সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

সীমান্তের মিয়ানমার অংশে গোলাগুলি সতর্ক থাকা জরুরি

নতুনধারা
  ২১ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

সীমান্তে যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে তা সন্দেহাতীতভাবেই উদ্বেগজনক। যা আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণও অপরিহার্য। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তমব্রম্ন সীমান্ত এলাকার মিয়ানমার অংশে ফের গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে। এর আগে রোহিঙ্গা শিবিরে অগ্নিসংযোগ ঘটে। এতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন স্থানীয়রা। প্রকাশিত খবরের তথ্য মতে, নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে শূন্যরেখার শিবির থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বিভিন্ন গ্রামের দিকে ছুটছে।

এ প্রসঙ্গে এটাও উলেস্নখ্য, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মিয়ানমারের দু'টি সশস্ত্র গ্রম্নপ আরসা ও আরএসও বুধবার ঘুমধুমের কোনারপাড়ার শূন্যরেখায় সংঘর্ষে জড়ায়। এতে একজন নিহতও হন। এরপর স্থানীয় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শত শত বসতঘর ভস্মীভূত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইতিমধ্যে আশ্রয় নিয়েছেন।

আমরা মনে করি, সম্প্রতি যে ঘটনাগুলো ঘটছে তা আমলে নিয়ে দেশের সংশ্লিষ্টদের তৎপর থাকতে হবে এবং যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টির শঙ্কা থাকলে তা বিবেচনায় রেখে সতর্ক থাকতে হবে। বলা দরকার, এর আগে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে গোলা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছিল। যে ঘটনায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে চরম উত্তেজনা বিরাজ করে। তার আগে মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। আমরা বলতে চাই, আবার যখন সীমান্তের মিয়ানমার অংশে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে এবং আতঙ্ক উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে তখন এটি আমলে নিতে হবে। এর আগে ঘুমধুম ইউনিয়নের কোনারপাড়া এলাকার সীমান্তে মিয়ানমার থেকে ছোড়া একটি মর্টারশেল বিস্ফোরণে রোহিঙ্গা যুবক নিহত ও পাঁচ জন আহত হয়েছিল। যে ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছিল বাংলাদেশ। এ ছাড়া এক মাসের মধ্যে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে চার দফা তলব করে প্রতিবাদলিপিও হস্তান্তর করেছিল তখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এবারে যখন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তমব্রম্ন সীমান্ত এলাকার মিয়ানমার অংশে ফের গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে আর এতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন স্থানীয়রা- তখন এই ঘটনার দিকে নজর দিতে হবে। তথ্য মতে, বুধবার রাত ৯টা পর্যন্ত থেমে থেমে গোলাগুলির পর রোহিঙ্গা বাসিন্দারা অন্যত্র চলে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। এ ছাড়া এটাও আলোচনায় এসেছে, শূন্যরেখায় আন্তর্জাতিক রীতিমতে বিজিবিসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ করার এখতিয়ার নেই। যতটুকু জানা গেছে, বুধবার রাতে দেওয়া আগুনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পটির দুই-তৃতীয়াংশ বসতঘর পুড়ে গেছে। এ ছাড়া কোনারপাড়া আশ্রয়শিবির ছেড়ে কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশের দিকে আশ্রয় নিয়েছে। আর কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা মিয়ানমারের ভেতর চলে গেছে। যারা বাংলাদেশের দিকে এসেছে, তাদের অধিকাংশ নারী, বৃদ্ধা ও শিশু। তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানা যাচ্ছে।

আমরা উলেস্নখ করতে চাই, তমব্রম্ন এলাকার বাসিন্দা ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক জানিয়েছেন, গত বছর মধ্য আগস্ট থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সংঘর্ষের ঘটনায় স্থানীয়রা আতঙ্কিত ছিল। এর জেরে মিয়ানমারের ছোড়া মর্টার শেল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পড়ায় সীমান্তের অনেকেই বসতবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছিল। এখন সীমান্তের শূন্যরেখায় মিয়ানমারের সশস্ত্র দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলি এবং শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন লাগানোর ঘটনায় নতুন করে উদ্বেগে রয়েছেন স্থানীয়রা। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। আর এই সংকটের সমাধান নিহিত রয়েছে মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের ওপর। কিন্তু এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা ইসু্যর কোনো গ্রহণযোগ্য বা দৃশ্যত সমাধান হয়নি। আবার মাঝেমধ্যেই সীমান্তে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে। এর আগে মিয়ানমার থেকে মর্টার শেল বা গোলা এসে পড়েছিল বাংলাদেশের ভূখন্ডে। সঙ্গত কারণেই সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। একইসঙ্গে প্রত্যেকটি ঘটনা আমলে নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে