আহতদের ৭০ শতাংশ শিশু এবং নারী।

এর আগে, মঙ্গলবার ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি আক্রমণে গাজায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১১ হাজার ৩২০ জন। নিহতদের মধ্যে চার হাজার ৬৫০ জন শিশু এবং তিন হাজার ১৪৫ জন নারী। বুধবারের বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরাইলি সেনাবাহিনীর হামলায় ৯৫টি সরকারি ভবন ও ২৫৫টি স্কুল ধ্বংস হয়েছে। তিনটি গির্জা ছাড়াও প্রায় ৭৪টি মসজিদ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ১৬২টি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী ৫২টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ৫৫টি অ্যাম্বুলেন্স ধ্বংস করেছে। তাদের হামলায় ২৫টি হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে