সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
গাজায় তান্ডব

শরণার্থী শিবিরে ফের ইসরাইলি হামলা

জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে হামলায় নিহত অন্তত ১৮ জন, অনেক মানুষ চাপা পড়েছেন ভবনের নিচে পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে তীব্র সংঘাত, ইসরাইলি সেনা নিহত গাজায় দুই জিম্মির মৃতদেহ উদ্ধার করেছে ইসরাইলি বাহিনী
যাযাদি ডেস্ক
  ১৮ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
ইসরাইলি বিমান হামলায় দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরে একটি ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় -রয়টার্স অনলাইন

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে আবারও ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা 'ওয়াফা নিউজ' জানিয়েছে, শুক্রবার সকালে কয়েকটি আবাসিক ভবনে বিমান হামলা চালায় ইসরাইলি সেনারা। পরে জাবালিয়ার ফালাওজাতে আরেকটি বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। এতে তিনজন নিহত হন। সংবাদসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স, বিবিসি, এএফপি

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, বিমান হামলার পর অনেক মানুষ ভবনের নিচে চাপা পড়েছেন। এখন তাদের উদ্ধারে কাজ করছেন সাধারণ মানুষ। শুধু খালি হাত ব্যবহার করেই ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে সেখানে প্রাণের স্পন্দন খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন তারা। জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে হামলা করা ছাড়াও গাজা সিটির আল-জায়তুনের একটি স্কুলে হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। ওই হামলায় অসংখ্য মানুষ আহত ও নিহত হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে।

গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজার বিভিন্ন স্থানে নির্বিচার বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। তাদের এসব হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১২ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩০ হাজারের বেশি মানুষ। সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি ছাড়াও গাজার হাসপাতালগুলোর ভেতরও বর্বর হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলিরা। আর তাদের এমন অমানবিক হামলায় গাজায় বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

পশ্চিম তীরেও তীব্র সংঘাত ইসরাইলি সেনা নিহত

এদিকে, ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরেও তীব্র সংঘাত চলছে। সেখানে ফিলিস্তিনিদের হাতে এক ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছে। ইসরাইল জানিয়েছে, 'তাদের নিরাপত্তা বাহিনী তিন বন্দুকধারীকে গুলি করে হত্যা করেছে। এসব বন্দুকধারীরা পশ্চিম তীর থেকে জেরুজালেমের দিকে যাওয়ার একটি চেকপয়েন্টে গুলি শুরু করেছিল। এ ঘটনায় ইসরাইলের এক সেনা নিহত হয়েছে এবং আরও কয়েকজন আহত হয়েছে। হামাসের সামরিক শাখা দাবি করেছে, তারাই ওই হামলা চালিয়েছে।'

এ ছাড়া ফিলিস্তিনের জেনিন শহরে আবারও ইসরাইলি অভিযানের খবর পাওয়া গেছে। ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, সংস্থাটির একটি মেডিকেল সার্ভিসেস টিম আল-আহলি হাসপাতালের ভেতরে আটকা পড়েছে। সেখানে তাদের কর্মীরা প্রচন্ড বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ শুনছিল। সামাজিক মাধ্যমে তারা জানিয়েছেন, 'হাসপাতাল প্রাঙ্গণে বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছেন। আমাদের দলটি হাসপাতাল প্রাঙ্গণের ৩০ মিটারের মধ্যেই অবস্থান করছিল। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না।'

এদিকে, ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি দাবি করেছেন, গাজার দুটি ভূগর্ভস্থ এলাকায় গত কয়েক দিন ধরে হামাসের কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে লক্ষ্য করে অভিযান চালাচ্ছেন তারা। হামাসের কয়েকজন সিনিয়র কমান্ডার এসব জায়গায় লুকিয়ে আছেন। এর মধ্যে হামাসের নর্দার্ন গাজা ব্রিগেডের প্রধান আহমেদ রান্দোর এবং হামাস রকেট ব্রিগেডের প্রধান হাইমান সিয়ানও আছেন। হ্যাগারি জানিয়েছেন, এর বাইরে আরও একটি ভূগর্ভস্থ এলাকায় হামলা চালানো হয়েছে। সেখান হামাসের আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির অবস্থানের কথা জানান হ্যাগারি।

দুই জিম্মির মৃতদেহ উদ্ধার

ইসরাইল জানিয়েছে, তাদের সেনারা গাজায় দুই জিম্মির মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে ৬৫ বছর বয়সি ইয়েহুডিত ওয়েইসকে গত ৭ অক্টোবর অপহরণ করে নিয়ে এসেছিল সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার উত্তর গাজার আল-শিফা হাসপাতাল সংলগ্ন একটি জায়গা থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া শুক্রবার গাজা আল-শিফা হাসপাতালের কাছ থেকে নোয়া মার্সিয়ানো নামে এক মৃত সেনার মরদেহ উদ্ধার করেছে ইসরাইলি সেনারা। উদ্ধারের পর তাকে ইসরাইলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

নোয়ার মরদেহ উদ্ধারের ব্যাপারে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে বলেছে, '১৯ বছর বয়সি কর্পোরাল নোয়া মার্সিয়ানোকে গত ৭ অক্টোবর অপহরণ করা হয়। আল-শিফা হাসপাতালের কাছে তার মরদেহ পাওয়া যায়। সেখান থেকে অন্যান্য সেনারা তার মরদেহ উদ্ধার করেন। আইডিএফ তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে এবং আমরা তাদের সহায়তা করে যাব।'

তিনদিন আগে হামাস দাবি করে, ইসরাইলি নারী সেনা নোয়া ইসরাইলের চালানো বিমান হামলাতেই প্রাণ হারিয়েছেন। ওইদিন তারা একটি ভিডিও প্রকাশ করে। সেটিতে দেখা যায়, নোয়া বলছেন, তাকে ৭ অক্টোবর হামাসের যোদ্ধারা গাজায় ধরে নিয়ে আসেন। ওই ভিডিওতেই নোয়ার মরদেহ দেখানো হয়। তখন আরবিতে একটি লেখা ভেসে ওঠে, সেটি বলা হয়- নোয়া ইসরাইলিদের চালানো বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন।

গত বুধবার গাজার আল-শিফা হাসপাতালের ভেতর অভিযান শুরু করে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। এরপর থেকে এই হাসপাতালের ভেতর তান্ডব চালিয়ে আসছে তারা। ইসরাইল দাবি করেছে, আল-শিফার নিচে হামাসের কমান্ড সেন্টার আছে। যদিও এ দাবির পক্ষে এখন পর্যন্ত শক্তিশালী কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি তারা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে