রোববার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২

চামড়ার দামে এবারও বিপর্যয় কার্যকর পদক্ষেপ নিন

  ০৬ আগস্ট ২০২০, ০০:০০
চামড়ার দামে এবারও বিপর্যয় কার্যকর পদক্ষেপ নিন

কোরবানির পশুর চামড়া রক্ষায় সরকার বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল কিন্তু কোনো উদ্যোগই কাজে দিল না- এমনটি উঠে এসেছে সম্প্রতি প্রকাশিত খবরে। জানা যাচ্ছে, গত বছরের মতো এবারও রাস্তায় নষ্ট হয়েছে কোরবানির পশুর চামড়া। এছাড়া মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া না কেনায় সিংহভাগ এতিমখানা আর মাদ্রাসায় দান করে দিয়েছেন কোরবানিদাতারা। আর রাজধানীতে অল্পসংখ্যক গরুর চামড়া আকারভেদে ১৫০ থেকে ৬০০ টাকা আর ছাগলের চামড়া ১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে বলেও জানা গেছে- যা গত কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। ফলে সার্বিক পরিস্থিতিতে এবারও দেখা যাচ্ছে যে, কোরবানির পশুর চামড়ার দামে বিপর্যয় পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমরা মনে করি, এভাবে যদি চামড়ায় বিপর্যয় সৃষ্ট হয় তবে বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে- যা আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা সমীচীন।

প্রসঙ্গত বলা দরকার, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঈদের আগে চামড়াশিল্পের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে। ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ধরা হয়েছে। আর ঢাকার বাইরে ধরা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ২৮ থেকে ৩২ টাকা। এছাড়া সারাদেশে খাসির চামড়া গত বছর প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৩ থেকে ১৫ টাকা করা হয়। আবার দরপতন ঠেকাতে ২৯ জুলাই কাঁচা ও ওয়েট-বস্নু চামড়া শর্তযুক্ত রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে মন্ত্রণালয়। বড় আকারের গরুর চামড়া গড়ে ৩৫-৪০ বর্গফুট, মাঝারি আকারের গরুর চামড়া গড়ে ২৫-৩০ এবং ছোট আকারের গরুর চামড়া গড়ে ১৬-২০ বর্গফুটের হয়। তাতে সরকারের নির্ধারিত দাম হিসাব করলে বড় চামড়া কমপক্ষে দেড় হাজার টাকা, মাঝারি চামড়া হাজার টাকা ও ছোট চামড়ার দাম হয় কমপক্ষে ৬০০ টাকা। তার থেকে প্রক্রিয়াজাত, শ্রমিকের মজুরি ও আড়তদারের মুনাফা বাদ দিলেও যা দাঁড়ায় তার কাছাকাছি দামেও চামড়া বিক্রি হয়নি। আর দাম নির্ধারণ ও রপ্তানির ঘোষণা দেওয়ার পরও কোরবানির পশুর চামড়ার দামের বিপর্যয় ঠেকানো যায়নি। অথচ গতবারের চেয়েও কোরবানির পশুর চামড়ার দাম এবার ২০ থেকে ২৯ শতাংশ কমিয়ে ধরা হয়েছে।

আমরা বলতে চাই, চামড়ার দরপতনের সুযোগে দালাল, ফড়িয়া, ব্যাপারী, আড়তদার এমনকি এই খাতের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বা ট্যানারিগুলোর মুনাফা বাড়ার পথ উন্মুক্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা- এমনটি প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে। এছাড়া নির্ধারিত মূল্যে চামড়া বিক্রি ও যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করা হচ্ছে কি না তা তদারকি করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তদারকি আর জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানও কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। চামড়ার বিপর্যয় ঘটলে তা সন্দেহাতীতভাবেই উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে- যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

সংশ্লিষ্টদের এই বিষয়টিও আমলে নেওয়া দরকার যে, আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা বলছেন, চলতি বছর গতবারের চেয়ে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কম চামড়া আসবে। তাই চামড়ার বেশ চাহিদা রয়েছে। তারপরও চামড়ার দাম কম হওয়ার পেছনে পুরনো যুক্তিই দেখিয়েছেন তারা। এছাড়া এবার করোনাভাইরাস মহামারিতে চামড়া সরকারি দরও কমে যাওয়ায় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনতে উৎসাহ হারান। ফলে অনেক স্থানে কোরবানির চামড়ার ক্রেতাই পাওয়া যাচ্ছিল না বলেও জানা গেছে। আমরা বলতে চাই, দাম না পেয়ে অনেকেই রাস্তায় চামড়া ফেলে চলে গেছেন। এমনকি সিটি করপোরেশনের বুল্ডোজার দিয়ে অপসারণ করতে দেখা গেছে চামড়া। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকেও রাস্তায় চামড়া পড়ে থাকার খবর পাওয়া গেছে, ফলে পরিস্থিতি কতটা উৎকণ্ঠার তা আমলে নেওয়া জরুরি।

সর্বোপরি, কোরবানির পশুর চামড়ার দামে আবারও বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটলো, তা আমলে নিয়ে এই ধরনের বিপর্যয়ের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে