শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভূমধ্যসাগরে ৩২ বাংলাদেশি উদ্ধার

কার্যকর পদক্ষেপ নিন
নতুনধারা
  ১৭ মে ২০২২, ০০:০০

উন্নত জীবনের আশায় অবৈধ পথে বিদেশ গমনের বিষয়টি বিভিন্ন সময়েই সামনে এসেছে। এক্ষেত্রে বলার অপেক্ষা রাখে না, অবৈধ পথে বিদেশ গমনে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, লিবিয়া থেকে অবৈধভাবে উত্তাল ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপে যাওয়ার পথে ৮১ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করেছে তিউনিশিয়া নৌবাহিনী। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে রয়েছে ৩২ বাংলাদেশি। নৌবাহিনী জানিয়েছে, তিউনিশিয়ার উত্তরপূর্বাঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত নৌকাটিতে তাদের সন্ধান মেলে। জানা গেছে, উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ৩৮ মিসরীয়, ৩২ বাংলাদেশি, ১০ জন সুদানের এবং একজন মরক্কোর নাগরিক। তাদের বয়স ২০ থেকে ৩৮। তিউনিশিয়ার সীমান্তবর্তী লিবিয়ার আবু কামাশ গ্রাম থেকে তারা রওনা হয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, ইউরোপে পাচারের জন্য দালালরা লিবিয়া, তিউনিশিয়াকে অন্যতম রুট হিসেবে বিবেচনা করে থাকে।

বলা দরকার, ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপে যাওয়ার পথে প্রায়ই নৌকা ডুবে শরণার্থী ও অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃতু্যর খবর পাওয়া যায়। উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ায় ভূমধ্যসাগরের উপকূল থেকে পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশিকে আটক করেছিল গত মাসেই। লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির পূর্ব উপকূল থেকে ইউরোপের উদ্দেশে পাড়ি দেওয়ার প্রস্তুতিকালে তাদের আটক করা হয়েছিল। যেটি ২০১৬ সালের পর এক দিনে উপকূল থেকে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশিদের আটকের ঘটনা বলেও জানা গিয়েছিল।

আমরা বলতে চাই, লিবিয়া থেকে অবৈধভাবে উত্তাল ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপে যাওয়ার পথে ৮১ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করেছে তিউনিশিয়া নৌবাহিনী আর উদ্ধারকৃতদের মধ্যে রয়েছে ৩২ বাংলাদেশি- সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশ সংশ্লিষ্টদের ঘটনাটি আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে উদ্যোগী হতে হবে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এটাও আমলে নেওয়া জরুরি, অবৈধপথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করছে যে দেশগুলোর মানুষ, সেসব দেশের শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ এমন তথ্যও জানা গিয়েছিল। সঙ্গত কারণেই সার্বিক পরিস্থিতি কতটা ভীতিপ্রদ বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। বিভিন্ন সময়ে এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছে যে, দালালদের খপ্পরে পড়ে নিশ্চিত বিপদ জেনেও ওয়ার্ক পারমিট ও ভিসায় ইউরোপের পথে পা বাড়াচ্ছেন অবৈধপথে বিদেশগামীরা। সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব তাদের অনেকেই। মৃতু্যর চ্যালেঞ্জ নিয়ে অনেকেই সাগরে ডুবেও মারা যাচ্ছেন, আর যারা ভাগ্যগুণে বেঁচে যান, তাদের ঠাঁই হয় জেলের অন্ধকার খুপরিতে। আশঙ্কাজনক বিষয় হলো, বিদেশে যাওয়ার জন্য এমন প্রাণহানি বা বন্দিদশা এখন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে- যা এড়ানো যাবে না।

এটাও বিবেচ্য বিষয় যে, অভাবের তাড়নায় কিংবা পরিবারে নানা ধরনের অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে, উন্নত জীবনের আশায় বাংলাদেশ থেকে নারী-পুরুষ ও শিশু বিভিন্ন দেশে পাচারের শিকার হচ্ছে এমন বিষয়ও এর আগে খবরে উঠে এসেছে। বিশেষ করে দালালদের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে একের পর এক মানুষ। এছাড়া সাগরপথে পাড়ি দেওয়া বা অবৈধ পথে নিয়ে যাওয়ার নামে মানব পাচারের ঘটনাও বারবার ঘটেছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক এ পরিস্থতি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।

প্রসঙ্গত, এর আগে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা জানিয়েছিল, তিন মাসে পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশিকে সাগর থেকে উদ্ধার করে দেশে পাঠানো হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) বলছে, ২০২১ সালে প্রায় ২ হাজার অভিবাসী ভূমধ্যসাগরে ডুবে গেছে বা নিখোঁজ হয়েছে। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে এই সংখ্যাটি ছিল এক হাজার ৪০১ জন।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, লিবিয়া থেকে অবৈধভাবে উত্তাল ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপে যাওয়ার পথে ৮১ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করেছে তিউনিশিয়া নৌবাহিনী আর উদ্ধারকৃতদের মধ্যে রয়েছে ৩২ বাংলাদেশি। ফলে এ ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে দালালদের খপ্পরে যেন সাধারণ মানুষ না পড়ে, সেটাও আমলে নিতে হবে। মনে রাখা দরকার, মানব পাচার একটি জঘন্য অপরাধ। এ ঘৃণ্য অপরাধে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে বিচারের মাধ্যমে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করার পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধিতেও উদ্যোগ নিতে হবে। অবৈধপথে বিদেশ গমনের ভয়াবহতা আমলে নিয়ে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে