সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

নাটকের গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখতে আরও সচেতনতা জরুরি

মো. সায়েদ আফ্রিদী
  ২৬ মে ২০২৩, ০০:০০

চলচ্চিত্র আমাদের সংস্কৃতির অংশ। সমাজের দর্পণ হয়েই ফুটে ওঠে ছবি, নাটক কিংবা এর আওতাভুক্ত মাধ্যম। এগুলো দেখে দর্শক যেমন শেখে ঠিক তেমনি সমাজের নিত্যদিনের কার্যক্রমের অনেককিছুই ফুটিয়ে তোলা হয় এর মাধ্যমে। যার ফলে সমাজে সচেতনতা তৈরি হয়। আমাদের চলচ্চিত্রের দুর্দশা বেশ কয়েকবছর ধরে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ২-৪ জন ছাড়া কোনো শিল্পী নেই যে বা যারা চলচ্চিত্রে আগের সেই সোনালি অতীত ধরে রাখবে। এখন বরং দেখা যায় শিল্পী সমিতি নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিভক্তি। এক পরিচালক আরেক পরিচালকের মধ্যে দ্বন্দ্বসহ নানান সংকট। সহজভাবে বললে চলচ্চিত্রের উন্নয়নে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কারও সত্যিকারের মনোযোগ, ইচ্ছে বা আগ্রহ নেই। সবাই ব্যক্তিকেন্দ্রিক সুযোগ-সুবিধা নিতে ব্যস্ত। চলচ্চিত্রের এই জায়গাটা নিয়েছে নাটকসহ বিভিন্ন ওয়েব সিরিজ। আমাদের দেশের নাটকগুলো বেশ জনপ্রিয় দেশ এবং বিদেশে। দিন দিন এই সেক্টরের ব্যবসা তুলনামূলক বেশ ভালোই যাচ্ছে একথা অকপটে স্বীকার করতে হয়। অভিনয় করার জন্যও রয়েছে যথেষ্ট পরিপক্ব অভিনয়শিল্পীরা। যেটা বাংলা ছোটগল্প তথা নাটকের জগতের জন্য নিঃসন্দেহে আনন্দের এবং গৌরবের। তবে সময়ের পরিক্রমায় দিন দিন সবকিছু আধুনিক হচ্ছে। কাহিনী ঘুরছে বিভিন্নমুখী হয়ে। অভিনয়ে আসছে নতুন নতুন অনেক মুখ। প্রয়োজক এবং প্রয়োজনায় আসছে বহু মুখ। টেলিভিশনের বাইরেও থাকছে ইউটিউব, ফেসবুক, ওটিটি পস্ন্যাটফর্মসহ আরও বিভিন্ন মাধ্যম। যেখানে দর্শক সামান্য টাকার বিনিময়ে দেখতে পারে কিংবা বিনা টাকায়। যেহেতু দিন দিন এটা মুক্ত পেশায় পরিণত হচ্ছে তাই ব্যক্তি স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে যে যার মতো নাটক বা ওয়েব ফিল্ম নির্মাণ করছে। নির্দিষ্ট কোনো নিয়মকানুন তোয়াক্কা না করে অনেকেই একের পর এক নাটক বা ওয়েব সিরিজ নিয়ে আসছে। যেখানে নেই কাহিনীর গঠন বা কোনো গাঠনিক বিষয়। ইচ্ছেমতো বলে যাচ্ছে স্স্ন্যাং বা অশ্লীল শব্দ। এ ছাড়া থাকছে নানান অশালীন আচরণ এবং চিত্র ধারণ। থাকছে পারিবারিক বা সামাজিক বিভিন্ন রুচিহীন চরিত্র এবং গল্প। যেগুলো দেখে দর্শকদের চিন্তাভাবনা যথেষ্ট নিম্নমুখী হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ ছাড়া এসব অশ্লীল শব্দচয়ন আমাদের কোমলমতি শিশুদের জন্যও ক্ষতিকর। যেহেতু এসব গল্পে নির্দিষ্ট বয়সের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কোনোকিছু নির্মাণ করা হয় না তাই এখানে সব বয়স বিবেচনা করেই নাটক বা ওয়েব সিরিজগুলো নির্মাণ করা উচিত। অথচ আজকাল মনে হয় এসব অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি এবং শব্দচয়ন ছাড়া নাটকের পূর্ণতা পায় না। এমন অশ্লীল গল্প, অঙ্গভঙ্গি এবং শব্দচয়ন নিঃসন্দেহে দুঃখজনক এবং হুমকিস্বরূপ বাংলা নাটকের জন্য। যেখানে রুচির দুর্ভিক্ষ নিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত কথা বলছি সেই আমরাই কথা বলছি না, প্রতিবাদ করছি না, সভা-সেমিনার করছি না এসব অনাকাঙ্ক্ষিত নাটক, অশ্লীল শব্দ এবং অশ্লীল শব্দভঙ্গির বিরুদ্ধে। যেগুলো প্রত্যক্ষভাবে প্রতিনিয়ত আমাদের সংস্কৃতি, কৃষ্টি-কালচার নষ্ট করছে। এ কথা বলতেই হয়, রুচির দুর্ভিক্ষ থেকে ফিরে আসতে আমাদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। আমাদের দর্শকদের সচেতন হওয়া দরকার। ভালো কাজের প্রশংসা করা দরকার। পাশাপাশি মন্দ কাজকে সম্মিলিতভাবে বয়কট করা দরকার। এবং ছোট গল্পের নির্মাতাদের আরও সচেতন হওয়া দরকার। তাদের এ বিষয়টা মনের মধ্যে গেঁথে নেওয়া দরকার, এসব অশ্লীল গালাগাল এবং অঙ্গভঙ্গি ছাড়াও শতশত কালজয়ী নাটক বা সিনেমা আছে যেগুলো দর্শকের অন্তরে গেঁথে আছে এবং থাকবে যুগের পর যুগ।

শিক্ষার্থী

ঢাকা কলেজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে