রোববার, ১১ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

পাঁচ ঝুঁকিতে বাংলাদেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ জরুরি

  ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
পাঁচ ঝুঁকিতে বাংলাদেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ জরুরি

দেশের মানুষ মূল্যস্ফীতির তীব্র চাপ অনুভব করছে। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে একটি পণ্য কিনলে আরেকটি কেনার বাজেট থাকছে না। এমন আলোচনা বারবার সামনে এসেছে- যা রীতিমতো উদ্বেগজনক। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, চলতি বছর বাংলাদেশের জন্য পাঁচটি বড় ঝুঁঁকি চিহ্নিত করেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডবিস্নউইএফ)। যার মধ্যে সবচেয়ে বড় ঝুঁঁকি হলো মূল্যস্ফীতি। ডবিস্নউইএফের বৈশ্বিক ঝুঁঁকি প্রতিবেদন-২০২৫ এ এমন তথ্য উঠে এসেছে।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম যখন বাংলাদেশের জন্য পাঁচটি বড় ঝুঁঁকি চিহ্নিত করেছে, তখন প্রত্যেকটি ঝুঁকির বিষয় আমলে নেওয়ার পাশাপাশি সবচেয়ে বড় ঝুঁকি মূল্যস্ফীতিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি কমবে। আর এ কথাও বলার অপেক্ষা রাখে না, অর্থনীতির গতি কমলে সামগ্রিক ক্ষেত্রেই তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ফলে, সংশ্লিষ্টদের এটা অনুধাবন করা দরকার- অর্থনীতির গতি কমার কারণ হলো রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং বিনিয়োগ ও শিল্প খাতে ভাটার টান। আর এর বিপরীতে যখন মূল্যস্ফীতি থাকবে চড়া এবং সরকারের মূল্যস্ফীতি কমানোর লক্ষ্য পূরণ হবে না; তখন সৃষ্ট পরিস্থিতি এড়ানোর সুযোগ নেই।

প্রসঙ্গত, দেশভিত্তিক প্রধান ঝুঁঁকিগুলো চিহ্নিত করতে নির্বাহী মতামত জরিপ (ইওএস) চালায় ডবিস্নউইএফ। আর এটি মূলত ধারণাভিত্তিক জরিপ। তারা অংশগ্রহণকারীদের কাছে জানতে চান, আগামী দুই বছরে দেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কোনগুলো। অংশগ্রহণকারীদের ৩৪টি ঝুঁঁকির তালিকা দেওয়া হয়। সেখান থেকে পাঁচটি প্রধান ঝুঁঁকি চিহ্নিত করেন। এবারে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ঝুঁঁকির যে পাঁচটি ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছে ডবিস্নউইএফ- তাতে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে আরও চারটি ঝুঁঁকি হলো- চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া, দূষণ, বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক সুযোগের অভাব এবং অর্থনৈতিক নিম্নমুখিতা। এছাড়া, প্রতিবেদনে বৈশ্বিক পরিসরে চলতি বছরের জন্য ১০টি প্রধান ঝুঁঁকির ক্ষেত্রও চিহ্নিত করা হয়েছে। জলবায়ুগত, সামাজিক ও অর্থনৈতিকসহ সাম্প্রতিক বছরগুলোর অন্যান্য উদ্বেগকে ছাপিয়ে বিশ্বের জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁঁকি হয়ে দাঁড়াতে পারে রাষ্ট্রভিত্তিক সশস্ত্র সংঘাত। অথচ দুই বছর আগেও এটিকে বড় ঝুঁঁকি হিসেবে দেখা হতো না।

আমরা বলতে চাই, ঝুঁকির বিষয়গুলোকে বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশ-সংশ্লিষ্টদের সর্বাত্মক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া, দূষণ, বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক সুযোগের অভাব এবং অর্থনৈতিক নিম্নমুখিতা- এই বিষয়গুলো যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে না পারলে সামগ্রিক অগ্রগতি নিশ্চিত হবে না। আর এটাও বলা দরকার, সাম্প্রতিককালে মূল্যস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে। মূল্যস্ফীতির কারণ নির্ণয়ে যেমন বিশ্ববাজারের প্রভাব আছে, তেমনি অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার ত্রম্নটির বিষয়ও আলোচিত। যার মধ্যে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নির্ধারণ না হওয়া, সিন্ডিকেট, মধ্যস্বত্বভোগী- এসব বিষয়ও সামনে এসেছে বিভিন্ন সময়ে। মূল্যস্ফীতির বিষয়ে স্মর্তব্য যে, বিশ্লেষকরা মনে করেন, মূল্যস্ফীতি এক ধরনের কর; ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার ওপর চাপ সৃষ্টি করে মূল্যস্ফীতি। কিন্তু এটা এড়ানো যাবে না, আয় বৃদ্ধির তুলনায় মূল্যস্ফীতির হার বেশি হলে গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষ সংসার চালাতে ভোগান্তিতে পড়েন। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে, নেতিবাচক প্রভাব পড়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনে। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের জন্য যে পাঁচটি বড় ঝুঁঁকি চিহ্নিত করেছে ডবিস্নউইএফ- তা বিবেচনায় রেখে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি মূল্যস্ফীতির বিষয়ে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।

সর্বোপরি, পাঁচ ঝুঁঁকিতে বাংলাদেশ। এর শীর্ষে হলো মূল্যস্ফীতি- এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে যত দ্রম্নত সম্ভব কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে