সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

এইচএসসির ইতিহাস দ্বিতীয় পত্র

রোজিনা আক্তার, শিক্ষক ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিরাজগঞ্জ
  ০২ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

২. দামোদর ইউনিয়নের করিম চেয়ারম্যান একজন স্বৈরাচারী মনোভাবাপন্ন ব্যক্তি ছিলেন। তিনি নিজেকে ইউনিয়নের সর্বেসর্বা

মনে করতেন। তার সব নির্দেশনা ইউনিয়নবাসীর জন্য বাধ্যতামূলক ছিল। ইউনিয়নের শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-দরিদ্র কারোর মতামতকেই তিনি গ্রাহ্য করতেন না।

ক. কোন রাজা নিজেকে 'বিপস্নবের সন্তান' বলে দাবি করতেন?

খ. ভার্সাই সন্ধি বলতে কী বোঝ?

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত চেয়ারম্যানের সঙ্গে তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন শাসকের মিল খুঁজে পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. উক্তি শাসকের কর্মকান্ডই তার দেশে বিপস্নবের সূচনা করেছিল- বিশ্লেষণ করো।

উত্তর:

ক. নেপোলিয়ন বোনাপার্ট নিজেকে 'বিপস্নবের সন্তান' বলে দাবি করতেন।

খ. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিজয়ী মিত্র শক্তি, পরাজিত জার্মানির ও তার মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে শান্তিচুক্তি সম্পাদনের জন্য ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন ডাকে। ভার্সাই রাজপ্রাসাদে প্রায় ৩২টি দেশ মিলিত হয়েছিল বলে একে ভার্সাই সন্ধি বলা হয়। শান্তি সম্মেলনের প্রধান সিদ্ধান্ত নেয় ফ্রান্সের ক্লেমেনসু্য ইংল্যান্ডের লয়েড জর্জ ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন। সম্মেলনে বিশ্বশান্তি স্থাপনের জন্য উড্রো উইলসনের চৌদ্দ দফা নীতির ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়।

গ. উদ্দীপকে উলিস্নখিত স্বৈরাচারী মনোভাবাপন্ন চেয়ারম্যান করিমের কার্যক্রমের সঙ্গে ফ্রান্সের বুরবো রাজা ষোড়শ লুইয়ের কাজের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

উদ্দীপকে চেয়ারম্যান নিজেকে ইউনিয়নের সর্বেসর্বা মনে করতেন। তিনি মনে করেন, তিনি যা করেন তাই আইন। ইউনিয়ন চালানোর সময় ইউনিয়নের মেম্বার ও অন্যান্য জ্ঞানী ব্যক্তিদের মতামত অগ্রাহ্য করতেন। এক কথায় তিনি চরম স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। চেয়ারম্যান সাহেবের মতো ফ্রান্সের রাজা ষোড়শ লুই ছিলেন চরম স্বৈরাচারী।

তিনি বিশ্বাস করতেন, ঈশ্বর রাজাকে নিযুক্ত করেছেন। রাজা তার কাজকর্মের জন্য ঈশ্বর ছাড়া অন্য কারোর নিকট দায়ী নন।

এ বিশ্বাস থেকেই তিনি বলতেন, 'ডযধঃ ও উবংরৎব রং ফবপৎবব (আমি যা ইচ্ছা করি তা-ই আইন)। এ বিশ্বাসের কারণেই ষোড়শ লুই হয়ে উঠেছিলেন চরম স্বৈরাচারী। স্বৈরাচারী মনোভাব দুর্বল চরিত্রের কারণে যখন ফ্রান্সের সংকটকাল শুরু হয়, তখন রাজা সাম্রাজ্যের জ্ঞানী ব্যক্তিদের মতামত অগ্রাহ্য করেন, যা শেষ পর্যন্ত বুরবো সাম্রাজ্যের পতন ডেকে নিয়ে আসে।

পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকের চেয়ারম্যানের কর্মকান্ডের সঙ্গে রাজা ষোড়শ লুইয়ের কাজের মিল পাওয়া যায়।

ঘ. উক্ত শাসক অর্থাৎ ষোড়শ লুইয়ের কর্মকান্ডই তার দেশে বিপস্নবের সূচনা করেছিল- উক্তিটি যথার্থ নয়।

ফরাসি বিপস্নব ছিল মানবজাতির ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা। যার সঙ্গে সাধারণ জনগণের প্রতি রাজা বা শাসক শ্রেণির শোষণ বা বঞ্চনার ইতিহাস জড়িত। এ বিপস্নব শুধু ইউরোপ নয়, বরং সমগ্র বিশ্বে সাড়া জাগিয়েছিল। এ বিপস্নবের মূল ভিত্তি ছিল সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা। রাজতন্ত্রের পরিবর্তে গণতন্ত্র, সামন্ততন্ত্রের পরিবর্তে সমাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্রের পরিবর্তে জনসাধারণের সমান অধিকার, সামাজিক বৈষম্য এবং বিভেদের স্থলে সমান সুযোগ-সুবিধা প্রতিষ্ঠার জন্য ফরাসি বিপস্নব সংঘটিত হয়। ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতা প্রাপ্তির নীতির ওপর নির্ভর করে চতুর্দশ লুই রাজতন্ত্রের সর্বময় ক্ষমতার আঁধারে পরিণত করেন। এ ক্ষমতা বোঝানোর জন্য তিনি মন্তব্য করেন, 'ও ধস :যব ংঃধঃব' বা আমিই রাষ্ট্র। ষোড়শ লুই তার আত্মজীবনীতে বিষয়টি আরও বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেন এভাবে, 'রাজারা হচ্ছেন সর্বময় প্রভু, তাদের প্রজাদের সবকিছুর ওপর কর্তৃত্ব করার সব প্রাকৃতিক অধিকার রয়েছে।' ফলে তাদের হিংসাত্মক কথাবার্তা এবং শোষণনীতির কারণেই সাধারণ জনগণ আর চুপ থাকেনি। তারা বিদ্রোহ করে তার ভুল প্রমাণের চেষ্টা থেকেই পরবর্তীতে ফরাসি বিপস্নবের সূচনা হয়। এ বিপস্নব মানুষের মধ্যে শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিপস্নবী ভাবধারার উন্মেষ ঘটায়। যা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন দেশের জনগণকে বিপস্নবী হতে অনুপ্রেরণা যোগায়।

পরিশেষে বলা যায়, শুধু ষোড়শ লুইয়ের কর্মকান্ডের কারণে ফরাসি বিপস্নব সংঘটিত হয়নি বরং বুরবো রাজাদের স্বৈরাচারী নীতির কারণের জন্য ও ফরাসি বিপস্নব সংঘটিত হয়েছিল।

৩. বিশ্বে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি আবিষ্কার হলে উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। উৎপাদিত পণ্যের বাজার দখলের প্রতিযোগিতায় ইউরোপের শক্তিশালী দেশগুলোর মধ্যে উপনিবেশবাদের উত্থান ঘটে। একপর্যায়ে একটি হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে সমগ্র বিশ্ব এক ভয়ংকর যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।

ক. নাৎসিদের পোশাকের রং কেমন ছিল?

খ. ত্রিশক্তি আঁতাত কী? ব্যাখ্যা করো।

গ. উদ্দীপকে কোন যুদ্ধের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের উত্থান ছিল এ যুদ্ধের অন্যতম কারণ'- বিশ্লেষণ করো।

ক. নাৎসিদের পোশাকের রং ছিল বাদামি।

খ. ১৯০৭ সালে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও রাশিয়ার মধ্যে গঠিত জোট ত্রিশক্তি আঁতাত বা ঞৎরঢ়ষব অষষরধহপব নামে পরিচিত। ত্রিশক্তি আঁতাত ছিল ইম্পোরিয়াল জার্মানি, অস্ট্রো-হাঙ্গেরি ও ইতালির সমন্বয়ে গঠিত ত্রিপক্ষীয় জোটের বিপরীতে একটি পাল্টা শক্তিশালী জোট। এই ত্রিশক্তি আঁতাত এবং সেন্ট্রাল পাওয়ার্সের মধ্যে ১৯১৪ সাল থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। যুদ্ধে ত্রিশক্তি আঁতাতের কাছে সেন্ট্রাল পাওয়ার্সের পতন ঘটেছিল।

গ. উদ্দীপকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। ১৯১৪ সালের ২৮ জুন অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্যের ভাবী উত্তরাধিকারী ফ্রান্সিস ফার্ডিনান্দ বসনিয়ার রাজধানী সারায়েভোতে স্ত্রী সোফিয়াসহ আততায়ীর গুলিতে নিহত হলে অস্ট্রিয়া সার্বিয়াকে সম্পূর্ণ দায়ী করে জার্মানির সমর্থন নিয়ে ২৮ জুলাই তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। অন্যদিকে, ফ্রান্স-রাশিয়া সার্বিয়াকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসে। এ যুদ্ধে ইউরোপের অপরাপর রাষ্ট্রগুলো জড়িয়ে পড়ে। পরে এ যুদ্ধ আমেরিকা ও এশিয়াতেও ছড়িয়ে পড়ে, যা বিশ্বযুদ্ধের রূপ পরিগ্রহ করে। সারায়েভোর হত্যাকান্ড এ যুদ্ধের আশু কারণ হলেও এর পিছনে আরও বহুবিধ কারণ বিদ্যমান ছিল। এ যুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে ১০০ বছর ধরে। ফরাসি বিপস্নবও এ বিপস্নবের প্রতি অপরাপর ইউরোপীয় রাজন্যবর্গের প্রতিক্রিয়া প্রথমে বিশ্বযুদ্ধের বীজ বপন করেছিল। এ ছাড়া ভিয়েনা কংগ্রেসের ত্রম্নটি, উগ্রজাতীয়তাবাদের উত্থান, শিল্প বিপস্নব, বাজার দখলের প্রতিযোগিতা, বাণিজ্য ও উপনিবেশ বিস্তারের প্রতিযোগিতা, কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়ামের পররাষ্ট্রনীতি, বিসমার্কের কূটনীতি, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বেকার কতিপয় আন্তর্জাতিক সংকট ইত্যাদি ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ।

উদ্দীপকে বলা হয়েছে, বিশ্বে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এসব পণ্যের বাজার দখলের জন্য ইউরোপের শক্তিশালী দেশগুলোর মধ্যে উপনিবেশবাদের উত্থান ঘটে। একপর্যায়ে একটি হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে সমগ্র বিশ্ব ভয়ঙ্কর যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, যা উপরে আলোচিত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঘটনার ইঙ্গিত বহন করে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনা প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে ইঙ্গিত দেয়।

হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে