সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

তামাকজনিত কারণে মৃতু্য

চাই ধূমপানমুক্ত দেশ
নতুনধারা
  ২৯ মে ২০২৩, ০০:০০

বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সবমিলিয়ে ৩০ হাজারের মতো মানুষের মৃতু্য হয়েছে। কিন্তু তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে দেশে বছরে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃতু্য হয়। যা করোনায় মৃতু্যর চেয়ে ৫ গুণ বেশি। এমনকি একদিনেই তামাক ব্যবহারের চূড়ান্ত পরিণতিতে প্রাণ হারাচ্ছেন সাড়ে ৪শ' মানুষ। এ অবস্থায় আগামী সংসদ অধিবেশনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাসের দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ইউনাইটেড ফোরাম এগেইনস্ট টোব্যাকো এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব তথ্য জানান।

এটা সত্য, তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের কারণে আমাদের দেশে অসংক্রামক রোগ যেমন, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, ক্যানসার ও শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি রোগ ইত্যাদি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে দেশে মোট মৃতু্যর ৬৭ শতাংশই অসংক্রামক রোগের কারণে ঘটছে। আর এই অসংক্রামক রোগ সৃষ্টির কারণ মূলত ধূমপান ও তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার। তামাকে শুধু যে ফুসফুসে ক্যানসার হয়, তা নয়, শারীরিক অন্যান্য নানা সমস্যাও দেখা দেয়। বিশেষ করে সুপারি, গুল, জর্দাসহ ধোঁয়াবিহীন যেসব তামাক রয়েছে, সেগুলোর কারণে জিহ্বা ও ঠোঁটের ক্যানসার হয়। তামাকের এই ভয়াবহতা রোধে শক্তিশালী আইন জরুরি। আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে 'তামাকমুক্ত বাংলাদেশ' গড়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে 'তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে তামাক চাষ, তামাক কোম্পানির আয় থেকে নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে রোডম্যাপ গ্রহণ করতে হবে সরকারকে। পাশাপাশি তামাক কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার, তামাক কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে সরকারি কর্মকর্তাদের রাখা, কৃষি মন্ত্রণালয়ে তামাক পাতার দাম নির্ধারণে কমিটি রাখা বন্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে তামাক কোম্পানিগুলোকে কর সুবিধা দিয়ে সরকারের নীতি ও কার্যক্রমের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। আন্তর্জাতিক নানা গবেষণায় ই-সিগারেট মারাত্মক স্বাস্থ্য হানিকর প্রমাণিত হওয়ার পরও বাংলাদেশে ই-সিগারেটের বৈধ ব্যবসার সুযোগ দাবি করেছে। তামাক কোম্পানির এ ধরনের অপচেষ্টা এখনই প্রতিরোধ করতে না পারলে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারের পদক্ষেপসমূহ ও এর বাস্তবায়ন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।

আমরা মনে করি, তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়া এত সহজ নয়। প্রকাশ্যে ধূমপানের জন্য ৩০০ টাকা জরিমানার বিধান থাকা সত্ত্বেও মানুষ আইন মানছে না। আইন না মানার প্রবণতা বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে। সবার আগে মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। যদি জনগণের রুচি ও মানসিকতার পরিবর্তন না হয় তা হলে কীভাবে সম্ভব তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়া। সিগারেটের গায়ে লিখা থাকে সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তারপরেও তো মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে ধূমপানের দিকে। বিশেষ করে আমাদের তরুণ সমাজ ধূমপানসহ নানা ধরনের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। কেবল তরুণ সমাজই নয়, কিশোররাও এখন ধূমপানসহ নানা ধরনের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। এটা সমাজের জন্য এক বিপজ্জনক বার্তা। আমরা চাই, ধূমপানমুক্ত সমাজ ও দেশ। এটা একদিনেই হবে না। এর জন্য সরকারকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। দেশের মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে হলে এর বিকল্প নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে