শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
এ কেমন বর্বরতা

গুলি করে ৩ জনকে হত্যা

নতুনধারা
  ১৫ জুন ২০২১, ০০:০০

কুষ্টিয়ায় প্রকাশ্য দিবালোকে এক নারী ও তার শিশুসন্তানসহ তিনজনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সৌমেন রায় নামের পুলিশের এক সহকারী উপপরিদর্শককে (এএসআই) আটক করেছে পুলিশ। তিনি বর্তমানে খুলনার ফুলতলীতে কর্মরত। স্ত্রী পরকীয়ায় আসক্ত, এ সন্দেহে এই হত্যাকান্ড ঘটে। এ কেমন বর্বরতা? স্ত্রী যদি অপরাধ করেই থাকে, তা হলে তাকে শাস্তি দেয়ার নানা উপায় রয়েছে। তা ছাড়া দেশে আইন রয়েছে। আইন অনুসারে অপরাধীর শাস্তি হবে। অথচ সৌমেন রায় পুলিশের একজন সহকারী উপপরিদর্শক হয়ে কী করে এমন নিষ্ঠুর হত্যার ঘটনা ঘটাতে পারে তা আমাদের বোধগম্য নয়। অবশ্য পুলিশ বর্তমানে নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। এই হত্যাকান্ড তারই ধারাবাহিকতা।

এটা সত্য, সামাজিক অবক্ষয় দিনে দিনে চরম আকার ধারণ করছে। হেন কোনো অপরাধ নেই- যা সমাজে সংঘটিত হচ্ছে না। স্ত্রী স্বামীকে, স্বামী স্ত্রীকে, মা-বাবা নিজ সন্তানকে, ভাই ভাইকে, বন্ধু বন্ধুকে অবলীলায় হত্যা করছে। স্ত্রী স্বামীর লাশ ছয় টুকরা করে রাস্তায় ফেলে দিচ্ছে। প্রেমের কারণে অর্থ সম্পত্তির লোভে সমাজে এসব অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। অন্যদিকে হতাশা, নিঃসঙ্গতা, বঞ্চনা ও অবিশ্বাস আর অপ্রাপ্তিতে সমাজে আত্মহননের ঘটনাও বেড়ে গেছে। বেড়ে গেছে মাদকাসক্তের সংখ্যা। মাদকের অর্থ জোগাড় করতে না পেরে ছেলে খুন করছে বাবা-মাকে, স্বামী খুন করছে স্ত্রীকে কিংবা পরিবারের অন্যান্য সদস্যকে। অন্যের সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্য কিংবা কাউকে ফাঁসিয়ে দেয়ার নিমিত্তে নিজের সন্তানকে হত্যা পর্যন্ত করছে। পারিবারিক বন্ধন স্নেহ, ভালোবাসা মায়া-মমতা, আত্মার টান সবই যেন আজ স্বার্থ আর লোভের কাছে তুচ্ছ। এর পাশাপাশি সমাজে ধর্ষণ, গণধর্ষণ ও নারী নির্যাতন অবমাননা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। যা সামাজিক অবক্ষয়ের চূড়ান্ত নজির।

সামাজিক মূল্যবোধ তথা ধৈর্য, উদারতা, কতর্ব্যনিষ্ঠা, ন্যায়পরায়ণতা, শৃঙ্খলা, শিষ্টাচার সৌজন্যবোধ, নিয়মানুবতির্তা, অধ্যবসায়, নান্দনিক সৃষ্টিশীলতা, দেশপ্রেম, কল্যাণবোধ, পারস্পরিক মমতাবোধ ইত্যাদি নৈতিক গুণাবলি লোপ পাওয়ার কারণেই সামাজিক অবক্ষয় দেখা দেয়। যা বতর্মান সমাজে প্রকট। মনে রাখতে হবে বিশৃঙ্খল সমাজে বসবাস করে উন্নত রুচি ও সংস্কৃতির অধিকারী হওয়া যায় না। আমরা চাই পরিকল্পিত ও বিন্যস্ত সমাজ। নীতিবোধ ও চারিত্রিক মূল্যবোধ সমাজ গঠনের প্রধান শক্তি- যা আমরা হারিয়ে ফেলেছি।

যারা সমাজকে, রাষ্ট্রকে পদে পদে কলুষিত করছে, সমাজকে ভারসাম্যহীন ও দূষিত করে তুলছে, সমাজের মানুষের নিরাপত্তা ও অধিকার ক্ষুণ্ন করছে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে, আদর্শ ও গণমুখী রাজনীতি দখল করে নিয়েছে দুর্বৃত্ত অপরাধী পরিবেষ্টিত রাজনীতি। ক্ষমতা ও পেশি শক্তির বলে রাজনীতিকরা হেন কোনো অপরাধ নেই যে তারা করছেন না। এর প্রভাব পড়ছে সমাজে। ফলে সামাজিক অপরাধ তীব্র হচ্ছে। সরকারের পরিকল্পিত দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ এবং সামাজিক আন্দোলন বেগবান হলেই এর থেকে মুক্তি মিলতে পারে, অন্যথায় নয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে