শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত দেশ

বিশাল সাহা ঢাকা কলেজ, ঢাকা
  ১৮ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

দেশে চলছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। গত বছর মার্চে দেশে করোনার আগমনের পর থেকেই কোমর ভাঙা অবস্থায় বিধ্বস্ত দেশ। মার্চ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত করোনা দেশে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে। করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃতের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েছিল। করোনা চিকিৎসার জন্য কিছু রোগীর যখন আইসিইউ প্রয়োজন তখন রোগী আইসিইউ না পেয়ে নির্মম মৃতু্যর স্বীকার হয়। আইসিইউ হলো নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র, আইসিইউ। গত বছরের পর্যবেক্ষণ এবং পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে স্বয়ংসম্পূর্ণ আইসিইউর সংখ্যা ছিল ১১২টি। প্রায় আঠারো কোটি জনসংখ্যার দেশে আইসিইউ সংখ্যা মাত্র এক শো বারোটি! এখানে স্বয়ংসম্পূর্ণ আইসিইউ বলতে বোঝানো হয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইউনিটকে। যেখানে বিশেষ ধরনের শয্যা, কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ভেন্টিলেটর, টিউব, পাম্প, হার্টরেইট, বস্নাড প্রেসারসহ অন্যান্য শারীরিক পরিস্থিতির তাৎক্ষণিক চিত্র পাওয়ার মনিটরসহ নানা আধুনিক মেডিকেল সরঞ্জাম থাকে। থাকে বিশেষজ্ঞ দক্ষ জনবল। দেশে করোনা সংক্রমণ কিংবা দেশের জনসংখ্যা হিসেবে এই সংখ্যা একেবারে নগণ্য। গত জানুয়ারিতে এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার অনুপাতে আইসিইউ বেডের সংখ্যা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের চেয়ে কম। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে জনসংখ্যার দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশের আইসিইউর সংখ্যা একেবার তলানিতে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, নেপালে প্রতি এক লাখ মানুষের জন্য আইসিইউ আছে ২.৮টি, ভারত ও শ্রীলঙ্কায় ২.৩টি, পাকিস্তানে ১.৫টি, মিয়ানমারে ১.১টি সেখানে বাংলাদেশে আছে দশমিক ৭টি (০.৭ টি!)। অর্থাৎ প্রতি এক লাখ মানুষের জন্য একটি আইসিইউও নেই। গত বছরের শেষ দিকে করোনার প্রকোপ ধীরে ধীরে কমলেও এ বছরের শুরু থেকে আগের চেয়েও শক্তিশালীরূপে এসেছে করোনা। এবছরের মার্চ মাস থেকে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে অদৃশ্য এই ভাইরাস কোভিড-১৯। সরকারি তথ্যমতে, পালস্না দিয়ে প্রতিদিনই নিজের রেকর্ড পাল্টে দিচ্ছে করোনা, আক্রান্ত ও মৃতু্যহার দিয়ে। যার দরুণ সরকার আবারও লকডাউনের সিদ্ধান্তে এসেছে। এ বছরও করোনায় সংক্রামিত রোগীদের আইসিইউ পাওয়ার জন্য হাহাকার করতে দেখা যায়। এক বছরে দেশে অনেক কিছুর পরিবর্তন হলেও কোনো পরিবর্তন বা উন্নতি লক্ষ্য করা যায়নি চিকিৎসা খাতে এমনকি দেশে পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ সংখ্যা বেড়েছে কিনা সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। সম্প্রতি জানা যায় দেশবরেণ্য চিত্রনায়িকা কবরী করোনা আক্রান্ত হন এবং তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। প্রথমে তিনিও কোনো আইসিইউ পাননি। পাবে কীভাবে, সব পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ যে রোগীতে পূর্ণ। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তিনি আইসিইউতে ভর্তি হতে পারেন যেটা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। বিশেষ করে নিম্নমধ্যবিত্তদের জন্য চরম ভোগান্তি। কবরী চলে গেছেন পরপারে।

দেশে ১১২টা পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ ছাড়াও আরও কিছু সংখ্যক আইসিইউ আছে কিন্তু প্রয়োজনীয় যন্ত্রাবলি ও অভিজ্ঞ ডাক্তার সেখানে না থাকার দরুণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা। একে আমরা করোনায় বিপর্যস্ত তার উপর চিকিৎসাব্যবস্থার করুণ পরিণতি! শুধু আইসিইউ না দেশে বর্তমানে হাসপাতালগুলোয় রোগীর তুলনায় বেড সংখ্যা খুবই কম। সম্প্রতি জানা যায় করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেড ভর্তি হয়ে গেছে। নতুন করে ভর্তি হতে আসা রোগীরা পড়ে যায় বিপাকে। এমন অবস্থা দেশের অন্যান্য হাসপাতালগুলোয় নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা উপকরণ। করোনা থেকে নিজেদের উদ্ধারে যেমন দরকার স্বাস্থ্য সচেতনতা তেমন দরকার সরকার ও বিভিন্ন সংস্থার নজরদারি। যাদের পর্যবেক্ষণ ও উদ্যোগে চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নয়ন হবে, হবে আইসিইউর সংখ্যা বৃদ্ধি। যার ফলে দেশের মানুষের ভোগান্তি কমবে। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সচেতনতার বিকল্প নেই। তাই আমাদের সবাইকে সোচ্চার হতে হবে স্বাস্থ্য সচেতনতায় প্রতি। সর্বোপরি এমন করুণ পরিস্থিতি থেকে দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে সরকারি ও বেসরকারিভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। আর এটাই এখন সময়ের দাবি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে