সম্প্রতি প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, জ্বালানি খাত বিপর্যয়ের পথে। ফলে, এই বিষয় এড়ানোর সুযোগ নেই। বলা দরকার, দেশের গ্যাস সংকট সমাধানের অন্যতম ভরসা হিসেবে মনে করা হয় বঙ্গোপসাগরকে। কিন্তু বিগত সরকার গত এক দশকও এই অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। অনেক পথ পেরিয়ে গত মার্চে আন্তর্জাতিক টেন্ডার ডাকে পেট্রোবাংলা। সাতটি বিদেশি তেল-গ্যাস কোম্পানি (আইওসি) দরপত্রের নথি কিনেছিল। কিন্তু কেউ প্রস্তাব জমা দেয়নি। বিদেশি কোম্পানিগুলোর এই অনাগ্রহ কেন, তা জানতে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে চিঠি দিয়েছিল সরকারের মালিকানাধীন জাতীয় এই তেল কোম্পানি। তারও জবাব আসেনি। আর সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দর প্রক্রিয়ায় কোনো বিদেশি কোম্পানির অংশ না নেওয়া দেশের জ্বালানি খাতের জন্য দুঃসংবাদ।
আমরা মনে করি, জ্বালানি খাতের জন্য দুঃসংবাদ বা যে কোনো ধরনের শঙ্কাজনক পরিস্থিতি এড়ানোর সুযোগ নেই। ফলে, সামগ্রিক বিষয় আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে এটা উঠে এসেছে যে, বিশেষজ্ঞদের মতে দেশে রাজনৈতিক সরকার না থাকায় বিনিয়োগ চুক্তি নিয়ে শঙ্কিত আইওসি। এছাড়া, এটাও সামনে আসছে- বিদেশি কোম্পানির অনাগ্রহ সংকটে থাকা দেশের জ্বালানি খাতকে আরও বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবে। ব্যয়বহুল এলএনজির ওপর নির্ভরশীলতা আরও বাড়বে। ফলে, এই বিষয়গুলো আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ সমীচীন বলেই আমরা মনে করি।
তথ্য মতে, বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশ ২৬ বস্নকে ভাগ করা হয়েছে- যার মধ্যে অগভীর অংশে বস্নক ১১টি এবং গভীর সমুদ্রে আছে ১৫টি বস্নক। চারটি বিদেশি কোম্পানি কাজ শুরু করলেও তিনটি ছেড়ে গেছে সময়ের আগেই। এখন শুধু ভারতীয় কোম্পানি ওএনজিসি অগভীর সমুদ্রের দুটি বস্নকে কাজ করছে। প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে ভারতের সঙ্গে ও ২০১৪ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হয়। এর পরও বাংলাদেশ সেভাবে সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান শুরু করতে পারেনি। এছাড়া, এর মধ্যে একাধিকবার আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের উদ্যোগ নেওয়া হলেও আইওসিগুলোর কাছ থেকে তেমন সাড়া মেলেনি। সর্বশেষ দরপত্র ডাকা হয়েছিল ২০১৬ সালে। এরপর ২০১৯ সালে নতুন পিএসসি করা হলেও দরপত্র ডাকা হয়নি। পরে একটি আন্তর্জাতিক কোম্পানিকে পিএসসি পর্যালোচনার কাজে নিয়োগ দেয় পেট্রোবাংলা।
আমরা মনে করি, সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিতে হবে সংশ্লিষ্টদের। একজন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বলছেন, অনেক কোম্পানির আগ্রহের কথা শোনা গিয়েছিল। কেউ দরপত্র জমা দেয়নি। এখন আলোচনাও করতে চাচ্ছে না- এটা বেশ অবাক করা বিষয়। হয়তো দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বিদেশি কোম্পানিগুলো বিনিয়োগে আস্থা রাখতে পারছে না বলেও তিনি মত দেন। ফলে, এই বিষয়গুলো এড়ানো যাবে না।
লক্ষণীয়, দেশে দীর্ঘদিন ধরেই গ্যাসের সংকট চলে আসছে। বর্তমানে দেশে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা অন্তত ৪০০ কোটি ঘনফুট। এর বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে ২৭৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে দেশীয় ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে গড়ে ১৯০ কোটি ঘনফুট। আমদানি করা এলএনজি থেকে মিলছে ৮৫ কোটি ঘনফুট। এছাড়া, জানা যাচ্ছে ২০৩০ সালে গ্যাসের চাহিদা দাঁড়াবে দৈনিক ৬৬৫ কোটি ঘনফুট। এদিকে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদনও দিন দিন কমছে। গত দুই বছরে প্রায় ৫০ কোটি ঘনফুট দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমেছে। যদিও সরকার আগামী চার-পাঁচ বছরে স্থলভাগে শতাধিক কূপ খননের পরিকল্পনা নিয়েছে, যেগুলো সফল হলে আরও ৫০ থেকে ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন বাড়তে পারে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি বর্তমান কূপগুলোর উৎপাদনও কমবে। তাই গ্যাস চাহিদা পূরণের পেট্রোবাংলার অন্যতম ভরসা সমুদ্রের বস্নকগুলো। ফলে, এই বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস পাওয়ার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের জ্বালানি সংকট মেটাতে এই গ্যাস খুবই দরকার- এটিসহ সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সব ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।