সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঘোষিত নতুন মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার উলেস্নখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেই

অর্থনীতিতে তিনটি চ্যালেঞ্জের কথা বলা হচ্ছে, যেমন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের স্থায়িত্ব, ফেডারেল রিজার্ভের পলিসি ইন্টারেস্ট রেট বাড়ানোর আগ্রাসী কার্যক্রম এবং চীনের কোভিড পরিস্থিতি- এই তিনটি চ্যালেঞ্জ যত দ্রম্নত মোকাবিলা করা সম্ভব হবে, আমাদের অর্থনীতি তত দ্রম্নত বাউন্স করবে। তবে এ তিনটি পরিস্থিতি খারাপ হলেও আমাদের অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি- যা আছে তার চেয়ে খারাপ হবে না।
রেজাউল করিম খোকন
  ১৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে আমানতের সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সামগ্রিক বিবেচনায় এবারের মুদ্রানীতিকে সতর্কমূলক বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রতিকূলতার মধ্যে মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দিতে বাজারে অর্থের জোগান আরো কমাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর অংশ হিসেবে নীতি সুদহার আরো এক দফা বাড়িয়ে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) জন্য ঘোষিত নতুন মুদ্রানীতির জন্য 'সতর্ক ও সংকুলানমুখী' মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ছয় মাসের জন্য এমন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগদানের পর এটাই তার প্রথম মুদ্রানীতির ঘোষণা। এ পরিবর্তনের ফলে এক দিন মেয়াদি রেপোর সুদহার ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে ৬ শতাংশ হয়েছে। আর রিভার্স রেপো হার আগের ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংকের আমানতের ওপর বেঁধে দেওয়া সুদহার তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আমানতের সুদহার নিজেরাই নির্ধারণ করতে পারবে। এছাড়া ভোক্তাঋণের ক্ষেত্রে সুদহার ৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। বর্তমানে ব্যাংকের সব ধরনের ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ। ভোক্তাঋণের সুদহার বাড়ানোর ফলে ব্যাংকগুলো তা ১২ শতাংশ পর্যন্ত করতে পারবে। বিপরীত দিকে শিল্পঋণসহ অন্যান্য ঋণের ক্ষেত্রে সুদহারের বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, চাহিদাজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ প্রশমন, বিনিময় হারের চাপ নিয়ন্ত্রণ, সরকারের কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় অর্থের সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাতে ঋণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে মুদ্রানীতিতে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। ব্যাংক রেট আগের মতোই ৪ শতাংশে রাখা হয়েছে। তবে পরে আলাদাভাবে বিশেষ রেপো হার ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯ শতাংশ করার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গভর্নর এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বলেছেন, আমরা একটি চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছি। পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের এলসি খোলায় পণ্যের যে দাম ছিল তার চার ভাগের এক ভাগে এলসি খুলেছেন গ্রাহকরা। এটি ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার জন্য করা হয়েছে। বাকি তিন ভাগ অর্থও কোনো না কোনো জায়গা থেকে পরিশোধ করা হয়েছে। এসব বিষয় বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। এগুলো অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে, আরো কমে আসবে। আমাদের নানা উদ্যোগের ফলে আমদানি কমে এসেছে। আমদানির তুলনায় রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বেশি হয়েছে। এতে ডলারের ওপর যে চাপ পড়েছিল তাও কমে এসেছে। আমদানি এলসি খোলা কমানোর প্রভাব আসন্ন রমজানের প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে পড়বে না। ব্যাংকগুলোকে সে অনুযায়ী নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।সাম্প্রতিক সময়ে বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকসহ অন্য ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশ্বের যে কোনো ব্যাংক সমস্যায় পড়লে রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সহায়তা করে, বাংলাদেশ ব্যাংকও করেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি কখনো পড়ে যাবে না। করোনা মহামারি সামলে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সে সময়ে অন্যতম দেশ বাংলাদেশ, যারা পজিটিভ গ্রোথ করেছে।

অর্থনীতিতে তিনটি চ্যালেঞ্জের কথা বলা হচ্ছে, যেমন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের স্থায়িত্ব, ফেডারেল রিজার্ভের পলিসি ইন্টারেস্ট রেট বাড়ানোর আগ্রাসী কার্যক্রম এবং চীনের কোভিড পরিস্থিতি- এই তিনটি চ্যালেঞ্জ যত দ্রম্নত মোকাবিলা করা সম্ভব হবে, আমাদের অর্থনীতি তত দ্রম্নত বাউন্স করবে। তবে এ তিনটি পরিস্থিতি খারাপ হলেও আমাদের অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি- যা আছে তার চেয়ে খারাপ হবে না।

গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ, অর্জন হয়েছে ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ। আর বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ, হয়েছে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ। সব মিলিয়ে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ১ শতাংশ। মুদ্রানীতিতে ব্যাপক মুদ্রা (এম২) প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১০ শতাংশ, সে জায়গায় হয়েছে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। আর ২০২৩ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৩৭.৭ শতাংশ, যেখানে গত বছরের জুনে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে তা ধরা হয়েছিল ৩৬ শতাংশ। আর বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ১ শতাংশ, গত জুনেও একই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। সব মিলিয়ে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ, গত জুনে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে যা ধরা হয়েছিল ১৮ দশমিক ২ শতাংশ। মুদ্রানীতিতে ব্যাপক মুদ্রা (এম২) প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ, জুনের মুদ্রানীতিতে ধরা হয়েছিল ১২.১ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে সরকার মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে ধরে রেখেই মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করেছে। তবে সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। আশা করা যায়, নতুন মুদ্রানীতি সরকারের জিডিপি প্রবৃদ্ধির ওই লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে।

অনিয়ম-দুর্নীতি ও মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যাংকে আমানতের প্রবৃদ্ধি সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। ব্যাংকের কাছে ঋণ দেওয়ার মতো তহবিল কমে হয়েছে ৬ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর কাছে আছে মাত্র ৬৪৬ কোটি টাকা। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে (জানুয়ারি-জুন) বাজারে টাকার জোগান বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যার মাধ্যমে উৎপাদনশীল খাতে ঋণের জোগান বৃদ্ধি করা হবে। সরকারি ঋণও আগের চেয়ে বাড়বে। এ দিয়েই চলতি অর্থবছরে কাঙ্ক্ষিত সাড়ে ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর সরকারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সাড়ে ৬ শতাংশ। যদিও ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। আমানতের প্রবৃদ্ধি কমায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে টাকার সংকট মেটাবে। এতে ডলার-সংকট আরও বাড়বে। তবে এ মুদ্রানীতি দিয়ে অর্থনীতির সংকটের সমাধান হবে না। মূল্যস্ফীতি, ডলার ও টাকার সংকট। এসবই এখন অর্থনীতির প্রধান তিন সমস্যা। আগে বিদেশি মুদ্রার ওপর নির্ভর করে মুদ্রানীতি করা হতো। নানা ভুল নীতির কারণে এখন বিদেশি মুদ্রা দেশে আসা কমে গেছে। এখন টাকা ছাপিয়ে সরবরাহ করলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে- যা পুরো অর্থনীতিকে আরও চাপে ফেলবে। উচিত ছিল ঋণের সুদহারের সীমা পুরোপুরি তুলে দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করা। এবারের মুদ্রানীতির ভঙ্গি হলো 'সতর্কতামূলক সহায়ক'। মূল্যস্ফীতি কমাতে ভোক্তাঋণের সুদহার বাড়িয়ে চাহিদা কমানো ও অপ্রয়োজনীয় আমদানি কঠিন করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যাকে বলা হচ্ছে, সতর্কতামূলক। এ ক্ষেত্রে ভোক্তাঋণের সুদহার ৯ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২ শতাংশ করা হয়েছে, তবে শিল্প খাতে ঋণের সুদহার আগের মতো ৯ শতাংশ বহাল থাকছে। পুনঃ অর্থায়ন ও প্রাক্‌-অর্থায়ন তহবিলের মাধ্যমে উৎপাদনশীল খাতে ঋণের পর্যাপ্ত জোগান নিশ্চিত করা হবে, যাকে সহায়ক ভঙ্গি বলা হচ্ছে। ভোক্তাঋণের সুদহার ৯% থেকে বাড়িয়ে ১২% করা হয়েছে। শিল্প খাতে ঋণের সুদহার ৯% বহাল। মুদ্রা সরবরাহের লক্ষ্য বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৪%। মুদ্রানীতির লক্ষ্য অর্জন নির্ভর করছে তিনটি বিষয়ের ওপর। এর মধ্য রয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মেয়াদ ও তীব্রতা, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদহার বৃদ্ধি এবং চীনে করোনার নতুন প্রভাব ও তীব্রতার ওপর। যদি এসব পরিস্থিতির উন্নতি হয়, তাহলে দেশের অর্থনীতি আরও ভালো হবে। আর এ পরিস্থিতি বহাল থাকলে বা আরও খারাপ হলে দেশের অর্থনীতি আর খারাপ হওয়ার সুযোগ নেই।

এখন আলোচনায় বারবার ঘুরেফিরে আসছে ব্যাংক খাতের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়। আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিষ্ক্রিয়তার বিষয়টিও। আস্থার সংকটে ব্যাংকের আমানত কমে যাওয়া ও ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোকে বিশেষ সহায়তার বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নতুন মুদ্রানীতিতে আশাব্যঞ্জক তেমন কিছু নেই। বরং কিছু ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ আছে। অর্থবছরের প্রথমার্ধে অর্থাৎ গত জুন মাসে ঘোষিত মুদ্রানীতির চেয়ে তুলনামূলকভাবে এটা বাস্তবতার অনেক কাছাকাছি হয়েছে। এর আগের বিদায়ী গভর্নর ফজলে কবির যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছেন, অর্থবছরের মাঝামাঝি এসে সেই মুদ্রানীতির একটি সংশোধিত ভার্সন দেওয়া হয়েছে। তার মানে এই নয় যে, এখানে যে লক্ষ্যগুলো দেওয়া হয়েছে তার সবই অর্জিত হবে। তবে যেসব লক্ষ্য এবারের মুদ্রানীতিতে দেওয়া হয়েছে তা আগের তুলনায় বাস্তবতার আরেকটু কাছের। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংক সুদহারে ক্যাপের বিষয়ে তার অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছে। যদিও গত তিন মাস ধরে একটি অঘোষিত নীতি ছিল, কনজু্যমার ঋণে ৯ শতাংশের উপরে ১২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দেওয়া যেতে পারে। এটা একটি ইতিবাচক দিক। ডিপোজিট রেটের উপরে ফ্লোর উঠিয়ে দেওয়াও ইতিবাচক দিক। এতদিন ব্যাংকাররা ফিক্সড ডিপোজিটে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছিল। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংকগুলোর ফিক্সড ডিপোজিটে আগ্রহ বাড়বে। যা ডিপোজিট গ্রোথকে বাড়াতে সহায়তা করবে। ফলে ব্যাংক খাতে যে তারল্য সংকট রয়েছে তা পুরোপুরি কেটে না গেলেও অনেকটা সহায়ক হবে। এতে ব্যাংকারদের খরচ হয়তো কিছুটা বাড়বে। কিন্তু ব্যাংকাররা এর থেকে অনেক বেশি রেট নিচ্ছেন। কলমানি রেট, ইন্টারব্যাংক রেপো রেট ৭ শতাংশের উপরে রয়েছে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্ত সার্বিক অর্থনীতিতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। সার্বিকভাবে বলা চলে, মুদ্রানীতির মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। সুতরাং, নতুন মুদ্রানীতি বর্তমান মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে বলে মনে হয় না। কারণ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে উলেস্নখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেই। একটাই আছে, ভোক্তা ঋণে (ব্যক্তিগত ঋণ, গাড়ি ঋণ, আবাসন ঋণ, শিক্ষা ঋণ প্রভৃতি) সুদহার ৩ শতাংশ বাড়িয়ে ১২ শতাংশ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে ভোক্তা ঋণ খুব বেশি নয়। কাজেই এটি মূল্যস্ফীতির ওপরে খুব বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে না। কিছু পদক্ষেপ আছে, যা মূল্যস্ফীতিকে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। যেমন- সরকারকে বাংলাদেশ ব্যাংক এখন যে সরাসরি ঋণ দিচ্ছে, এর ফলে মানি ক্রিয়েশন হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুনঃঅর্থায়ন সুবিধার কথা বলেছে যে, মূল্যস্ফীতি যেহেতু সাপস্নাই সাইডের, তাই রিফাইন্যান্স অর্থাৎ পুনঃঅর্থায়নের মাধ্যমে সরবরাহকে বাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু যেখানে বিদেশি মুদ্রার অভাবে এলসি খোলা যাচ্ছে না। জ্বালানি গ্যাসের অভাবে কারখানা চালানো যাচ্ছে না। সেখানে উৎপাদনশীলতা আটকে গেলে সেটা ক্রেডিট দিয়ে মূল্যস্ফীতির চাপ আরও বাড়ানো হবে।

রেজাউল করিম খোকন : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার ও কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে