শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবাসী নারী শ্রমিক

সুরক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নিন
নতুনধারা
  ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

বাংলাদেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি অর্জনের পথে রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে। এ ক্ষেত্রে বলা দরকার, মধ্যপ্রাচ্যের বাংলাদেশি শ্রমিকরা বরাবরই দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর শীর্ষে থাকে। যাদের বড় একটি অংশ নারী। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে এমন বিষয় উঠে এসেছে যে, প্রবাসী নারী শ্রমিকদের সুরক্ষায় উদ্যোগ নেই। জানা যাচ্ছে, বিভিন্ন সময়ে নারীদের অনেকেই বাধ্য হন শারীরিক, মানসিক ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে দেশে ফিরতে। উন্নত জীবনের বদলে তাদের ফিরতে হয় শূন্য হাতে। আমলে নেওয়া দরকার যে, এই পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশে নারীকর্মীদের আপৎকালীন সেবা পেতে নেই সুনির্দিষ্ট কোনো পদ্ধতি ও প্রশিক্ষণ। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নেই পর্যাপ্ত উদ্যোগও। দেখা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিদেশে নির্যাতিত নারী শ্রমিকরা ওই দেশে আইনি আশ্রয় নেওয়ার বদলে দেশে ফিরে অভিযোগ জানায়। এতে তাদের বিচার পাওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে পড়ে।

অন্যদিকে, দেশে ফেরা এসব অভিবাসী নারী শ্রমিকের অনেককেই পড়তে হয় নতুন মানসিক চাপে। সমাজ এমনকি পরিবারের সদস্যদের কাছেও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির শিকার হতে হয় তাদের। কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বামীরা তাদের তালাক পর্যন্ত দেন আর অবিবাহিত নারীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সৃষ্টি হয় শঙ্কা ও জটিলতা। ফলে সার্বিকভাবে এই বিষয়গুলো কতটা ভয়ানক তা সংশ্লিষ্টদের আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, এর আগেও এমন বিষয় উঠে এসেছে যে, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কিংবা নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরে আসা নারীকর্মীর সংখ্যা কমছে। আমরা বলতে চাই, স্বচ্ছলতার আশায় বিদেশ গমন করে নির্যাতিত হয়ে ফিরে এলে তা কতটা ভয়ানক সেটা অনুধাবন করা অপরিহার্য। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, বিদেশে কর্মরত নারী শ্রমিকের সুরক্ষা সংক্রান্ত সামগ্রিক বিষয় নিয়ে উদ্যোগী হওয়া।

এমন বিষয়ও আলোচনায় আসছে যে, একজন পরিবারের অভাব-অনটন দূর করতে গৃহকর্মী হিসেবে গিয়েছিলেন দুবাই। দুই বছরের নিয়োগে সে দেশে গেলেও তিনবার তার মালিক বদল হয়েছে। আর প্রত্যেকবারই শিকার হয়েছেন শারীরিক ও চরম মানসিক নির্যাতনের। ২০১৮ সালে জটিল শারীরিক ও মানসিক অসুস্থার কারণে শূন্য হাতেই দেশে ফিরতে বাধ্য হন তিনি। ভয়ানক বিষয় হলো, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জরিপে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে দেশে ফেরা এমন ১১১ জনের মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশই এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। আর ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের জরিপ বলছে, ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে মধ্যেপ্রাচ্য থেকে ফিরে আসা ২৫ থেকে ৩০ জন নারীকর্মী বড় ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগছেন এবং তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ছিলেন গর্ভবতীও।

সংশ্লিষ্টদের এই বিষয়টি আমলে নেওয়া দরকার, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব রিক্রুট এজেন্সি (বায়রা) জানিয়েছে, বর্তমানে প্রায় ৫ লাখেরও বেশি নারী শ্রমিক বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন। প্রতিমাসে তারা প্রায় ৭৫০ থেকে ৮০০ কোটি টাকার মতো আয় করছেন। আর নারী শ্রমিকদের বড় একটা অংশ গৃহকর্মী হওয়ায় তারা উপার্জনের সিংহভাগ টাকাই দেশে পাঠাচ্ছেন। ফলে প্রবাসী নারী শ্রমিকদের সুরক্ষা বিষয়টিকে সামনে রেখে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়ন জরুরি বলেই আমরা মনে করি। আমলে নেওয়া দরকার, নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশ ফেরা নারী শ্রমিকরা জানিয়েছে, তাদের অভিবাসনের সুযোগ ও কাজের চাহিদা মধ্য প্রাচ্যে অনেক বেশি। বিভিন্ন অফিস, মার্কেট ও বাসাবাড়িতে গৃহকর্মী অথবা পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর পরিস্থিতি বদলে যায়। কেউ কেউ ভালো মালিকের অধীনে কাজ করলেও অনেকেই সে সুযোগ পায় না। দেখা যায়, অর্থের প্রলোভন অথবা চুরির অভিযোগে জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়ে বাধ্য করা হয় বিভিন্ন অনৈতিক কাজে।

সর্বোপরি, আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ, ফলে জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করার বিষয়টি জরুরি। এ ক্ষেত্রে, নারীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। একইসঙ্গে বিদেশে কর্মরত নারী শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে