রোববার, ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

থামছে না আত্মহনন মানসিক স্বাস্থ্যে নজর দিতে হবে

  ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
থামছে না আত্মহনন মানসিক স্বাস্থ্যে নজর দিতে হবে

বিগত বছর অভিমান, প্রেম, পড়াশোনার চাপ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও মানসিক অস্থিরতায় ভুগে ৩১০ শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪৬ দশমিক ১ শতাংশই মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী। সম্প্রতি বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের এক সমীক্ষায় আত্মহননের এ চিত্র উঠে এসেছে। সমীক্ষা বলছে, সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছেন মেয়ে শিক্ষার্থীরা। এ হার ৬১ শতাংশ। আত্মহননের এই চিত্র স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগজনক। যদিও এর আগের বছরের চেয়ে গত বছর আত্মহত্যার সংখ্যা কমেছে। ২০২৩ সালে ৫১৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন। আর ২০২২ সালে এ সংখ্যা ছিল ৫৩২। যখন শিক্ষার্থীদের আত্মহনন সংক্রান্ত এসব তথ্য উঠে আসছে, তখন আত্মহত্যাপ্রবণ হওয়ার কারণগুলোকে বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। বেশি আত্মহত্যা করেছেন মেয়ে শিক্ষার্থীরা- এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্লেষকরা বলছেন, অনিয়ন্ত্রিত আবেগ ও তুলনামূলক দুর্বল মানসিক স্থিতিশীলতার কারণে মেয়ে শিক্ষার্থীরা সহজে হতাশায় ডুবে এ পথে পা বাড়াচ্ছে।

আত্মহত্যার প্রবণতা কতটা ভীতিকর বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে তা আমলে নেওয়া দরকার। কারণ, আত্মহত্যা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই। উলেস্নখ্য, ২০২৪ সালে দেশে আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে আঁচল ফাউন্ডেশনের করা জরিপে যেসব তথ্য উঠে এসেছে, তা আমলে নিয়ে আত্মহত্যা প্রতিরোধে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সহায়তা বাড়ানোও জরুরি। এছাড়া, শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ আবশ্যক।

এমন আলোচনাও উঠে আসছে যে, উঠতি বয়সে অতিআবেগ, পারিবারিক চাপ, সমাজের প্রত্যাশা, কর্মজীবনের অনিশ্চয়তা ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের জটিলতা শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থাকে বিপর্যস্ত করে তুলছে। এছাড়া, প্রতিটি আত্মহনন পরিবার বা শিক্ষাঙ্গনের জন্য শোকের কারণ হলেও এটি শিক্ষা ও মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বড় ধরনের ফাঁকফোকরকে ইঙ্গিত করে। ফলে, এই বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে আত্মহত্যা প্রতিরোধে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাথথ বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে। শিক্ষার্থী আত্মহত্যার ঘটনার পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন স্তরে আত্মহত্যার ঘটনাও এড়ানো যাবে না। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, দেশে তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। যেখানে শিক্ষাজীবন শেষ করার পর চাকরি না পাওয়া, জীবনের প্রতি হতাশা, প্রেমে ব্যর্থতা, নারীদের ক্ষেত্রে ধর্ষণের শিকার হওয়ায় সামাজিক লজ্জা, বিয়ের পর যৌতুকের টাকার জোগান দিতে না পারা, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, চরম দারিদ্র্য- এরকম নানা বিষয়কে কেন্দ্র করেও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে।

এবারের সমীক্ষায় আত্মহত্যার কারণ সংক্রান্ত যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে তা যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি এর আগে শিক্ষার্থী আত্মহত্যার ঘটনাসহ সমাজের নানা বয়সি শ্রেণিপেশার মানুষের আত্মহত্যার ঘটনাগুলো আমলে নিয়ে আত্মহত্যা প্রতিরোধে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

২০২৩ সাল এবং ২০২২ সালের চেয়ে গত বছর আত্মহননের ঘটনা কম ঘটার তথ্য মিলেছে। এ প্রসঙ্গে আঁচল ফাউন্ডেশনের একজন কার্যনির্বাহী সদস্য বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আত্মহত্যার সংবাদ গণমাধ্যমে কম এসেছে বলে গবেষকদের ধারণা। অর্থাৎ আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বেশিও হতে পারে।

আমরা মনে করি, জীবনবোধ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের ব্যাপকভাবে সচেতন করা আবশ্যক। এছাড়া, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে ধারণা কম এই আলোচনাও উঠে এসেছে। ফলে, মানসিক স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি সচেতনতা বাড়ানোর কার্যক্রম দরকার। প্রয়োজনীয় প্রচার-প্রচারণা বৃদ্ধি করতে হবে। আত্মহত্যা প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি, জীবন সম্পর্কে উপলব্ধি এবং জীবনের গুরুত্ব অনুধাবন করা, মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোসহ আত্মহত্যা প্রতিরোধে গ্রহণযোগ্য উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে