সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

মার্কিন ভিসানীতি ও দেশের গণতন্ত্র শাহ

বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের উচিত নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা করে অবাধ ও নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পথ বের করা।
মো. জিয়াউদ্দিন
  ০২ জুন ২০২৩, ০০:০০

সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার ভিসানীতির পরির্বতন করেছে। নতুন নীতির সারমর্ম থেকে বুঝা যায় যে, বাংলাদেশের নির্বাচনে কেউ জোরপূর্বক বুথ দখল করলে বা সন্ত্রাস করলে তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা দেবে না। মার্কিনিদের এই ভিসানীতি নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সৃষ্টি হয়েছে তোলপাড়। বিএনপি বলছে, আওয়ামী লীগের আচরণের কারণে আজ মার্কিনিরা এই নীতি গ্রহণ করেছে, অপর দিকে আওয়ামী লীগ বলছে, এই নীতির কারণে মার্কিন বাংলাদেশ সম্পর্ক বিনষ্ট হবে না। প্রশ্ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কে? তার কি অধিকার আছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার। দেশের মাজাভাঙা রাজনীতিবিদদের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আজ এই দৃষ্টতা দেখাতে পারে। বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ কখনো মার্কিনি মাতুব্বরি পছন্দ করে না। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি নিজেদের দেশের সন্ত্রাস দমন করতে পেরেছে? গত তিন দিন আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আনন্দময় একটি মোটর সাইকেল শোভাযাত্রায় গুলি করে তিনজনকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। প্রতিদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আততায়ীদের গুলিতে মানুষ মারা যাচ্ছে। ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের কেমব্রিজের পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক নাগরিক। তার বয়স ছিল ২০ বছর, নাম ফয়সাল। ফয়সাল হত্যাকান্ডকে বর্ণবাদী কাজ হিসেবে দেখছেন মানবাধিকার কর্মীরা। শ্বেতাঙ্গ এক পুলিশ কর্মকর্তা এই হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছিল। কিছুদিন আগে এক সন্ত্রাসী চার মুসলিমকে মসজিদে হত্যা করে। জানা যায়, এই হত্যাকারী আফগানিস্তান থেকে আমেরিকায় গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর খুনিরা আশ্রয় নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এখনো বঙ্গবন্ধুর এক খুনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন বলে জানা যায়। পৃথিবীর ইতিহাসে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড সবচেয়ে নৃশংসতম। এই নৃশংসতম হত্যাকান্ডের নায়করা পেয়েছে মার্কিনিদের আশ্রয়। সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বলছে, যুক্তরাষ্ট্র কোনো সন্ত্রাসীদের ঠাঁই দেয় না। এটা শুনলে যে কোনো বিবেকমান মানুষই বুঝতে পারবে মার্কিনিরা আসলে কি চায়। সুতরাং, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান এই ভিসানীতি একটি আধিপত্যবাদ সম্প্রসারণের কৌশল। বাংলাদেশের যে সব রাজনৈতিক দলগুলো মার্কিনি ভিসানীতিকে স্বাগত জানিয়েছেন তাদের জনগণ কখনো রায় দেবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের মতো একটি যুদ্ধাপরাধী দেশ। কারণ ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতির বিজয় ঠেকাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে সমর্থন দেয়। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য আমেরিকা সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল। ১৯৭১ সালে মার্কিনিদের সপ্তম নৌবহর বাংলার জনপদের মানুষকে হত্যা করার উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দরের দিকে আসছিল। তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার বাধার মুখে মার্কিনি সপ্তম নৌবহর ফেরত যেতে বাধ্য হয়। তাই বাংলাদেশের রাজাকারের তালিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাম তালিকাভুক্ত করা উচিত। পাকিস্তানকে যেমন রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া দরকার বলে এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের রাজনৈতিকরা দাবি করেন, ঠিক মার্কিনিদের বেলায়ও এ ধরনের দাবি তোলা হউক। একটি সাধারণ সমীক্ষায় দেখা যায়, বাংলাদেশের যেসব রাজনৈতিক দল মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে ছিল না তারাই মার্কিনিদের সমর্থন করে। মার্কিনিরা কখনোই বাংলাদেশের বন্ধু না। যদি কোনো রাজনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশের বন্ধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাহলে বুঝতে হবে ওই রাজনীতিবিদ রাজাকারের চামাচামি করছে। কারণ ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে যে খাদ্যাভাব দেখা দেয় তা মার্কিনিদের সৃষ্ট। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হয়। এই বন্যায় দেশের সব ফসল বিনষ্ট হয়ে যায়। তখন বাংলাদেশ যুদ্ধ বিধ্বস্ত ও খাদ্যহীন। ১৯৭৪ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত ও বন্যাপীড়িত বাংলাদেশে জাহাজ ভর্তি খাদ্যসামগ্রী মার্কিনিরা ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। যার ফলে এ দেশে সৃষ্টি হয়েছিল মারাত্মক দুর্ভিক্ষ। ১৯৭৫ সালে মাকিন সাম্রাজ্যবাদের গোয়েন্দাদের পরোক্ষ মদতে এ দেশের বিপথগামী কতিপয় সেনা সদস্যরা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। এই হত্যাকান্ডের উদ্দেশ্য ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও লক্ষ্যকে বিনষ্ট করা। বাংলাদেশকে পাকিস্তানি আর্দশে ফিরিয়ে নেয়ার লক্ষ্যেই মার্কিনিরা এই হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের হত্যাকান্ডের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তারা আশ্রয় পায় আমেরিকায়। আজ বাংলাদেশের সুদিন আর এ দেশের কিছু কু-সন্তান আমেরিকায় টাকা পাচার করছে- তাই মার্কিনিরা বাংলাদেশের বন্ধু হয়ে গেছে। যে সমস্ত দেশ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করেছে তারা কখনো বাংলাদেশের বন্ধু হতে পারে না। আমেরিকায় কি গণতন্ত্র আছে? মার্কিনিদের নির্বাচন কি অবাধ ও নিরপেক্ষ? জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে কি মার্কিন দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়? যারা মার্কিন এই ভিসানীতিকে তোষণ করছেন তারা এই বিষয়গুলো একটু ভেবে দেখবেন। যদি নির্বাচনে জনগণ সরাসরি ভোট দেয়। তবে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না। যদি তিনি ইলেক্ট্ররাল কলেজের ভোটে নির্বাচিত না হন। এটা এক আজব গণতন্ত্র আমেরিকায়। পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক মানুষ একে সমর্থন করবে না। মার্কিন সংবিধানের ২নং অনুচ্ছেদে বলা আছে, ইলেক্ট্ররাল কলেজ হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন পক্রিয়ার মূল নিয়ামক, যাদের ভোটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ও উপ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সারাদেশে ইলেক্ট্ররাল কলেজের সংখ্যা হলো ৫৩৮টি। যদি কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি বা উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নিয়ে ২৭০টি ইলেক্ট্ররাল কলেজের ভোট না পান, তাহলে তিনি নির্বাচিত হতে পারবেন না। অনেকেই বলবেন ইলেক্ট্ররাল কলেজ তো জনগণই বানায়। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে জনগণের ভোট দেওয়ার প্রয়োজন কি? ইলেক্ট্ররাল কলেজই তো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে পারে। ২০২০ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভোটারের সংখ্যা ছিল প্রায় ২৪০ মিলিয়ন। এই মোট ভোটারের মধ্যে ৬৬.১ শতাংশ ভোটার ভোট দেয়। ভোট প্রদানের ভোট সংখ্যা হলো ১৫৮ মিলিয়ন। ১৫৮ মিলিয়ন উপিস্থিতি ভোটার যদি একজনকে ভোট দেয়, অর্থ্যাৎ ১৫৮ মিলিয়ন ভোট পেলেও কেউ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে পারবে না, যদি তিনি ২৭০টি ইলেক্ট্ররাল কলেজের ভোট না পায়। খোদ মার্কিন মুলস্নুকে নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করে ৫৩৮ জন মানুষ। সেই আমেরিকা আবার সারা বিশ্বে গণতন্ত্র শেখায়। তাই স্পষ্টভাবে বলা যায় যে, আমেরিকার মুখে কখনো অবাধ নির্বাচনের কথা শোভা পায় না। পৃথিবীর সবচেয়ে বর্বর ও সন্ত্রাসী দেশ হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কারণ পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি আয় বৈষম্যের দেশ আমেরিকা। আমেরিকার নীতির কারণে আজ ইউক্রেন জ্বলছে। সারা পৃথিবীতে যুদ্ধ সংঘাত বাধিয়ে রাখে এই আমেরিকা। সারা বিশ্বের সন্ত্রাসীদের ও দুর্নীতিবাজদের আশ্রয়স্থল আমেরিকা। দুইটি পাশাপাশি বন্ধুত্ব সুলভ দেশের সম্প্রীতি দেখলেই সেখানে কৌশলে যুদ্ধ বাধায় আমেরিকা। তাই বাংলাদেশের রাজনীতিবিদের উচিত আমেরিকার কথা কর্ণপাত না করা। কারণ আমেরিকা চায়নি বাংলাদেশ স্বাধীন হউক। বাংলাদেশের সৃষ্টির সঙ্গে যারা বিরোধিতা করেছে সেই সব দেশকে বাংলাদেশর জনগণের ঘৃণা করা উচিত।

বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের উচিত নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা করে অবাধ ও নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পথ বের করা।

শাহ মো. জিয়াউদ্দিন : কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে