সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষার মান উন্নয়নে করণীয়

আসলে আমাদের প্রয়োজন কর্মমুখী শিক্ষা। একাডেমিক শিক্ষার সঙ্গে কর্মের কোনো মিল নেই। শিক্ষায় যা আছে কর্মে সেটা প্রয়োগ করার সুযোগ নেই।
রেজাউল করিম
  ০৩ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ করছে সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নানা সময়ে নানাভাবে পদ্ধতি পরিবর্তন করেও কাটছে না সমালোচনা। ক্লাস পদ্ধতি, পাঠ্য পুস্তক পরিবর্তন, পাঠ্যপুস্তকে অসঙ্গতি, প্রশ্নপত্র ফাঁস, ফলাফলে ত্রম্নটি এমন অভিযোগ লেগেই আছে। শুরুটা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা দিয়েই শুরু করা যাক। ২০০৮ সালে শেষবারের মতো পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা হয়েছিল। ২০০৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা শুরু করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। করোনার প্রভাবে বিনা নোটিশে উঠে যায় এ পরীক্ষাটি। ২০২২ সালে পূর্বের মতো নিজ বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার পর মোট শিক্ষার্থীর ২০ শতাংশ প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করানো হয়। গত ২৮ ফেব্রম্নয়ারি প্রাথমিক বৃত্তি ফলাফল প্রকাশ হয়। সেখানে বৃত্তি পায় ৮২ হাজার ৩৮৩ শিক্ষার্থী। কয়েক ঘণ্টা যেতে না যেতেই পরীক্ষার ফলাফল স্থগিত করা হয়। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেই ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়ার সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। 'কারিগরি ত্রম্নটির' কারণ দেখিয়ে স্থগিত করা হয় প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল। এতে কোমলমতি শিশুরা মানসিকভাবে হোঁচট খায়। অভিভাবকরাও ভেঙে পড়েন। পরদিন রাত সাড়ে ১০টায় পুনরায় ফল প্রকাশ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। বৃত্তির সংশোধনী ফলাফলেও পরীক্ষায় অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর নাম এসেছে ট্যালেন্টপুল বৃত্তিতে। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে, হবিগঞ্জ শহরের টাউন মডেল সরকারি বালক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বৃত্তি পরীক্ষার্থী ইসমাইল হোসেনের রোল নম্বর ১০৭২। তবে সে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি। কিন্তু বৃত্তি পরীক্ষার সংশোধনী ফলাফল বিবরণীতেও দেখা যায় ইসমাইল ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। এছাড়া হবিগঞ্জ শহরের টাউন মডেল বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা জিনিয়া আক্তারের মেয়ে খায়রুন জান্নাত বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়। তার রোল নম্বর ছিল ৭২। ফলাফলে তার নাম এলেও রোল নম্বর প্রদর্শন করা হয় ৭৩। ৭৩ রোল নম্বরের ছাত্রী হলো লোপা রানী দাশ। এ ধরনের নাম ও রোল নম্বর নিয়েও বিপাকে পড়েছেন অভিভাবকরা। শিশুদের নিয়ে বড়দের দায়িত্বহীনতা সমালোচনায় পড়ে। দায়িত্বহীনতা, সিদ্ধান্তহীনতা, এমন কি কারিগরি ত্রম্নটি সবই শিক্ষা ক্ষেত্রের ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা প্রকাশ পায়। এদিকে, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে ছিল গ্রেডিং পদ্ধতি। বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণির ফলাফল কোন পদ্ধতিতে হবে এর স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। একইভাবে ২০১০ সালে দেশে প্রথমবারের মতো সাধারণ স্কুল ও মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের জন্য জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ফলাফলও গ্রেডিং পদ্ধতিতে। করোনার সময় থেকে প্রাথমিকের মতো বন্ধ হয় জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা। করোনা কাটলেও শুরু হয়নি সেই জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা। আলাদা করে বৃত্তি পরীক্ষা নিতেও দেখা যায়নি। বরং অনেকটা নিশ্চিত হওয়া গেছে জেএসসি ও জেডিসি উঠে যাচ্ছে। তাহলে গত বারো বছরের পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষা নেওয়া কি ভুল পদ্ধতি ছিল? এমন সমালোচনা করছেন সচেতন ব্যক্তিরা। শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আরও গভীরভাবে ভাবতে হবে। শিক্ষা বা পরীক্ষা পদ্ধতি ঘনঘন পরিবর্তনে বিপাকে পড়তে হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদেরও। দেশে ১৯৯১ সালে বুয়েটে প্রথমবারের মতো গ্রেডিং পদ্ধতি চালু করা হলেও ২০০১ সালে এসএসসি এবং ২০০৩ সালে এইচএসসিতে চালু করা হয়। গ্রেডিং পদ্ধতিতে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে মোট নম্বরকে মূল্যায়ন করা হয় না। ৮০ থেকে ১০০ যেখানে জিপিএ-৫ ধরা হয় সেখানে ৮০ নম্বর ও ১০০ নম্বর প্রাপ্তির মধ্যে মেধার কোনো পার্থক্য দেখানো হয় না। ৮০ এবং ১০০ প্রাপ্ত উভয় শিক্ষার্থীকে একই মানে মূল্যায়ন করা হয়। আসা যাক ভর্তি পদ্ধতিতে। ভর্তিতে প্রথম হ-য-ব-র-ল। করোনায় সময় থেকে লটারির ভিত্তিতে সরকারি স্কুলগুলোতে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করানো শুরু হয়। করোনার প্রভাব কাটলেও পরিবর্তন হয়নি ভর্তি পদ্ধতি। এতে অনেক মেধাবীদের জায়গা হচ্ছে না ভালো স্কুলগুলোতে। মেধাহীনরা মেধাবীদের আসনে বসে জায়গা দখল করছে। অন্যদিকে, মেধাবীদের অনেকে সঠিক পরিচর্যার অভাবে ঝরে পরছে। লটারিতে একই শিক্ষার্থীর নাম একাধিকবার তালিকায় উঠার ঘটনা অহরহ দেখা যাচ্ছে। একই সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক (কলেজে) অনলাইনে ভর্তি হওয়াটা বিশেষ রকমে বিড়ম্বনা। পছন্দের কলেজ ভর্তি হওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার। এটা আরেক ধরণের লটারি। কলেজ শাখায় ভর্তির ক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হলে মেধাবীরা পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারতেন। লটারির যুগে কাঙ্ক্ষিত বিষয়ে অনার্স পড়াটাও ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিতে হচ্ছে। ভর্তিতে লটারি পদ্ধতি যদি সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য হয় সেক্ষেত্রে বিসিএস পরীক্ষা কেন লটারিতে নয়। মেডিকেল বা বুয়েটে কেন লটারি নয়? চাকরিও তো লটারিতে দেওয়া যেত। অথবা একাডেমিক পরীক্ষার ফলাফলের মূল্যায়নের মাধ্যমে চাকরি দেওয়া যেত। লটারি বা অনলাইনের মাধ্যমে সঠিকভাবে মেধা যাচাই করা সম্ভব নয় বলেই বিসিএস বা চাকরিতে পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা যাচাই করা হয়। ১৯৯২ সালে দেশে এসএসসিতে প্রথম নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন সংযোগ করা হয়। প্রথম পর্যায়ে ৫০০ নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন নির্ধারণ করা হয়। পরের বছর ২০০০ নৈর্ব্যক্তিক অন্তর্ভুক্ত করে বিভিন্ন বই বের করে বেসরকারি প্রকাশনী। প্রশ্ন মিলেও যেত ২০০০ থেকে। এরপর থেকে সংখ্যার পরিমাণ অনির্দিষ্ট হয়ে যায়। সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে। চলতি শিক্ষাবর্ষে কোনো কোনো শ্রেণিতে দেখাও যাচ্ছে নৈর্ব্যক্তিকের পরিবর্তে বিকল্প উত্তর ব্যতীত ছোট প্রশ্ন সংযুক্ত করা হচ্ছে। এদিকে, আলোচনায় এসেছে এ বছর থেকে প্রাথমিকে পরীক্ষা থাকছে না। এদিকে, পরীক্ষার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে শ্রেণিভিত্তিক মূল্যায়নের ওপর জোর দিতে চলতি বছর থেকে মাধ্যমিক পর্যায়েরও ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হয়েছে। এই শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে পরীক্ষা নেওয়া যাবে না বলে জানিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর মাউশি। ১৩ মার্চ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে পরিচালক (মাধ্যমিক) প্রফেসর বেলাল হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, চলতি বছর চালু হওয়া ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে কোনো ধরনের মডেল টেস্ট বা পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। পরীক্ষা না হলে শিক্ষার্থী বই হাতে কতটা সময় পড়ার টেবিলে থাকবে এ নিয়ে এখন অভিভাবকদের মাঝে চলছে সমালোচনা। অভিভাবকদের ধারণা পরীক্ষার ভাবনায় শিশুরা অধ্যায়ন করে। পরীক্ষা না থাকলে শিশুরা বই থেকে দূরে সরে যাবে। শিক্ষকদের হাতে পরীক্ষা ব্যতীত মূল্যায়নের সুযোগ এলে স্বজনপ্রীতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে বলে আগেই ধারণা করছেন অভিভাবকরা। সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি শিক্ষায় আরেকটি জটিলতা সৃষ্টি করেছে। ২০০৭ সালের জুনে এ পদ্ধতি বাস্তবায়নে সরকারি আদেশ জারি হয়। ২০০৮ সাল থেকে পদ্ধতিটি নবম শ্রেণিতে চালু হয়। ২০১০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় প্রথম প্রবর্তন ঘটে। একযুগ আগে সনাতনী পদ্ধতির পরিবর্তে সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হলেও অদ্যাবধি তা আয়ত্ত করতে পেরেছেন মাত্র ৫৮ শতাংশ শিক্ষক। তারা এ পদ্ধতিতে প্রশ্ন প্রণয়ন করতে পারেন। বাকি ৪১ দশমিক ৭৩ শতাংশ শিক্ষক সৃজনশীল বিষয়ের প্রশ্ন তৈরি করতে পারেন না। এদের মধ্যে ১৩ দশমিক ১২ শতাংশের অবস্থা খুবই নাজুক। এ ধরনের শিক্ষকরা নতুন পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র তৈরি করতে পারেন না। যেসব শিক্ষক প্রশ্নপত্র তৈরি করতে পারেন না তাদের দিয়ে কীভাবে শিক্ষার উন্নয়ন ঘটবে? এছাড়া অনুচ্ছেদের সঙ্গে প্রশ্নের মিল না থাকায় শিক্ষার্থীরাও পড়ছে বিপাকে। সেক্ষেত্রে সৃজনশীলের পরিবর্তে পাঠভিত্তিক শিখন ফলের ওপর প্রশ্নপত্র তৈরি করার পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের। আগের তুলনায় বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেশি বন্ধ থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এসএসসি পরীক্ষার সময়, রমজান, ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে দফায় দফায় বিদ্যালয় বন্ধ থাকে। এতে সিলেবাস শেষ করা নিয়ে শঙ্কায় থাকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে শুক্রবারের পাশাপাশি শনিবার অর্থাৎ সপ্তাহে দুদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষায় আরও ক্ষতি হচ্ছে। ২০২০-২১ সাল ছিল করোনাকাল। এ সময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়। এতে তেমন কোনো উপকার ভোগ করতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। জুমের মাধ্যমে ক্লাস নিলে শিক্ষার্থীরা উপকার পেত। একটি ভিডিও আপলোড করলেই ক্লাস হয় না। ওই সময়ে প্রতিটি বিদ্যালয়ে ওয়েব সাইট বাধ্যতামূলক করে সেখানে ক্লাসগুলো আপলোড করলেও হয়তো এখনো ক্লাসগুলো পাওয়া যেত। শিক্ষা নিয়ে অধিকাংশ সিদ্ধান্তই হয় হটকারী। এদিকে পাবলিক পরীক্ষার সময় প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। এতে লাভের চেয়ে লোকসানই বেশি হয়। ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেওয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা এগুলো প্রশ্নপত্র ফাঁসরোধে ব্যর্থতা ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করার মতো। প্রশ্নপত্র কে তৈরি করে। কোথায় প্রিন্ট হয়। বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিলেই প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করা সম্ভব। কোথা থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় সেটা না ভেবে কোন মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে পড়ে এটা নিয়ে ভাবনাটা অর্থহীন। সম্প্রতি বই বিতরণে হচ্ছে বড় ধরনের হ-য-ব-র-ল। মার্চ পেরুলেও অনেকে হাতে পায়নি পাঠ্য বই। দেশে ১ জানুয়ারি উৎসবের মাধ্যমে বই দিবস উদযাপন হলেও বই হাতে পেতে শিক্ষার্থীদের বিড়ম্বনা পোহাতে হবে কেন? বিশেষ করে নবম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি, গণিত, ইসলাম/হিন্দু ধর্ম, বাংলাদেশের ইতিহাস সভ্যতা, অর্থনীতি, পৌরনীতি, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবসা উদ্যোগ এখনো হাতে পায়নি শিক্ষার্থীরা। বই হাতে না পেলে শিক্ষার্থীরা পড়বেই বা কি? শিক্ষায় রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ফান্ড দুর্বল হয়ে থাকলে মাধ্যমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে পাঠ্য বই বিতরণের কি প্রয়োজন? ৫/৭ হাজার টাকা দিয়ে যেখানে শিক্ষার্থীরা গাইড বই কিনতে পারে সেক্ষেত্রে পাঠ্য বই কেনাও সম্ভব। হয়তো কিছু বাড়তি টাকা গুনতে হবে। তারপরও তো অন্তত সময় মতো পাঠ্যবই হাতে পাবে। মাধ্যমিক পর্যায়ে শারীরিক শিক্ষা, কর্মমুখী শিক্ষা এবং চারু ও কারুকলার মতো কিছু বিষয় বিদ্যালয়গুলোতে পড়ানো হয় না। পরীক্ষা নেওয়াও হয় না। অথচ সরকারি অর্থ খরচ করে এসব বই প্রিন্ট করে শিক্ষার্থীদেরও বিতরণ করা হয়েছে। অথচ গণিতের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের পাঠ্য বই এখনো অনেক শিক্ষার্থী হাতে পায়নি। ঊর্ধ্বতন আসনে কারা বসলে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এটা ভাববার বিষয়। এদিকে কয়েক বছর যাবত শোনা যাচ্ছে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে নতুন পাঠ্য বইয়ের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চলবে। অথচ নতুন বইয়ে ডারউইনের মতোবাদসহ কিছু সমালোচিত পরিচ্ছেদ অন্তর্ভুক্ত করলে শুরুতেই বাধাগ্রস্ত হয় শিক্ষা কার্যক্রম। অথচ সমালোচনা উঠার পর সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা এলো সমালোচিত বিষয়গুলো না পড়াতে। বিষয়টি বই হাতে পাওয়ার আগেই সমাধান করা উচিত ছিল। শিক্ষা ব্যবস্থার জটিলতায় অধিকাংশ শিক্ষক পাঠদানে দুর্বল। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা নির্ভরশীল হচ্ছে গাইড বইয়ের ওপর। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অধিকাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিম্নমানের গাইড কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করছে। শিক্ষকদের বড় অংকের কমিশন দেওয়ায় গাইড বই প্রকাশনা কোম্পানিগুলো গাইড বইয়ের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে বিনামূল্যে শিক্ষার্থীরা পাঠ্য বই হাতে পেলেও গাইড কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। যেখানে শিক্ষকরা গাইড কিনতে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিচ্ছেন সেখানে গাইড না কিনেও পারছে না শিক্ষার্থীরা। অনেকে গাইড বই কিনতে না পেরে পড়ালেখা থেকে ঝরে পড়ছে। আসলে আমাদের প্রয়োজন কর্মমুখী শিক্ষা। একাডেমিক শিক্ষার সঙ্গে কর্মের কোনো মিল নেই। শিক্ষায় যা আছে কর্মে সেটা প্রয়োগ করার সুযোগ নেই। আবার কর্মে যা করতে হচ্ছে একাডেমিক শিক্ষায় সেটা মিলছে না। এমন কি চাকরির পরীক্ষার সঙ্গেও একাডেমিক পড়ালেখার সঙ্গে ব্যাপক পার্থক্য। একাডেমিক পাঠ্যে কম্পিউটার ছিল না। এখন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নামে একটি বিষয় যুক্ত হলেও মিল নেই কর্মের সঙ্গে। পাঠ্যে রয়েছে এইচটিএমএল। অথচ চাকরির পরীক্ষায় নেওয়া হয় টাইপিং স্পিড। যা পাঠ্যে কখনো শেখানো হয় না। চাকরির পরীক্ষায় দেওয়া হয় সাধারণ জ্ঞান। অথচ একাডেমিক শিক্ষায় সাধারণ জ্ঞানের কোনো বই পাঠ্য করা হয়নি। ইংরেজিতে কথা বলতে পারা প্রার্থীকে অনেক কর্মেই দেওয়া হয় অগ্রাধিকার। অথচ একাডেমিক শিক্ষায় স্পোকেন ইংলিশ নামে কোনো বই পাঠ্য করা হয়নি। গ্রম্নপভিত্তিক পড়ালেখার কি প্রয়োজন। ব্যবসায় শিক্ষা শাখা বা মানবিক শাখায় পড়ালেখা করেও প্যারাম্যাডিক কোর্স করে চিকিৎসা দিচ্ছেন অনেকে। মানবিক বা বিজ্ঞান বিভাগে পড়ালেখা করে ব্যাংকার হচ্ছেন। তাহলে পড়ালেখার সঙ্গে কর্মের মিল কোথায়? শিক্ষাকে যুগপোযোগী করতে হলে কর্মের সঙ্গে শিক্ষার সংযোগ তৈরি করাটা জরুরি। রেজাউল করিম:কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে