সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ছড়িয়ে পড়ছে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট

প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন
নতুনধারা
  ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

করোনার সংক্রমণ সারা বিশ্বকে কতটা বিপর্যস্ত করেছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এছাড়া করোনার প্রভাবে দেশেও ভীতিপ্রদ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। প্রায় প্রত্যেকটি খাতে যেমন নেতিবাচক পরিস্থিতি পরিলক্ষিত হয়েছে, তেমনি মানুষের জীবন-যাপনের স্বাভাবিকতাও বিঘ্নিত হয়েছে। কিন্তু এটাও ঠিক যে, বাংলাদেশ সরকার করোনা পরিস্থিতিকে সাফল্যের সঙ্গেই মোকাবিলা করেছে। তারপর করোনা পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করে, প্রতিটি খাতে আবারও গতি ফিরে আসে। কিন্তু এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, করোনাভাইরাসের অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের একটি উপ-ধরনকে গুরুত্বপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আর গুরুত্বপূর্ণ বলে চিহ্নিত করার কারণ এটি 'দ্রম্নত ব্যাপকভাবে বিস্তার' লাভ করছে বলে জানা যাচ্ছে। সম্প্রতি জেএন. ১ নামে এই নতুন ভ্যারিয়েন্টটি ভারত, চীন, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাওয়া গেছে।

এটা লক্ষণীয় যে, যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মানুষের মধ্যে এখনো এতে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি কম। এছাড়া বর্তমানে প্রচলিত টিকার মাধ্যমেও এর থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া দরকার, সংস্থাটি হুশিয়ার করে বলেছে, এই শীতকালে কোভিড ও অন্যান্য সংক্রমণ বাড়তে পারে। ফলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হুশিয়ারির বিষয়টি বিবেচনা করে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টদের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। এটাও আমলে নেওয়া দরকার, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন দেশে ফ্লু, মাঝারি ঠান্ডা এবং নিউমোনিয়াসহ শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ বাড়ছে। যে ভাইরাসের কারণে কোভিড হয়, সেটি ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং অনেক সময় এর কারণে নতুন ভ্যারিয়েন্টের উদ্ভব হচ্ছে। গত বেশ কিছুদিন ধরেই বিশ্ব জুড়ে অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টটি সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত করেছে। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।

এটাও বলা দরকার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জেএন.১ ভ্যারিয়েন্টসহ বর্তমানে অমিক্রনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এমন গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে কাজ করছে। যদিও এগুলোর মধ্যে কোনোটিই এখন পর্যন্ত উদ্বেগের কারণ হয়নি। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যখন এটা বলছে যে, জেএন.১ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খুব দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়ছে তখন তা এড়ানোর সুযোগ নেই। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র-সিডিসির তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে এই ভ্যারিয়েন্টটি বর্তমানে সবচেয়ে দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়া ভ্যারিয়েন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১৫-২৯ শতাংশ সংক্রমণ এখন এর কারণে হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সংস্থা এনএইচএস বলছে, ল্যাবে ধরা পড়া কোভিড পজিটিভ ঘটনার মধ্যে প্রায় সাত শতাংশ হচ্ছে জেএন.১ এর কারণে। এছাড়া তারা বলছে জেএন.১ সব এলাকায় দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়ছে, কারণ এর একটি অতিরিক্ত স্পাইক প্রোটিন রয়েছে। যদিও নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের উৎপত্তি বিএ.২.৮৬ ভ্যারিয়েন্ট থেকে, তবে ওই ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় এটি দ্রম্নত ছড়ায়।

আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে দেশের সংশ্লিষ্টদেরও তৎপর হতে হবে এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতেও উদ্যোগী হতে হবে। এই বিষয়টিও মনে রাখা দরকার, এর আগে এমন বিষয় বার বার বলা হয়েছে যে, সংক্রমণ কমায় স্বাস্থ্যবিধি পালনে শিথিলতারও কোনো অবকাশ নেই। স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে উদাসীনতা নয়, বরং স্বাস্থ্যবিধি পালনে সবার আরও সচেতন হওয়া জরুরি। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, সচেতনতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, এমনিতেই করোনাভাইরাস বিলুপ্ত হয়নি, আবার করোনাভাইরাসের অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের একটি উপ-ধরনকে গুরুত্বপূর্ণ বলে চিহ্নিত করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ফলে সার্বিক এই পরিস্থিতি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। অন্যদিকে যেহেতু এটি 'দ্রম্নত ব্যাপকভাবে বিস্তার' লাভ করছে বলে জানা যাচ্ছে, তখন করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নেরও বিকল্প নেই। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সামগ্রিকভাবে করোনা মোকাবিলায় যথাযথ উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে