সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

একই পরিবারের ৫ জন নিহত সড়ক নিরাপদ করতে হবে

নতুনধারা
  ১৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতু্যর বিভীষিকা থেকে কিছুতেই যেন রক্ষা নেই এ দেশের মানুষের। কিন্তু ভয়াবহ এ দুর্ঘটনাগুলো কেন হচ্ছে কারা এর জন্য দায়ী তা শনাক্ত করে দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মনোযোগ ও তৎপরতা চোখে পড়ছে না। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণেই এর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।

এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, শরীয়তপুরের জাজিরা এলাকায় ট্রাকের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের সংঘর্ষে একই পরিবারের ৫ জন ও চালক নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার নওডোবা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ভোরে ঢাকাগামী একটি এলপি গ্যাসবোঝাই ট্রাকের পেছনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা দেয় একটি অ্যাম্বুলেন্স। এতে অ্যাম্বুলেন্সে থাকা ৬ জন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ ছাড়াও একই দিনে রাজধানীর বনশ্রীতে ফরাজী হাসপাতালের সামনে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন।

উলেস্নখ্য, বিদায়ী ২০২২ সালে সড়ক, রেল, নৌপথে সর্বমোট ৭ হাজার ৬১৭টি সম্মিলিত যানবাহন দুর্ঘটনায় ১০ হাজার ৮৫৮ জন নিহত এবং ১২ হাজার ৮৭৫ জন আহত হয়েছে। এসবের মধ্যে ৬ হাজার ৭৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ হাজার ৯৫১ জন নিহত ও ১২ হাজার ৩৫৬ জন আহত হয়েছে। একই সময় রেলপথে ৬০৬টি দুর্ঘটনায় ৫৫০ জন নিহত ও ২০১ জন আহত হয়েছে। নৌপথে ২৬২টি দুর্ঘটনায় ৩৫৭ জন নিহত ও ৩১৮ জন আহত হওয়ার পাশাপাশি ৭৪৩ জন নিখোঁজ হয়েছে। ২০২১ সালের চেয়ে ২০২২ সালে সড়কে দুর্ঘটনা ১৯.৮৯ শতাংশ ও প্রাণহানি ২৭.৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত ৮ বছরের মধ্যে বিদায়ী ২০২২ সালে সড়কে সর্বোচ্চ দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে।

সড়ক দুর্ঘটনার কারণ বেপরোয়া গতি, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, রাস্তাঘাটের নির্মাণ ত্রম্নটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধে চলাচল, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চালকের বেপরোয়া মনোভাব, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ, ট্রাফিক আইন অমান্য করা, ছোট যানবাহনের ব্যাপক বৃদ্ধি, সড়কে চাঁদাবাজি, রাস্তার পাশে হাটবাজার, ত্রম্নটিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় নামানো, মালিকের অতিরিক্ত মুনাফার মানসিকতা, চালকের নিয়োগ ও কর্মঘণ্টা সুনির্দিষ্ট না থাকা, দেশব্যাপী নিরাপদ ও আধুনিক গণপরিবহণ ব্যবস্থার পরিবর্তে টুকটুকি ইজিবাইক-ব্যাটারিচালিত রিকশা, মোটর সাইকেল, সিএনজি অটোরিকশানির্ভর গণপরিবহণ ব্যবস্থার দিকে ধাবিত হওয়া। অন্য এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, গত ১৫ বছরে সড়ক পথে ৫৫ হাজার মানুষের মৃতু্য হয়েছে।

মনে রাখতে হবে, বড় বড় দুর্ঘটনা থেকে যদি আমরা শিক্ষা নিতে না পারি তবে ভবিষ্যতেও এর পুনরাবৃত্তি ঘটবে। দুর্ঘটনায় মৃতু্যর হার কমাতে হলে দোষীদের তাৎক্ষণিক শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি জনগণকেও নৌ, রেল ও সড়ক পথে ভ্রমণ এবং রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে আরও সচেতন হতে হবে। পরিকল্পিত ও সফল উদ্যোগই কেবল পারে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা রোধ করতে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে