সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

এলপিজি গ্যাসের দাম বৃদ্ধি ভোক্তার সামর্থ্য বিবেচনা করতে হবে

নতুনধারা
  ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়ে নানা ক্ষেত্রেই। তৈরি পোশাক, শিল্পোৎপাদন থেকে শুরু করে জনজীবনের প্রায় সর্বত্র। এর আগে পত্রপত্রিকায় এমন আলোচনা বারবার উঠে এসেছে, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি 'মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা' হয়ে উঠতে পারে। কেননা এর আগে জানা গিয়েছিল, শিল্পকারখানা বন্ধ রাখতে হচ্ছে গ্যাসের অভাবে, অনেক বাসাবাড়িতে গ্যাসের অভাবে বিকল্প ব্যবস্থায় রান্নার কাজ চলছে, অন্যদিকে পূর্ব ইউরোপীয় দুই দেশের যুদ্ধের প্রভাবে বাংলাদেশের বাজারে খাদ্যশস্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। আর সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল- দেশে ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম একলাফে ২৬৬ টাকা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

তথ্য মতে, চলতি ফেব্রম্নয়ারি মাসের জন্য প্রতি ১২ কেজির সিলিন্ডারের দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪৯৮ টাকা, যা জানুয়ারি মাসে ছিল ১ হাজার ২৩২ টাকা। বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বিইআরসির পক্ষ থেকে নতুন দর জানানো হয়। সংস্থাটি প্রতি মাসেই এলপিজির দাম নির্ধারণ করে। যদিও এমনটিও আলোচনায় এসেছে, তা সব জায়গায় কার্যকর হতে দেখা যায় না। উলেস্নখ্য, এর আগে জানুয়ারি মাসের ক্ষেত্রে দর ১২ কেজির সিলিন্ডারে ৬৫ টাকা কমানো হয়েছিল। এটাও লক্ষণীয়, ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে এলপিজির দাম নির্ধারণ করে আসছে বিইআরসি। এলপিজি তৈরির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। আর প্রতি মাসে এলপিজির এ দুই উপাদানের মূল্য প্রকাশ করে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান আরামকো। এটি সৌদি কার্গো মূল্য (সিপি) নামে পরিচিত। সৌদি সিপিকে ভিত্তিমূল্য ধরে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করে বিইআরসি।

বিইআরসি জানিয়েছে, বেসরকারি এলপিজির মূল্য সংযোজন করসহ (মূসক/ভ্যাটসহ) দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি প্রায় ১২৫ টাকা, যা এত দিন প্রায় ১০৩ টাকা ছিল। গাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজির (অটো গ্যাস) নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি লিটার প্রায় ৭০ টাকা, যা এত দিন ৫৭ টাকার কিছু বেশি ছিল। তবে সরকারি কোম্পানির সরবরাহ করা এলপিজির দাম বাড়ানো হয়নি বলে জানা যাচ্ছে। আমরা বলতে চাই, যখন দেশে ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম এক লাফে ২৬৬ টাকা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। তখন এর প্রভাব জনজীবনে কতটা পড়তে পারে তা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। একদিকে নানা ধরনের দ্রব্যমূল্যর দাম বাড়ছে, অন্যদিকে এই খরচ জনজীবনের ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে, সেটিকে এড়ানো যাবে না।

এটা আমলে নেওয়া জরুরি, রাজধানীতে যেসব ভবনে সরকারি কোম্পানি তিতাসের সরবরাহ করা প্রাকৃতিক গ্যাস লাইনের সংযোগ নেই, সেসব ভবনের বাসিন্দারা এলপিজি ব্যবহার করেন। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে বিভিন্ন শহর ও গ্রামে বিপুলসংখ্যক মানুষ এলপিজির ওপর নির্ভরশীল। ফলে এই দাম বৃদ্ধির প্রভাব কতটা পড়বে- এটা আমলে নিতে হবে। বিপুল সংখ্যক মানুষের আয় ও ব্যয়ের বিষয়টিকে বিবেচনা করতে হবে। বলা দরকার, গত ১৮ জানুয়ারি প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম ৮২ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। যদিও তখন বাসাবাড়িতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়নি। কিন্তু যারা সরকারি গ্যাস পান না, তাদের বাড়তি খরচ করতে হয়। ফলে এই দাম বৃদ্ধি বিপুল সংখ্যক মানুষের ওপর প্রভাব ফেলবে। যেটি সংশ্লিষ্টদের এড়ানোর সুযোগ নেই। এ ছাড়া এমন অভিযোগ আছে, নির্ধারিত দামে ক্রেতারা এলপিজি গ্যাস কিনতে পারে না। দোকানদারকে নির্ধারিত দামের বেশি দিতে হয়। এটিকে আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, একদিকে দাম বৃদ্ধিতে জনসাধারণের জীবনে প্রভাব পড়ে, আবার নির্ধারিত দামেও কিনতে পারবে না এটা দুঃখজনক। এ ছাড়া ফেব্রম্নয়ারি মাসের জন্য দেশে ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রালিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম এক লাফে ২৬৬ টাকা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন- এতে জনসাধারণ ব্যয় সংক্রান্ত সার্বিক বিষয় আমলে নিতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে জীবনযাপনের সামগ্রিক ব্যয় এবং আয়ের বিষয়টিকে আমলে নিয়ে সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে