সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মক্ষেত্রে তিন শ্রমিকের মৃতু্য পুনরাবৃত্তি রোধে উদ্যোগ নিন

নতুনধারা
  ০২ জুন ২০২৩, ০০:০০

কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার কারণে শ্রমিকের মৃতু্য হলে তা কতটা উদ্বেগজনক পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এক্ষেত্রে স্মর্তব্য যে, মাঝে মাঝেই পত্রপত্রিকার পাতা উল্টালেই নানাভাবে শ্রমিকের মৃতু্যর খবর সামনে আসে। নির্মাণাধানী ভবন থেকে পড়ে কিংবা নানা ধরনের দুর্ঘটনার কবলে পড়ে শ্রমিকের মৃতু্যর ঘটনা ঘটে। সঙ্গত কারণেই এই ধরনের ঘটনার ভয়াবহতা আমলে নিয়ে এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে আবারও মর্মান্তিকভাবে তিন শ্রমিকের মৃতু্যর ঘটনার বিষয়টি সামনে এলো। তথ্য মতে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার জমাদারডাঙ্গী এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ব্রিজের কাজ করার সময় মাটি ধসে পড়ে তিনজনের মৃতু্য হয়েছে। এ সময়ে আহত হয়েছে আরও চারজন। জানা যায়, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দ্রম্নত ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় উদ্ধার কাজ করা হয়। বুধবার দুপুর ১টার দিকে এই ঘটনাটি ঘটেছে।

আমরা বলতে চাই, যদি নির্মাণাধীন ব্রিজের কাজ করার সময় মাটি ধসে পড়ে মৃতু্যর ঘটনা ঘটে, তবে এটা কতটা উদ্বেগের সেটা আমলে নেওয়া জরুরি। এ ক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি অগ্রগণ্য। সঙ্গত কারণেই এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। স্থানীয়দের ভাষ্য, জেলার সদরপুর উপজেলার ভাসানচর ইউনিয়নের জমাদারডাঙ্গী এলাকায় শ্রমিকরা একটি ব্রিজের কাজ করছিল। এ সময় শ্রমিকরা ব্রিজের নিচের অংশের রড বাঁধাইয়ের কাজ করার সময় ব্রিজের পাশে থাকা মাটির স্তূপ থেকে মাটি ভেঙে পড়ে এতে ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃতু্য হয়। আর আহত চারজনের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর। উলেস্নখ্য যে, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা খবর পাওয়ার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক উলেস্নখ করে বলেছেন, এ কাজে কোনো ত্রম্নটি কিংবা কোনো অবহেলার বিষয় থেকে থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আমরা মনে করি, সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। আমলে নেওয়া দরকার, এমনটিও জানা যাচ্ছে, ব্রিজে কর্মরত শ্রমিক সরদার জানিয়েছেন, তারা বারবার বিষয়টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জানালেও মাটি সরানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। মাটির পাশে গাইড দেওয়ার কথা বলা হলেও তা করা হয়নি। তারা উল্টো হুমকি দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছিল। ফলে সার্বিক বিষয়গুলোকে আমলে নিয়েই তদন্ত সাপেক্ষে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক ও তৎপর থাকতে হবে।

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার কারণে মৃতু্যর ঘটনা এই প্রথম নয়। নানা সময়েই এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটছেই রহরহ। ২০২২ সালে দেশের বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৩৪ জন শ্রমিক নিহত এবং ১ হাজার ৩৭ জন শ্রমিক আহত হয়েছিলেন। এ সময়ের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হয়েও মারা যান ১৩৫ জন শ্রমিক, আহত হন ১৫৫ জন। এছাড়া বিভিন্ন খাতে ১৯৬টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনাও ঘটেছে। মূলত সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিভিন্ন খবরের ওপর ভিত্তি করে 'বাংলাদেশের শ্রম ও কর্মক্ষেত্র পরিস্থিতি বিষয়ে সংবাদপত্রভিত্তিক বিলস জরিপ-২০২২' শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছিল। আমরা মনে করি, এই তথ্য আমলে নেওয়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের এটাও বিবেচনায় নিতে হবে যে, শ্রমিক আহত ও নিহতের এসব ঘটনার মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছিল সড়ক দুর্ঘটনা, বিদু্যৎস্পৃষ্ট হওয়া, বজ্রপাত, অগ্নিকান্ড, সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড়ে ট্রলারডুবি, পড়ন্ত বস্তুর আঘাত, মাথায় কিছু পড়া, বিষাক্ত গ্যাস, নৌ দুর্ঘটনা, দেয়াল/ছাদ ধসে পড়া, সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ইত্যাদি। সঙ্গত কারণেই এসব কারণ আমলে নিতে হবে। দেশের বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় যেভাবে শ্রমিকর মৃতু্যর ঘটনা ঘটে তা পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে দুর্ঘটনারোধে সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, নির্মাণাধীন ব্রিজের কাজ করার সময় মাটি ধসে পড়ে তিনজনের মৃতু্য হয়েছে- এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করে ব্যবস্থা নিন। একইসঙ্গে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে