দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি অর্জনে শিল্প উন্নয়ন জরুরি। শিল্পোন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি, উৎসাহ, প্রণোদনার পাশাপাশি যে কোনো ধরনের সংকট আমলে নিয়ে তার সমাধানে পদক্ষেপ নিতে হবে। সম্প্রতি প্রকাশিত খবরে জানা যায়, শিল্পোদ্যোক্তাদের উদ্দেশে অনেক উৎসাহব্যঞ্জক কথা, নানা প্রণোদনা ও করছাড়ের আশ্বাস, চাওয়ামাত্রই বিদু্যৎ, গ্যাস ও পানিসহ সব ইউটিলিটি দেওয়ার প্রতিশ্রম্নতি দেওয়া হয়। কিন্তু উদ্যোক্তাদের মাঠে নামিয়ে সেবার বদলে শুধুই হয়রানি-দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়েছে। তথ্য মতে, উচ্চ সুদে ব্যাংক ঋণ নিয়ে যখন মাঝপথে আটকা; চালু হচ্ছে না শিল্প, তখন ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি দিতে চাপ। আর একপর্যায়ে খেলাপির তকমা। এভাবে অনেক উদ্যোক্তা শিল্প চালু না করেই এখন ঋণখেলাপি হওয়ার খাতায় নাম লিখিয়েছে!
শিল্প উদ্যোক্তা তৈরি করা শিল্প উন্নয়নের ক্ষেত্রে জরুরি বিষয়। কিন্তু যখন শিল্প চালু না হতেই ঋণখেলাপিসহ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরির খবর জানা যায় তখন এটি উদ্বেগজনক। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এর সমাধানে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে। জানা যাচ্ছে, দেশের বিভিন্ন স্থানের উদ্যোক্তারা লোকসানে জেরবার হওয়ার উপক্রম। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে সরকারি-বেসরকারি উভয় ধরনের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের শিল্পোদ্যোক্তারা। কারণ তারা না পাচ্ছেন গ্যাস, বিদু্যৎ, পানির মতো ইউটিলিটি সুবিধা, না পাচ্ছেন শিল্প চালুর সুযোগ। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার- সৃষ্ট পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে এর সমাধানে কাজ করা। কেননা, উদ্যোক্তারা আশাহত হলে তা সার্বিকভাবে নেতিবাচক।
'সরকার যখন কমিটমেন্ট করে, তখন দায়িত্ব হয়ে যায় এটাকে সুরক্ষা দেওয়া। সরকারের প্রতিশ্রম্নতির ওপর ভিত্তি করেই ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগগুলো করছেন।' এই বিষয়গুলো আলোচনায় আসছে যা আমলে নিতে হবে। প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের শুরুতেই দেশের বৃহত্তম শিল্পনগরী চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (এনএসইজেড) কারখানা করার জন্য জমি চায় দেশের বড় শিল্পগোষ্ঠীগুলো। ওই সময় থেকেই জমি চেয়ে আবেদন করে জাপানে ইস্পাত খাতে সবচেয়ে বড় কম্পানি নিপ্পন স্টিল, বৃহৎ রং কম্পানি এশিয়ান পেইন্টস ও বার্জার, চীনের জিনউয়ান রাসায়নিক কারখানা, ভারতের বিখ্যাত আদানি গ্রম্নপের মতো বিশ্বের বড় বড় কোম্পানি। এসব কোম্পানির মধ্যে বেশিরভাগই জমি ইজারা দেওয়া হয়েছে। তখন তাদের বিনিয়োগে বড় আকর্ষণ দেখানো হয় চার লেনের রাস্তা হচ্ছে। বিদু্যৎ চলে এসেছে। গ্যাসের লাইন আসছে। পানির জন্য ফেনী ও মহুরী নদীতে বড় প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। আর এসব মুখরোচক কথা শুনে, ব্যাংক থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেন উদ্যোক্তারা। অথচ কারখানা স্থাপনের পর বছরের পর বছর চলে গেলেও এসব সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে, কারখানা চালু করার আগেই ওই সব প্রতিষ্ঠান এখন খেলাপি হওয়ার পথে।
সর্বোপরি, বিদ্যমান ব্যবসায় যে সমস্যা আছে, তা সমাধান না হলে নতুন বিনিয়োগকারী আসবে না এমন আলোচনাও উঠে আসছে। বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী কোনো গ্রাহক ছয় মাস কিস্তি দিতে না পারলে তাকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু ব্যবসায় মন্দার কারণে ঠিকমতো উৎপাদনে যেতে পারছে না বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান। আর যারা নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠা করেও তা চালু করতে পারছেন না, তারাও অনাকাঙ্ক্ষিত লোকসানের মুখে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি সুখকর নয়। শিল্প চালুর আগেই ঋণখেলাপিসহ যে বিষয়গুলো সামনে আসছে তা আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টরা দ্রম্নত এর সমাধানে করণীয় র্নিধারণ ও তার বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন এমনটি কাম্য।