মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

  ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

সেলিম আল দীন (১৮ আগস্ট, ১৯৪৯-১৪ জানুয়ারি, ২০০৮) একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশি নাট্যকার ও গবেষক। তিনি স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। নাটকের আঙ্গিক ও ভাষার ওপর করেছেন গবেষণা। এছাড়া, বাংলা নাটকের শিকড় সন্ধানী এ নাট্যকার ঐতিহ্যবাহী বাংলা নাট্যের বিষয় ও আঙ্গিক নিজ নাট্যে প্রয়োগের মাধ্যমে বাংলা নাটকের আপন বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন। সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০২৩ সালে তাকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়। নাট্যকার সেলিম আল দীন জন্মেছিলেন ১৯৪৯ সালের ১৮ আগস্ট ফেনীর সোনাগাজী থানার সেনেরখীল গ্রামে। তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ফেনী, চট্টগ্রাম, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও রংপুরের বিভিন্ন স্থানে। বাবার চাকরির সূত্রে এসব জায়গার বিভিন্ন স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। ১৯৬৪ সালে ফেনীর সেনেরখীলের মঙ্গলকান্দি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৬৬ সালে ফেনী কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে গিয়ে ভর্তি হন টাঙ্গাইলের করোটিয়ায় সাদত কলেজে। সেখান থেকে স্নাতক পাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৫ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মধ্যযুগের বাংলা নাট্যের ওপর গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন সেলিম আল দীন। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর লেখক হওয়ার বিষয়ে পাকাপোক্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তিনি। লেখক হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৬৮ সালে, কবি আহসান হাবীব সম্পাদিত দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকার মাধ্যমে। আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ মানুষকে নিয়ে লেখা তার বাংলা প্রবন্ধ নিগ্রো সাহিত্য ছাপা হয় ওই পত্রিকায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই নাটকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন সেলিম আল দীন, যুক্ত হন ঢাকা থিয়েটারে। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শেষে যোগ দেন বিজ্ঞাপনী সংস্থা বিটপীতে, কপিরাইটার হিসেবে। ১৯৭৪ সালে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রতিষ্ঠা সেলিম আল দীনের হাত ধরেই। তার সম্পাদনায় 'থিয়েটার স্ট্যাডিজ' নামে পত্রিকা প্রকাশিত হতো নাট্যতত্ত্ব বিভাগ থেকে। তার অধীনে অনেক গবেষক গবেষণা করে এম.ফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি শুধু নাটক রচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি, বাংলা ভাষার একমাত্র নাট্যবিষয়ক কোষগ্রন্থ বাংলা নাট্যকোষ সংগ্রহ, সংকলন, প্রণয়ন ও সম্পাদনা করেছেন। তিনি ২০০৮ সালের ১৪ জানুয়ারি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃতু্যবরণ করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে