সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

এশিয়ার লৌহমানবী শেখ হাসিনা

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওয়াশিংটন সফরের সময় তার সাক্ষাৎকার নেয় দ্য ইকোনমিস্ট। বুধবার 'এশিয়ার লৌহমানবী শেখ হাসিনা' শিরোনামে সেই সাক্ষাৎকার এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের বিশ্লেষণটি প্রকাশ করা হয়।
মো. খসরু চৌধুরী
  ০২ জুন ২০২৩, ০০:০০

শেখ হাসিনাকে এশিয়ার লৌহমানবী অভিহিত করেছে দ্য ইকোনমিস্ট। ব্রিটিশ এই সাময়িকীর বিশ্লেষণে ১৭ কোটির মানুষের জনবহুল বাংলাদেশে উলেস্নখযোগ্য দারিদ্র্য বিমোচনে নেতৃত্ব দেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে বেশির ভাগ সময় জিডিপির বার্ষিক গড় হার ছিল সাত শতাংশ। সমকালীন বৈশ্বিক পরিস্থিতির বিবেচনায় এটি অভাবনীয় বলে অভিহিত করেছে ইকোনমিস্ট।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওয়াশিংটন সফরের সময় তার সাক্ষাৎকার নেয় দ্য ইকোনমিস্ট। বুধবার 'এশিয়ার লৌহমানবী শেখ হাসিনা' শিরোনামে সেই সাক্ষাৎকার এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের বিশ্লেষণটি প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার টানা ক্ষমতায় থাকার সুফল তুলে ধরে বলা হয়, এর ফলে প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে। অনেক খাতের উন্নয়ন ঘটিয়েছে। যেমন দেশের পোশাক শিল্প এবং অভিজাত এনজিওদের সরবরাহকৃত পরিষেবাগুলোর মান বেড়েছে। ইকোনমিস্ট বলেছে, শেখ হাসিনার দীর্ঘ কর্মজীবন সাহসিকতার।

বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকা নারী সরকারপ্রধান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনকি নারী ও পুরুষ সরকারপ্রধানদের মধ্যেও তিনি সবচেয়ে উলেস্নখযোগ্যদের একজন। দেড় দশক ধরে টানা ক্ষমতায় থাকা বাংলাদেশের এই সরকারপ্রধান ১৭ কোটি মানুষের দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

৭৫ বছর বয়সি প্রধানমন্ত্রী তার দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে মোট চারবার তার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন হয়েছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে পরপর তিনটি নির্বাচনে জয়লাভ করেছে দলটি। যা ইন্দিরা গান্ধী বা মার্গারেট থ্যাচারের ক্ষমতার সময়কালের চেয়েও বেশি।

আগামী বছরের শুরুর দিকে বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ওই নির্বাচনেও তিনি জয়ী হবেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণ করার পর থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সর্বোচ্চ আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তার নেতৃত্বে প্রতিটি সেক্টরেই লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া ও খুলে গেছে অযুত সম্ভাবনার দ্বার। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর অবস্থা, দারিদ্র্য দূরীকরণ ইত্যাদি সামাজিক খাতে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। এ অগ্রগতিকে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা 'ঈর্ষণীয়' বলে বর্ণনা করেন।

প্রধানমন্ত্রীর দূরদের্শী নেতৃত্বে সব দিক থেকেই দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সময়োপযোগী দিক নির্দেশনা ও শিক্ষামন্ত্রীর উপযুক্ত নেতৃত্বে দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে বৈপস্নবিক পরিবর্তন হয়েছে। বছরের প্রথম দিনেই বিনামূল্যে সব পাঠ্যবই পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আগে মেয়েরা পড়াশুনায় অনগ্রসর ছিল, এখন উপবৃত্তিসহ বিভিন্ন প্রণোদনার কারণে মেয়েদের শিক্ষিত করার ব্যাপারে অভিভাবকদের সচেতনতা বেড়েছে এবং মেয়েরাও শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী হয়েছে।

সরকার ক্ষমতা গ্রহণের আগে যে প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিল তা অনেক আগেই পূরণ করেছে। ইতোমধ্যেই জনগণের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি কিছু করতে পেরেছে। গুণগত ও সংখ্যাগত দুই দিক থেকেই উলেস্নখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা প্রশংসার দাবি রাখে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এসেছে, আমরা বাইরে রপ্তানিও করতে পারি। দেশে অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বিদু্যৎ সমস্যার সমাধান হয়েছে। আইটি সেক্টর আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী এবং বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল শহর থেকে গ্রামে সবাই পাচ্ছে। ঘরে বসে দেশে-বিদেশে তথ্য বিনিময়সহ। অনলাইনে প্রয়োজনীয় অনেক কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। ইন্টারনেটের কারণে বিশ্ব একেবারেই হাতের মুঠোয়। এই ইতিবাচক পরিবর্তন ও ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড সত্যিই যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে বিবেচিত হবে।

দেশপ্রেমী প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাদের কষ্ঠার্জিত উপার্জন দেশে পাঠাচ্ছে। বাড়ছে রেমিট্যান্স, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ হচ্ছে সুনিশ্চিত। মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হয়েছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে। এক সময় বাংলাদেশ এলডিসিভুক্ত ছিল। বলা হতো অনুন্নত দেশ, তারপর বলা হতো উন্নয়নকামী দেশ। নিম্ন বা গরিব দেশ থেকে এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আজ দৃশ্যমান। এক সময় বাংলাদেশকে বলা হতো তলাবিহীন ঝুড়ি। যারা সে এক সময় তলাবিহীন ঝুড়ি বলতো, আজ তারাই দেশের উন্নয়ন নিয়ে প্রশংসা করেন। এটাই আওয়ামী লীগের অর্জন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নারী নেত্রীদের মধ্যে আইকন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীনসহ সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছেন।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে যে স্বপ্ন দেশের মানুষকে দেখিয়ে ছিলেন, আজকে সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ লাভ করেছে। শেখ হাসিনা সরকার টানা তৃতীয় মেয়াদসহ চতুর্থবার দেশ পরিচালনা করছে। দেশবাসী আজ এর সুফল পাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি, একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য সম্পন্ন করা, সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি ও সমুদ্রবক্ষে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বস্নুইকোনমির নতুন দিগন্ত উন্মোচন, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সফল উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ জয়, সাবমেরিন যুগে বাংলাদেশের প্রবেশ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নতুন নতুন উড়াল সেতু, মহাসড়কগুলো ফোর লেনে উন্নীত করা, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, মাথাপিছু আয় দুই হাজার ২২৭ মার্কিন ডলারে উন্নীত, মাত্র ৩.৫ বিলিয়ন থেকে রিজার্ভ ৪৮.০৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত, দারিদ্র্যের হার হ্রাস, মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭৩ বছরে উন্নীত, ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াটে উন্নীত ও প্রায় শতভাগ মানুষকে বিদু্যৎ সুবিধার আওতায় আনা, যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন, সাক্ষরতার হার ৭৫.৬০ শতাংশে উন্নীত করা, বছরের প্রথম দিনে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর হাতে বিনা মূল্যে নতুন বই পৌঁছে দেওয়া, মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারার শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা ও স্বীকৃতি দান, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, প্রতিটি জেলায় একটি করে সরকারি/ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ, নারীনীতি প্রণয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, ফোরজি মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার চালুসহ অসংখ্য ক্ষেত্রে কালোত্তীর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।

ইতোমধ্যে দেশের ৯টি জেলার ২১১টি উপজেলায় সম্পূর্ণরূপে ভূমিহীন-গৃহহীনদের পুনর্বাসিত করা সম্ভব হয়েছে। এটি বিশ্বকে তাক লাগানোর মতো একটি বিস্ময়কর ঘটনা অবশ্যই। বিনামূল্যে নামজারিসহ দুই শতক জমিতে পরিকল্পিত বাসগৃহ পেয়ে ছিন্নমূল গৃহহীন পরিবারগুলো আনন্দে আত্মহারা। এর পাশাপাশি ভূমি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের কার্যক্রমের আওতায় পুনর্বাসিত হয়েছে আরও দুই লাখ ১৬ হাজার ৭০৪টি পরিবার। পরিবারপ্রতি পাঁচজন হিসেবে এই কার্যক্রমে এ পর্যন্ত প্রত্যক্ষ উপকারভোগীর সংখ্যা ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার ৫০৫ জন।

বাকি ২১ হাজার ৪০টি পরিবার চিহ্নিত করে তাদের পর্যায়ক্রমে পুনর্বাসনের মাধ্যমে দেশে কোনো মানুষ ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না- অঙ্গীকার বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। উলেস্নখ্য, ২০১৬ সালে ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে গৃহশুমারি করে সরকার অবগত হয় ১৬ লাখ ৬৩ হাজার মানুষ তখন ছিলেন ভূমিহীন-গৃহহীন অথবা যাদের জমি আছে ঘর নেই। সেই তালিকা অনুযায়ী সুবিধাবঞ্চিতদের চিহ্নিত করে ঘর দেওয়া হচ্ছে পর্যায়ক্রমে।

শেখ হাসিনার গত তিন মেয়াদে যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে, তা নজিরবিহীন। শেখ হাসিনার হাত ধরেই বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে এক বিস্ময় বিশ্ববাসীর কাছে। বর্তমানে বিদেশিরাও বাংলাদেশের সাফল্যের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। দেশে ও দেশের বাইরে ভিশনারি লিডার হিসেবে শেখ হাসিনার যে ঈর্ষণীয় সাফল্য তা এক কথায় অনন্য ও অসাধারণ।

মো. খসরু চৌধুরী :পরিচালক, বিজিএমইএ; শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে