সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুরের নতুন মেয়র সুষ্ঠু নির্বাচনের দৃষ্টান্ত

নতুনধারা
  ২৭ মে ২০২৩, ০০:০০

প্রতিটি নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হোক এবং সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হোক এটাই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা। আর এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া দরকার, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদান করতে পারলে তাতে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য প্রকাশ পায়। প্রসঙ্গত বলা দরকার, সম্প্রতি শেষ হয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। তথ্যমতে, ভোটের লড়াইয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় সিটি করপোরেশন গাজীপুরের নতুন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জায়েদা খাতুন। তাকে আমরা অভিনন্দন জানাই।

বলা দরকার, স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা জায়েদা খাতুনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর সিটি করপোরেশনেরই সাবেক মেয়র। উলেস্নখ্য, সাধারণ গৃহিণী থেকে বিশেষ পরিস্থিতিতে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েই আলোচনায় আসেন ৬১ বছর বয়সি জায়েদা খাতুন। ভোটের প্রচারে নিজেকে জাহাঙ্গীরের মা হিসেবেই পরিচয় দিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার দিনে ভোট গ্রহণ শেষে গভীর রাতে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। দেখা যায়, জায়েদা খাতুন ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটের ব্যবধানে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উলস্না খানকে পরাজিত করেছেন। মোট ৪৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উলস্না পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট। ভোটের ফলাফলে তৃতীয় হওয়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান পেয়েছেন ৪৫ হাজার ৩৫২ ভোট।

বলা দরকার, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কিনা এমন নানা সংশয় থাকলেও নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে এমনটি জানা যাচ্ছে। বিশেষ করে সরকার দলীয় প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন আর স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হওয়াতেও নির্বাচন যে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে সেটি সামনে আসছে। জানা যায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে সন্তুষ্ট নির্বাচন কমিশনও। ভোট গ্রহণ শেষে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, যেভাবে ভোট হয়েছে তাতে তারা খুবই সন্তুষ্ট। তিনি জানিয়েছেন 'নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন সব প্রার্থীর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে।'

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হলে তাতে যেমন নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ে, তেমনি গণতন্ত্রের সৌন্দর্যও প্রকাশ পায়। এ ছাড়া এটা আশাব্যঞ্জক বিষয় যে, সাম্প্রতিক সময়ে সংসদীয় বিভিন্ন আসনের উপনির্বাচনে এবং স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতে ভোটারের খরা দেখা গেছে। কিন্তু তথ্যমতে, গাজীপুর সিটির নির্বাচনে ব্যতিক্রমী চিত্রই পরিলক্ষিত হয়। জানা যায়, সকাল থেকে প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটারের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। বেশির ভাগ কেন্দ্রে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী সব প্রার্থীর এজেন্ট না থাকলেও অনিয়মের তেমন কোনো অভিযোগ ছিল না বলেও জানা যায়।

আমরা বলতে চাই, এবারের নির্বাচন নিয়ে যে ধরনের সন্তুষ্টির বিষয় আলোচনায় আসছে, তা আমলে নিয়ে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার আগামীতে সব নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করা। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার ঘটনা বারবার ঘটেছে। নানা ধরনের অনিয়ম আলোচনায় এসেছে, যা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেভাবে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এবং অস্ত্রের মহড়া প্রদর্শিত হয়েছে তাও উদ্বেগজনক। ফলে জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে যে কোনো নির্বাচনই অবাধ ও সুষ্ঠু হোক এবং সংশয়হীন হোক এটাই কাম্য।

সর্বোপরি বলতে চাই, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হোক এবং সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হোক- আর এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে যথাযথ উদ্যোগ অব্যাহত রাখা জরুরি। মনে রাখা দরকার, কোনো নির্বাচনে যেন সহিংসতার ঘটনা না ঘটে সেই বিষয়টিকে সামনে রেখে পদক্ষেপ নিতে হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের আরও বেশি তৎপর হতে হবে। সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে প্রতিটি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হোক এবং এই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে