সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা

উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে
নতুনধারা
  ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০১৯ সালের পর বিশ্বজুড়ে তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়ে সাড়ে ৩৪ কোটি ছাড়িয়েছে। কিছু দিন আগে জাতিসংঘের খাদ্য সহায়তাসংক্রান্ত শাখা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডবিস্নউএফপি) এ তথ্য জানিয়েছে। করোনা মহামারি শুরুর আগে তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা ছিল সাড়ে ১৩ কোটি। এরপর এ সংখ্যা বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও যুদ্ধ-সংঘর্ষের ফলে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। পরিবেশগত সমস্যার প্রভাবে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা খাদ্যঘাটতি আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। এ ছাড়া জলবায়ু সংকটের ফলে আরও সংঘাত ও ব্যাপক বাস্তুচু্যতির ঘটনাও ঘটতে পারে। বাস্তবতা হচ্ছে- বিশ্বের এই চাপ বহনের সামর্থ্য নেই। জলবায়ু পরিবর্তন ও যুদ্ধ-সংঘর্ষের ফলে বিশ্বজুড়ে ১০ গুণের বেশি মানুষ বাস্তুচু্যত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও যুদ্ধ-সংঘর্ষের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক রয়েছে। করোনা, জলবায়ু পরিবর্তন ও ইউক্রেন যুদ্ধের সামষ্টিক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে বিশ্ব। ইউক্রেন সংকটের ব্যাপক প্রভাব মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় পড়তে দেখা গেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোও মুক্ত নয় এর প্রভাব থেকে। অনেক দেশেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও। ফলে বিশ্বজুড়ে অভাবী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে দুর্যোগকালে খাদ্য নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এটা সত্য, বর্তমানে চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় থাকা মানুষের বেশির ভাগই নিম্ন এবং মধ্য আয়ের দেশগুলোর বাসিন্দা। এসব দেশে ভবিষ্যতে আরও সংকট বাড়বে।

বিশ্বজুড়ে এই বিপর্যয় সামাল দিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এ ছাড়া লাখো শিশুর মৃতু্যর আশঙ্কা জানিয়েছে জাতিসংঘ। বিদ্যমান বাস্তবতায় ক্রমবর্ধমান অপুষ্টির পরিণতি হবে দীর্ঘমেয়াদি। এটি একটি প্রজন্মকে বিপদের মুখে ঠেলে দেবে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের দেশের অবস্থা কী দাঁড়াবে তা ভাবনার বিষয়। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, আমাদের খাদ্য ঘাটতির কোনো সুযোগ নেই, সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে দেশে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। গ্যাস ও বিদু্যতের দাম বাড়ার কারণে নিত্যপণ্যের দাম আরও বাড়বে। চাল ও গম আমদানি করা হচ্ছে। আটা-ময়দার দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। সংকটে দেশে যেন খাদ্য ঘাটতি না হয় সে জন্য সরকার প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়েছে। এ ছাড়া করোনাকালে ৭ কোটি মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

মনে রাখা দরকার, কৃষিনির্ভর গ্রামীণ জনপদের মানুষের প্রধান আয়ের উৎস কৃষি। এরপরই রয়েছে প্রবাসী আয়। যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় অর্ধেক মানুষ। কিন্তু করোনায় ও যুদ্ধে চরম বিপাকে পড়েছেন গ্রামাঞ্চলের কৃষক থেকে শুরু করে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। কৃষিপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। সার সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্থায়ীভাবে অসংখ্য মানুষ গ্রামে আসায় নানামুখী নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আয়ের উৎস। ফলে সামগ্রিকভাবে বাড়ছে সংকট। এমন অবস্থায় দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন ব্যাপার। তবে সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবসম্মত সুষ্ঠু উদ্যোগই কেবল পারে দেশের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে