সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

অরক্ষিত রেলক্রসিং

যথাযথ উদ্যোগ জরুরি
নতুনধারা
  ০৪ জুন ২০২৩, ০০:০০

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, রেলপথে যাতায়াত অনেকটা নিরাপদ ও আরামদায়ক। কিন্তু যখন নানা কারণে যাতায়াতের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়, একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটে- তখন তা স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। বিশেষ করে, অসচেতনতা, অরক্ষিত রেলক্রসিংসহ নানা কারণে দুর্ঘটনা ঘটে এবং যেসব তথ্য সামনে আসে তা অত্যন্ত ভীতিপ্রদ। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, রাজধানীর খিলক্ষেত রেল ক্রসিংয়ের উত্তর পাশে ট্রেনের ধাক্কায় ২২ বছরের অজ্ঞাত যুবক নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। উলেস্নখ্য যে, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা রেলওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকালে খবর পেয়ে খিলক্ষেত রেল ক্রসিংয়ের উত্তর পাশ থেকে মরদেহ উদ্ধার করেন এবং পরে জানতে পারেন, ওই অজ্ঞাত যুবকটি অসতর্কভাবে রেললাইন দিয়ে হাঁটার সময় ট্রেনের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান।

আমরা বলতে চাই, এমন ঘটনা এই প্রথম নয়, এর আগেও বিভিন্ন সময়ে অসচেতনতার কারণে যেমন মৃতু্যর ঘটনা ঘটেছে, তেমনি অরক্ষিত রেলক্রসিংসহ নানা কারণে মৃতু্যর ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া একদিকে অরক্ষিত রেলক্রসিং, অন্যদিকে সুরক্ষিত রেলক্রসিংয়েও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছে বারবার। বলা দরকার, রেলওয়ের অনুমতি ছাড়াই যেসব রেললাইনের উপর দিয়ে অবৈধভাবে যানবাহন ও পথচারী চলাচল করছে, সেখানেও প্রায় প্রতিনিয়ত ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যত দ্রম্নত সম্ভব সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়া।

প্রসঙ্গত, এর আগে এমন তথ্য সামনে এসেছিল যে, সারাদেশে ২ হাজার ৮৭৭ কিলোমিটার রেলপথে বৈধ ক্রসিংয়ের সংখ্যা ১ হাজার ৪১২টি; এর মধ্যে ৯৪৬টিতে, অর্থাৎ ৬৭ শতাংশে গেট নেই! এমনকি নেই যান নিয়ন্ত্রণের কোনো কর্মীও। নেই সংকেত বাতি। এ ছাড়া রেললাইনের উপর দিয়ে স্থানীয় লোকজন অবৈধ রাস্তা নির্মাণ করায় এ হিসাবের বাইরে আরও বিপুলসংখ্যক মরণ ফাঁদ তৈরি হয়েছে বলেও জানা যায়। আমরা মনে করি, এই পরিস্থিতি কতটা ভয়ানক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে তা আমলে নেওয়ার বিকল্প থাকতে পারে না।

লক্ষণীয়, বাংলাদেশের রেলপথগুলো কতটা অরক্ষিত এবং এর নিরাপত্তাব্যবস্থা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ তা যেন স্পষ্ট হয়ে ওঠে বিভিন্ন সময়ের দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণে। রেলওয়ে এবং রেলওয়ে পুলিশের দুর্ঘটনা সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, অরক্ষিত ও সুরক্ষিত সব ধরনের রেলক্রসিংয়ে পথচারীরা সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির শিকার হচ্ছে। তবে রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের নিচে গাড়ি চাপাপড়া ও ধাক্কা খেয়ে ছিটকে প্রাণহানির ঘটনাও কম নয়। রেলওয়ের তথ্য অনুসারে, সারাদেশে অনুমোদনহীন রেলক্রসিংয়ের বেশির ভাগই স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সড়কে। আরও আছে পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি করপোরেশন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) সড়কে। সরকারের কমবেশি পাঁচটি সংস্থা রেললাইনের উপর সড়ক নির্মাণ করার কারণে রেলক্রসিং সৃষ্টি হয়েছে। আমরা মনে করি, অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে আমলে নেওয়া অপরিহার্য।

সর্বোপরি বলতে চাই, এর আগে জানা গিয়েছিল ৬৭ শতাংশ রেলক্রসিংই অরক্ষিত। ফলে যদি বেশির ভাগ অংশই অরক্ষিত থাকে তবে তা কতটা ভয়ানক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে সেটি আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। একের পর এক, নানা কারণে রেলদুর্ঘটনা ঘটছে, এগুলো যেমন আমলে নিতে হবে- তেমনি রেলক্রসিং সুরক্ষিত করা এবং দুর্ঘটনা এড়াতে সামগ্রিক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটবে এবং মানুষ চলে যাবে না ফেরার দেশে এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে রেলক্রসিং সুরক্ষিত করাসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে