সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

এইচএসসির ইতিহাস দ্বিতীয় পত্র

রোজিনা আক্তার, শিক্ষক ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিরাজগঞ্জ
  ০৩ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

ঘ. 'উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের উত্থান ছিল এ যুদ্ধের অর্থাৎ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ'- উক্তিটি যথার্থ।

সারায়েভোর হত্যাকান্ড এ যুদ্ধের আশু কারণ হলেও এর পিছনে আরও বহুবিধ কারণ বিদ্যমান ছিল। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের উত্থান। পুঁজিবাদের চরম বিকাশের ফলে ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের প্রসার ও উপনিবেশ বিস্তার নিয়ে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার সৃষ্টি হয়। শিল্পপণ্য রপ্তানি ও অতিরিক্ত বিনিয়োগের জন্য পুরনো উপনিবেশের সম্প্রসারণ ও নতুন উপনিবেশ স্থাপনের জন্য বিভিন্ন দেশ মরিয়া হয়ে ওঠে। ফলে অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য অগ্রসর পুঁজিবাদী দেশগুলো নিজেদের রাজনীতিকে সাম্রাজ্যবাদী করে তোলে। বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকেও ব্রিটেন ছিল পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ঔপনিবেশিক শক্তি। এরপরও সে তৃপ্ত ছিল না। দ্বিতীয় প্রধান ঔপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্সের এশিয়া ও আফ্রিকায় প্রচুর উপনিবেশ থাকা সত্ত্বেও ফ্রান্স উত্তর আফ্রিকার মরক্কোতে অনুপ্রবেশ করে উপনিবেশ স্থাপন করে। জার্মানি নব্য পুঁজিবাদী দেশ হওয়ায় তার কোনো উপনিবেশ ছিল না। কিন্তু তারও লক্ষ্য ছিল উপনিবেশ দখল করা। ইতোপূর্বে অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো তা দখল করে নেওয়ার একটি যুদ্ধ ছাড়া উপনিবেশ দখলের আর কোনো পথ খোলা ছিল না। জার্মানি সে উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছিল এবং বিভিন্ন কার্যকলাপের মাধ্যমে যুদ্ধের পরিবেশ খুঁজছিল।

সুতরাং বলা যায়, উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের উত্থান ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ।

৪. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অনেক বুদ্ধিজীবী সরাসরি অংশগ্রহণ না করলেও তারা তাদের লেখনীর মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন। দেশের জনগণের পাশাপাশি বিশ্বজনমত গঠনেও তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

ক. 'ঞযব ঝঢ়ৎরঃ ড়ভ খধংি' গ্রন্থের রচয়িতা কে?

খ. বাস্তিল দুর্গ বলতে কী বোঝো? বর্ণনা দাও।

গ. উদ্দীপকের লেখনীর সঙ্গে তোমার পাঠ্যবইয়ের কাদের লেখনীর মিল খুঁজে পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. উক্ত লেখনী তৎকালীন সমাজ ও রাষ্ট্র পরিবর্তনে কেমন ভূমিকা পালন করেছিল বলে তুমি মনে করো? বিশ্লেষণ করো।

উত্তর :

ক. ঞযব ঝঢ়রৎঃ ড়ভ খধংি গ্রন্থের রচয়িতা চার্লস মন্তেস্কু।

খ. বাস্তিল দুর্গ ছিল একটি দুর্গ কারাগার। এর অবস্থান ছিল প্যারিস নগরীর কাছে। বুরবো রাজবংশের শোষণ ও অত্যাচারের প্রতীক ছিল এ দুর্গ। ১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই সাধারণ জনতার হাতে বাস্তিল দুর্গের পতন হয়। এটি ছিল একটি বড় ঘটনা।

কেননা, এটি ছিল রাজতন্ত্রের প্রতীক। এ দুর্গের পতন স্বৈরতন্ত্রের পতনকেই নির্দেশ করে।

গ. উদ্দীপকের লেখনীর সঙ্গে আমার পাঠ্যবইয়ের ফরাসি দার্শনিকদের লেখনীর মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

অষ্টাদশ শতাব্দী ছিল জ্ঞান দীপ্তির শতাব্দী। এ শতাব্দীতে ফ্রান্স তথা ইউরোপে এমন কতিপয় দার্শনিকের আবির্ভাব ঘটে যাদের

ক্ষুরধার লেখনী পাঠ করে মানুষ যুক্তিবাদী হয়ে ওঠে। তারা সমাজে যা প্রচলিত তা মেনে না নিয়ে এ ব্যবস্থার দোষ-

\হত্রম্নটি বিচার করতে শেখে। দার্শনিকরা রাজার স্বর্গীয় অধিকার তত্ত্বকে যুক্তির দ্বারা আক্রমণ করে এ অভিমত প্রচার করেন,

'রাজার ক্ষমতা বা কর্তৃত্বের উৎস স্রষ্টা নন, জনগণের ইচ্ছা। তারা এ মত প্রচার করেন, প্রকৃত নিয়মে অধিকারের সঙ্গে

কর্তব্যও থাকে। সুতরাং রাজা শুধু অধিকার ভোগ করতে পারেন না, তাকে কর্তব্যও পালন করতে হবে। ফরাসি বিপস্নবের ওপর বিখ্যাত গবেষক লেফেভার বলেন, ফরাসি বিপস্নবের দার্শকিনরা শুধু জাগতিক ও রাষ্ট্রীয় নিয়ম-কানুনের ব্যাখ্যার মধ্যে তাদের আলোচনা সীমাবদ্ধ না রেখে প্রাকৃতিক আইনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, 'তারা ছিলেন মানবতাবাদী, যুক্তিবাদী ও সংস্কারে বিশ্বাসী। তারা বিশ্বাস করতেন প্রকৃতি যেমন নিয়মে চলছে, তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রকেও নিয়ম মেনে চলা দরকার।'

এদের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য ছিলেন মন্টেস্কু, রুশো, ভলতেয়ার, দিদেরো, ডি এলেমবার্ট প্রমুখ। উক্ত দার্শনিকরা ফ্রান্সের জনগণকে রাজতন্ত্রের নানাবিধ সমস্যা সম্পর্কে সচেতন করে তোলেন। রাজা ও অভিজাত শ্রেণির সীমাহীন দুর্নীতি তাদের লেখনীতে প্রকাশিত হলে তা জনগণ মন্ত্রবাক্যের মতো গ্রহণ করে। ফলে সফলভাবে ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপস্নব সংঘটিত হয়।

ঘ. উক্ত লেখনী অর্থাৎ ফরাসি দার্শনিকদের লেখনী তৎকালীন সমাজ ও রাষ্ট্র পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল বলে আমি মনে করি।

ফরাসি বিপস্নবে যেসব দার্শনিকের লেখা প্ররোচনা জুগিয়েছিল তাদের মধ্যে ভলতেয়ার, মন্টেস্কু, রুশো ছিলেন অন্যতম।

হলব্যাখ ঈশ্বর চিন্তা অপেক্ষা বস্তুজগতে মানুষের কল্যাণ চিন্তাকেই প্রাধান্য দেন। তিনি বলেন, 'আদিতে মানুষ সুখী ছিল, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনাচারের কারণেই মানুষের দুঃখ-দুর্দশা বেড়েছে।' ফরাসি বিপস্নবের অন্যতম মহান নায়ক ছিলেন ভলতেয়ার। তার লেখাগুলোর মধ্যে বিখ্যাত হচ্ছে কাঁদিদ, অধিবিদ্যা, দার্শনিক অভিধান, ঙবফরঢ়ব, ঊষবসবহঃ ড়ভ বংংধুং ড়হ ঁহরাবৎংধষ, ঐরংঃড়ৎু. তার লেখায় রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার দোষ-ত্রম্নটি সহজ ও ব্যঙ্গাত্মক ভাষায় তুলে ধরেন। তিনি বিভিন্নভাবে রোমান ক্যাথলিক গির্জা এবং যাজকদের দুর্নীতির কথা উলেস্নখ করেন। এতে গির্জা এবং যাজকদের প্রতি মানুষের ঘৃণা জন্মাতে তিনি সাহায্য করেন। ফরাসি বিপস্নবের পথ সুগম করার ক্ষেত্রে রুশোর অবদান সবচেয়ে বেশি। তার মতে, রাষ্ট্র ঈশ্বরের সৃষ্টি নয়। প্রকৃতির রাজ্যে বসবাসকারী মানুষ একটি চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্র গঠন করেছে। এভাবে রুশো একদিকে রাজার উরারহব জরমযঃ ঞযবড়ৎু-কে চ্যালেঞ্জ করেন এবং অন্যদিকে, স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে মানুষকে রুখে দাঁড়ানোর প্রেরণা জোগান। এভাবে রুশো ফরাসি জনগণকে এক বিপস্নবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেন।

পরিশেষে বলা যায়, ফরাসি দার্শনিকদের লেখনী তৎকালীন সমাজ ও রাষ্ট্র পরিবর্তনে প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছিল।

৫. একটি অঞ্চলে ধনী-গরিবের বৈষম্য চরম আকার ধারণ করে। তখন নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে সেখানে এক আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। এ আন্দোলনে জয়লাভ করে আন্দোলনকারীরা সেখানে এক বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়।

ক. ভার্সাই চুক্তি কখন স্বাক্ষরিত হয়?

খ. ত্রিশক্তি আঁতাত কী?

গ. উদ্দীপকে উলিস্নখিত ঘটনার সঙ্গে তোমার পাঠ্যপুস্তকের কোন বিপস্নবের সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. উলিস্নখিত ঘটনা কি বিশ্বকে দুটি বলয়ে বিভক্ত করেছিল? তোমার মতামত ব্যক্ত করো।

হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে