রোববার, ১১ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

আইসিটি উন্নয়ন ও সম্ভাবনা :প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

আইসিটি বাংলাদেশের অর্থনীতি, সমাজ ও শাসন ব্যবস্থাকে রূপান্তরিত করার বিশাল সম্ভাবনা রাখে। অবকাঠামো, শিক্ষা এবং ডিজিটাল সেবায় বিনিয়োগ অব্যাহত রাখলে বাংলাদেশ প্রযুক্তির শক্তি ব্যবহার করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নত জীবনযাত্রা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে।
ড. হাজেরা খাতুন
  ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
আইসিটি উন্নয়ন ও সম্ভাবনা :প্রেক্ষিত বাংলাদেশ
আইসিটি উন্নয়ন ও সম্ভাবনা :প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক উন্নয়ন কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশেও আইসিটি গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাবনা বহন করছে- যা দেশের ভবিষ্যৎকে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি এবং বিভিন্ন খাতে আধুনিকীকরণের মাধ্যমে রূপ দিতে পারে। নানা চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও, বাংলাদেশ আইসিটি উন্নয়নে ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করেছে এবং এই খাতে দেশের ভবিষ্যৎ আশাপ্রদ। এই নিবন্ধে বাংলাদেশের আইসিটি উন্নয়ন, বিস্তারের সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে; বিশেষ করে অবকাঠামো, শিক্ষা ও সরকারি উদ্যোগ এবং যে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা প্রয়োজন সেগুলোর ওপর।

বাংলাদেশের আইসিটির পরিপ্রেক্ষিত :গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে আইসিটি গ্রহণে দ্রম্নত বৃদ্ধি ঘটেছে। মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, সফটওয়্যার উন্নয়ন এবং ই-কমার্স পস্ন্যাটফর্মের মতো ডিজিটাল প্রযুক্তি নানা আঙ্গিকে গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার আইসিটিকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি মাধ্যম হিসেবে প্রচার করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে- যার মধ্যে ডিজিটাল সাক্ষরতা বৃদ্ধি, ইন্টারনেট সংযোগ সম্প্রসারণ এবং প্রযুক্তি খাতে উদ্ভাবন উৎসাহিত করা অন্তর্ভুক্ত। বিশেষ করে, টেলিযোগাযোগ খাতে গত কয়েক বছরে বিস্ফোরক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। মোবাইল ফোনের প্রচলন এবং ইন্টারনেট সংযোগের সম্প্রসারণ কোটি কোটি মানুষের ডিজিটাল বিশ্বে সংযুক্ত করেছে। বর্তমানে, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দ্রম্নতগতিতে মোবাইল বাজারে উন্নয়ন করছে এবং শহরাঞ্চলে ইন্টারনেট ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রবৃদ্ধি দেশের আইসিটি উন্নয়ন এবং বিস্তারের ভিত্তি স্থাপন করেছে।

সরকারি উদ্যোগ ও নীতি:বাংলাদেশ সরকার আইসিটি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বিভিন্ন নীতি ও উদ্যোগের মাধ্যমে। ২০০৮ সালে চালু হওয়া 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' ভিশন দেশের আইসিটি নীতির জন্য একটি দিশারি হিসেবে কাজ করছে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো আইসিটিকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য কমানো এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে ব্যবহৃত করা- যাতে সেবা সহজে, স্বচ্ছ এবং কার্যকরী হয়।

সরকারের নানা উদ্যোগ যেমন অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন (ধ২র) প্রোগ্রাম- যা জনগণের জন্য সরকারি সেবাগুলো অনলাইনে সহজলভ্য করেছে, দেশের আইসিটি খাতে উলেস্নখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। এছাড়া, সরকার বিভিন্ন আইসিটি পার্ক এবং ইনকিউবেটর প্রতিষ্ঠা করেছে- যা স্টার্টআপ এবং উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করছে। 'জাতীয় আইসিটি নীতি' চালু করে খাতটিকে আরও সুসংগঠিত করা হয়েছে এবং ডিজিটাল ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

অবকাঠামো উন্নয়ন :আইসিটির পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জন করতে অবকাঠামো উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার ও বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশে ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নত করা হচ্ছে, যেমন ব্রডব্যান্ড সংযোগ, ডেটা সেন্টার এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক। উদাহরণস্বরূপ, ফাইবার অপটিক কেবলের সম্প্রসারণ ইন্টারনেট স্পিড এবং কাভারেজ বৃদ্ধি করেছে- যা শহর ও গ্রামীণ এলাকাগুলোর জন্য আরও উন্নত ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান করেছে।

শিক্ষা এবং দক্ষতা উন্নয়ন :আইসিটি ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মশক্তি তৈরি করতে শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় আইসিটি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ডিজিটাল টুলস ও পস্ন্যাটফর্ম তাদের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করছে- যা ছাত্রদের আধুনিক চাকরির বাজারের জন্য প্রস্তুত করছে। বাংলাদেশ সফটওয়্যার উন্নয়ন, আইটি সহায়তা এবং ব্যবসায়িক প্রক্রিয়া আউটসোর্সিংয়ের মতো ক্ষেত্রে আউটসোর্সিং এবং অফশোরিং পরিষেবার জন্য একটি কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এই প্রবৃদ্ধি সাফল্য অর্জন করেছে একটি তরুণ এবং প্রযুক্তি-ংধাু জনসংখ্যা, নিম্ন শ্রম খরচ এবং সরকারি সমর্থনের মাধ্যমে। এই প্রবণতা বজায় রাখতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের আইসিটিভিত্তিক প্রোগ্রামগুলোকে সম্প্রসারিত করতে হবে এবং পরবর্তী প্রজন্মের আইটি পেশাদারদের প্রস্তুতি দিতে হবে।

ই-গভর্নমেন্ট এবং ডিজিটাল সেবা:বাংলাদেশে আইসিটির সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে শাসন এবং সরকারি সেবা সরবরাহের ক্ষেত্রে। ই-গভর্নমেন্ট উদ্যোগগুলো সরকারি প্রশাসনে স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা এবং কার্যকারিতা বৃদ্ধি করেছে। ডিজিটাল পস্ন্যাটফর্মের মাধ্যমে, নাগরিকরা সরকারি সেবাগুলো সহজেই এবং শারীরিকভাবে অফিসে না গিয়ে পেতে পারেন।

ই-কমার্স এবং ডিজিটাল উদ্যোক্তা :বাংলাদেশে ই-কমার্স দ্রম্নত বিকাশমান একটি খাত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, বিশেষত স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে। ডারাজ, চালডাল এবং আজকের ডিলের মতো পস্ন্যাটফর্মগুলো খুচরা ব্যবসার পরিবেশ পরিবর্তন করেছে- যা গ্রাহক তাদের বাড়ি বসে পণ্য এবং সেবা কেনার সুবিধা দিয়েছেন।

চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যতের পথে :বাংলাদেশে আইসিটি উন্নয়নের সম্ভাবনা আশাপ্রদ হলেও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। শহর ও গ্রাম অঞ্চলের মধ্যে ডিজিটাল বিভাজন অন্যতম প্রধান সমস্যা। এছাড়া, আইসিটি শিক্ষা এবং দক্ষতা প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মান উন্নয়ন করতে হবে এবং সাইবার সুরক্ষায় আরও বিনিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে। আইসিটি বাংলাদেশের অর্থনীতি, সমাজ এবং শাসন ব্যবস্থাকে রূপান্তরিত করার বিশাল সম্ভাবনা রাখে। অবকাঠামো, শিক্ষা এবং ডিজিটাল সেবায় বিনিয়োগ অব্যাহত রাখলে বাংলাদেশ প্রযুক্তির শক্তি ব্যবহার করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নত জীবনযাত্রা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে।

ড. হাজেরা খাতুন : পরিচালক, আইসিটি বিভাগ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে