রোববার, ১১ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২
জনসাধারণের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনা করতে হবে

চিকিৎসা ব্যয়ের বোঝা

  ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
চিকিৎসা ব্যয়ের বোঝা

জনসংখ্যাবহুল দেশ বাংলাদেশ। স্বাভাবিকভাবেই জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা চ্যালেঞ্জের বিষয়। এছাড়া, রোগীর তুলনায় চিকিৎসক সংকট আছে। আছে নানাবিধ সমস্যা। এমন পরিস্থিতিতে যদি আবার চিকিৎসা ব্যয় বাড়ে, তবে তা সামগ্রিকভাবেই উদ্বেগজনক বলেই প্রতীয়মান হয়- যা আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, ওষুধে স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট বাড়িয়েছে সরকার। একই নীতিতে ভ্যাট বাড়তে পারে বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামেও। বেড়েছে ডলারের দাম। আর জানা যাচ্ছে, এতে আরেক দফা বাড়তে পারে চিকিৎসা ব্যয়। যদিও ঔষধ প্রশাসন বলছে, রোগীর ওপর চাপ পড়ে, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। স্বল্পমূল্যে নিরাপদ ও টেকসই চিকিৎসা সরঞ্জাম নিশ্চিত করতে চায় সংস্থাটি। এমন পরিস্থিতিতে এসব পণ্যের দর পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। উলেস্নখ্য, সোমবার ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে মহাপরিচালক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে মেডিকেল ডিভাইস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং অফথালমিক প্রোডাক্টস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের বৈঠক হয়েছে। সেখানে ব্যবসায়ীরা হার্টের স্টেন্ট (রিং), চোখের লেন্সসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামের দাম পুনর্বিবেচনার দাবি জানান। এছাড়া, নতুন করে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট বাড়ানোর আশঙ্কা থেকে এমন দাবি তাদের, এটাও জানা গেছে। অন্যদিকে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের ক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট ২ দশমিক ৪ থেকে বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। ভ্যাট বৃদ্ধির কারণে ওষুধের দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বলা দরকার, দেশের মানুষের চিকিৎসার ব্যয়ভার কমাতে রেফারের সিস্টেম চালু, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম নির্ধারণ, ওষুধের দাম কমানো, যৌক্তিক ডায়াগনস্টিক টেস্ট, দরিদ্র রোগীদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন। বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবাকে জনমুখী, সহজলভ্য ও সর্বজনীন করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাবের লক্ষ্যে গত ১৭ অক্টোবর ১২ সদস্যের একটি হেলথ সেক্টর রিফর্মও কমিশন গঠন করে অন্তবর্তীকালীন সরকার। এছাড়া, রোগীর ওপর চিকিৎসা ব্যয়ের বোঝা কমানোর দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন এমনটি জানা যাচ্ছে। ফলে, যখন ওষুধে স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট বাড়িয়েছে সরকার। একই নীতিতে ভ্যাট বাড়তে পারে বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামেও। আর এতে আরেক দফা বাড়তে পারে চিকিৎসা ব্যয়- এই আলোচনা যখন সামনে আসছে তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। স্মর্তব্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২২ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশিরা তাদের মোট স্বাস্থ্যসেবা ব্যয়ের ৭২.৫ শতাংশই নিজেরা বহন করেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস)-এর তথ্যানুসারে, চিকিৎসার এই ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে সে বছর প্রায় ৬১ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের মুখে পড়েছেন।

আমরা বলতে চাই, চিকিৎসা ব্যয়ের কারণে দরিদ্র হয়ে যাওয়াসহ নানাবিধ পরিস্থিতির খবর বিভিন্ন সময়ে এসেছে। ফলে, আরেক দফা যদি চিকিৎসা ব্যয় বাড়ে তবে সেই পরিস্থিতি কিরূপ হবে এটা যেমন সংশ্লিষ্টদের আমলে নিতে হবে, তেমনিভাবে জনসাধারণের আর্থিক সামর্থ্যের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। উলেস্নখ্য, মেডিকেল ডিভাইস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বলেছেন, চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানিতে নিবন্ধন প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা দূর করা। সর্বোচ্চ খুচরামূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়ার সহজীকরণ, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর এমআরপিতে অন্তর্ভুক্ত করা এবং ডলারের মূল্য অনুযায়ী দাম সমন্বয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ভ্যাট নিয়েও কথা বলেছেন। তার বক্তব্য, বর্তমানে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এখন যদি সেটি বেড়ে যায়, তাহলে দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় থাকবে না। অন্যদিকে, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর বলেছে, মূল্য না বাড়ানোর ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি এড়ানোর সুযোগ নেই।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সুচিকিৎসার বিষয়টি যেমন নিশ্চিত করা জরুরি, তেমনিভাবে চিকিৎসা ব্যয়ের ক্ষেত্রে জনসাধারণের আর্থিক সামর্থ্যের বিষয়টি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। সঙ্গত কারণেই সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত হবে এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে