সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

মূল্যস্ফীতি

সঠিক উদ্যোগ নিতে হবে
নতুনধারা
  ০৪ জুন ২০২৩, ০০:০০

'মূল্যস্ফীতি নিয়ে আমরা শঙ্কিত। যেসব কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ে, তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি আমরা। প্রয়োজনে খাদ্য আমদানি করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে।' শুক্রবার বিকাল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। মন্ত্রী বলেন, আমরা যখন দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখন মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১২ শতাংশ। আমরা মূল্যস্ফীতির এই টার্গেট অর্জন করতে পারব। আইএমএফ থেকে যে ঋণ নিয়েছি, তা আমাদের দেড় মাসের রেমিট্যান্সের সমান। যদিও চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার ধরা হয়েছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার ধরা হয়েছে ৬ শতাংশ।

বর্তমানে চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে দেশের অর্থনীতি। এই কঠিন সময়ে বাজেটে কঠিন কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু তা নেওয়া হয়নি বলে মনে করছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, বার্ষিক উন্নয়ন ও বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রায় যে চমক দেখানো হয়েছে তা উচ্চাভিলাষী, বাস্তবসম্মত নয়। শুক্রবার রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব পর্যালোচনা তুলে ধরা হয়। নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়েছে ব্যাপকভাবে মূল্যস্ফীতি কমে গিয়ে সেটা ৬ শতাংশ হবে। এই মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন। ৫২ শতাংশ ঋণ বেড়েছে গত ৭ বছরে- যার দায় বইতে হবে আগামী প্রজন্মকে। ৪২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যতার মধ্যে আছে, নতুন করে দরিদ্র হচ্ছে। ঢাকায় নতুন দরিদ্র হয়েছে ৫২ শতাংশ। বাজেটে সাধারণ মানুষের ওপর করের চাপ বাড়বে। দ্রব্যমূল্য কমাতে গেলে সরকারের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ কমাতে হবে, ডলারের বিপরীতে টাকার মান বাড়াতে হবে। লুটপাট বন্ধ করতে হবে। না হলে মূল্যস্ফীতি কমানো যাবে না। জিনিসপত্রের দাম কমানো সম্ভব হবে না।

এটা স্বীকার করতেই হবে, অনেক দিন থেকেই নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন। ভোজ্যতেল, আদা, রসুন, আলু ও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। বেড়েছে সব ধরনের শাকসবজির দামও। কেবল চালের বাজার স্থির রয়েছে। চিনি নিয়ে অরাজকতা চলছে অনেক দিন থেকে। কয়েক দফা চিনির দাম বাড়ানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে ভোজ্যতেলের দামও। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের চরম ব্যর্থতার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া এখন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। বাজারের নৈরাজ্য আর মুনাফাখোর সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে শ্রমজীবী, স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। ব্যবসায়ীদের খামখেয়ালিতে সাধারণ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত, শ্রমজীবী-মেহনতি মানুষের ঘরে ঘরে হাহাকার। একেক সময় একেক অজুহাত তুলে বিক্রেতারা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। বাজারে পর্যাপ্ত পণ্যের সরবরাহ আছে। তা সত্ত্বেও বাজারে পণ্যের দাম বাড়ছে। মূলত এটা বাজার ব্যবস্থাপনায় সমস্যা। দেশের সাধারণ মানুষ আশা করেছিল সরকার বাজেটে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেবে। মনে রাখতে হবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির ৬ শতাংশ নির্ধারণ করা আর মূল্যস্ফীতি কমানো এক কথা নয়। বাজারের ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভাঙার উদ্যোগ না নিয়ে, উচ্চমূল্য সামাল দিতে খাদ্য আমদানি কোনো সমাধান নয়। নিত্যপণ্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার ভেতর আনতে হবে এবং এর কোনো বিকল্প নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে