রোববার, ১১ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

রাজধানী ঢাকায় বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর উদ্যোগ জরুরি

  ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
রাজধানী ঢাকায় বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর উদ্যোগ জরুরি

কোনোভাবেই দূষণমুক্ত হচ্ছে না রাজধানী ঢাকা। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত খবরে বায়ুদূষণ সংক্রান্ত যেসব তথ্য উঠে আসে, তা উদ্বেগজনক। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, রাজধানী ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা ভয়াবহ অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় উপনীত হয়েছে। ঢাকা এখন বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর মধ্যে একটি। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, প্রায়ই ঢাকা শহরের বায়ুদূষণের মাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া দরকার, গত বছরে ডিসেম্বর মাসে এক দিনও নির্মল বায়ু পায়নি রাজধানীবাসী- যা কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই। সঙ্গত কারণেই সৃষ্ট পরিস্থিতি অনুধাবন করা এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখা জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।

লক্ষণীয়, দূষণসংক্রান্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপসের এক জরিপে দেখা গেছে যে, ডিসেম্বরে যতটা বায়ুদূষণ ছিল, তা গত ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত বছরের ডিসেম্বরে বায়ুর গড় মান ছিল ২৮৮। ২০১৬ সালের পর থেকে বায়ুর মান এত খারাপ কখনোই হয়নি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বায়ুর মান ছিল ১৯৫। গত ৯ বছরে ডিসেম্বরে ঢাকার বায়ুর মান ছিল ২১৯ দশমিক ৫৪। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এই মান ৩১ ভাগের বেশি বেড়ে গেছে। আর ২০২৩ সালের তুলনায় বেড়েছে ২৬ ভাগেরও বেশি। এছাড়া, বিশ্বের ১২২ নগরীর মধ্যে গত শুক্রবার সকালে বায়ুদূষণে চতুর্থ স্থানে ছিল ঢাকার অবস্থান। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আইকিউ এয়ারের মানসূচকে ঢাকার বায়ুর মান ছিল ২১৯। বায়ুর এই মানকে 'খুব অস্বাস্থ্যকর' হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

আমরা বলতে চাই, বায়ুসংক্রান্ত যেসব তথ্য সামনে আসছে, তা যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি বিভিন্ন সময়ে বায়ুদূষণ সংক্রান্ত যেসব তথ্য উঠে এসেছে- সেগুলোও এড়ানোর সুযোগ নেই। প্রসঙ্গত, বায়ুদূষণ কতটা ভয়ানক হতে পারে সেটা আমলে নেওয়ার পাশাপাশি বিবেচনায় রাখা দরকার, এর আগে এমনও জানা গিয়েছিল, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় বছরে বিপুলসংখ্যক মানুষের মৃতু্য হয়। আমরা এটাও বলতে চাই, বায়ুদূষণে প্রাণহানি শুধু নয়, নানা ধরনের অসুখ-বিসুখসহ জনসাধারণের জীবনে বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এটাও জানা যায় যে, সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও কার্যকর সমাধান, যেমন ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ, পাওয়ার স্টেশন প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে। ফলে, এই বিষয়গুলো আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। স্মর্তব্য, রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ সক্রান্ত উদ্বেগ বিভিন্ন সময়ে সামনে এসেছে। এর আগে এমনটিও আলোচনায় এসেছিল যে, বায়ুদূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী ইটভাটাগুলো। অন্যদিকে, বায়ুদূষণের কারণ হিসেবে নির্মাণকাজ, যানবাহন, সড়ক ও মাটি থেকে সৃষ্ট ধুলার কারণে, বিভিন্ন জিনিসপত্রসহ পস্নাস্টিক পোড়ানোসহ বিভিন্ন কারণ উঠে এসেছে নানা সময়ে।

বলা দরকার, বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। প্রতিষ্ঠানটি ঢাকাবাসীর উদ্দেশে পরামর্শ, বাইরে বের হলে সুস্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে, খোলা স্থানে ব্যায়াম করা যাবে না এবং ঘরের জানালা বন্ধ রাখতে হবে। ফলে, এই পরামর্শগুলো আমলে নিয়ে জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে। প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে। অন্যদিকে, বায়ুদূষণের কারণগুলো বিচার বিশ্লেষণ করে বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। বলা দরকার, গত রোববার সকালে ঢাকার বায়ুর মান ছিল ৪৫২, পরে তা আরও বেড়েছিল। বায়ুর মান ৩০০ থেকে বেশি হলেই তাকে দুর্যোগপূর্ণ বলে মনে করা হয়। রোববার ঢাকার দূষিত ১০টি স্থানের প্রতিটির মানই ছিল দুর্যোগপূর্ণ। এর মধ্যে গুলশানের দুটি স্থানের স্কোর ছিল ৭০০'র উপরে। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়ার কোনো বিকল্প থাকতে পারে না।

সর্বোপরি আমরা উলেস্নখ করতে চাই, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ু দূষণের ফলে- শিশু, বৃদ্ধ, গর্ভবতী নারী এবং দীর্ঘমেয়াদে অসুস্থ মানুষ বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, বন্ধ্যত্ব এবং দীর্ঘমেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়। ফলে, এই বিষয়গুলো এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। বায়ুদূষণ বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরিবেশগত স্বাস্থ্য হুমকি এর আগে এটাও জানা গিয়েছিল। ফলে, বায়ুর মানের বিষয়টি আমলে নিতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে বায়ুদূষণ রোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে