সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

এইচএসসির ইতিহাস দ্বিতীয় পত্র

রোজিনা আক্তার, শিক্ষক ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিরাজগঞ্জ
  ০৫ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

উত্তর :

ক. ভার্সাই চুক্তি ১৯১৯ সালের ২৮ জুন স্বাক্ষরিত হয়।

খ. ত্রিশক্তির আঁতাত ছিল ত্রিশক্তি জোটের হুমকি মোকাবিলায় গড়ে ওঠা ইউরোপীয় সামরিক জোট। ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে ইংল্যান্ড, রাশিয়া ও ফ্রান্স এ তিনটি রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক আত্মরক্ষা ও সামরিক সহযোগিতার লক্ষ্যে যে চুক্তি সম্পাদিত হয় তা ত্রিশক্তির আঁতাত বা ট্রিপল আঁতাত নামে পরিচিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এ তিনটি দেশ হয় মিত্র শক্তিভুক্ত দেশ।

গ. উদ্দীপকের উলিস্নখিত ঘটনার সঙ্গে আমার পাঠ্যপুস্তকের রুশ বিপস্নবের সাদৃশ্য রয়েছে।

উদ্দীপকের আলোচনায় দেখা যায়, একটি অঞ্চলে ধনী-গরিবের বৈষম্য। চরম আকার ধারণ করে। তখন নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে সেখানে এক আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। এ আন্দোলনে জয়লাভ করে আন্দোলনকারীরা সেখানে এক বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থাও গড়ে তুলতে সক্ষম হন। উদ্দীপকের এমন ঘটনার সঙ্গে রুশ বিপস্নব বা বলশেভিক বিপস্নবের সাদৃশ্য রয়েছে। ১৯১৭ সালে রাশিয়ার পেত্রগাং শহরে শ্রমিক-সৈনিক নাবিকের সশস্ত্র

অভু্যত্থান ও রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল ইতিহাসে রুশ বিপস্নব বা অক্টোবর বিপস্নব নামে পরিচিত। বলশেভিক পার্টির নেতৃত্বে এ বিপস্নব সংঘটিত হয় বলে একে বলশেভিক বিপস্নবও বলা হয়। বিপস্নবের পূর্বে জারতন্ত্রের কুশাসনে রাশিয়ার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। রাষ্ট্রীয় সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছিল অভিজাত সম্প্রদায়। জার সরকার ভূমি সংস্কার চালু করলে কুলাক বা জোতদার শ্রেণির উদ্ভব হয়। ফলে গ্রামাঞ্চলের কৃষকদের জমি ভূস্বামীদের হাতে চলে যায়। দরিদ্র কৃষক ভূমিহীন হয়ে আরও দরিদ্র হয়ে পড়ে। জারতন্ত্রেও নিষ্পেষণমূলক শাসনের কারণেই রাশিয়ায় রুশ বিপস্নব বা বলশেভিক বিপস্নবের মতো এক ঐতিহাসিক বিপস্নব সংঘটিত হয় এবং জারতন্ত্রের স্থলে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

ঘ. আমার মতে, উলিস্নখিত ঘটনা অর্থাৎ বলশেভিক বিপস্নব বিশ্বকে সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদী বিশ্ব-এ দুটি বলয়ে বিভক্ত করেছিল।

বলশেভিক বিপস্নব শুধু রাশিয়ার আর্থ-সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে সংঘটিত হয়নি, বরং বিশ্বব্যাপী

পুঁজিবাদের অবসান ঘটিয়ে শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা ছিল এর লক্ষ্য। এ বিপস্নবের ফলে রাশিয়ার দীর্ঘদিনের স্বৈরাচারী জারতন্ত্রের পতন ঘটে এবং বিশ্বের সর্বপ্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। জন্ম নেয় প্রচলিত শ্রেণিভিত্তিক সমাজের পরিবর্তে শ্রেণিহীন এক সমাজব্যবস্থা। বিশাল দেশ রাশিয়া থেকে সমাজতন্ত্রের আদর্শর প্রতিবেশী বেশ কয়েকটি দেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। রাশিয়ার নেতৃত্বে এ আদর্শ বাস্তবায়নের কাজ চলতে থাকে। এর ফলে বিশ্বপর্যায় দুটি বলয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে। রাশিয়ার নেতৃত্বে সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী দেশগুলো একটি বলয়ে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পুঁজিবাদী বিশ্ব আরেকটি বলয়ে ভাগ হয়। কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের (বলশেভিক বিপস্নবের পরে রাশিয়ার নতুন নাম) মধ্যে প্রচ্ছন্ন বৈরিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলে যা 'শীতল যুদ্ধ' বা 'স্নায়ুযুদ্ধ' নামে পরিচিত। বিশ্বের প্রধান ক্ষমতাধর দেশ দুটি অন্য দেশগুলোকে নিজেদের প্রভাব বলয়ের মধ্যে টেনে নেওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকে।

সুতরাং বলা যায়, বলশেভিক বিপস্নব বিশ্বকে সমাজতন্ত্রী ও পুঁজিবাদী এই দুই বলয়ে বিভক্ত করেছিল।

৬. ফাহিমের বাহিনী তার নিজ দেশে একচেটিয়া কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। সংবাদপত্র ও অন্যান্য মিডিয়ার অধিকার কেড়ে নেয়। দেশটিতে প্রতিদিন সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ঘটতে থাকে। রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সন্ত্রাসী কার্যকলাপে উৎসাহ দিতে থাকে।

ক. মুসোলিনী কোন দেশের শাসক ছিলেন?

খ. ফ্যাসিবাদের মূলনীতি কয়টি ও কী কী?

গ. ফাহিমের বাহিনীর সঙ্গে তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন দেশের কোন শাসকের মিল পাওয়া যায়? উক্ত শাসকের প্রকৃতি নিরূপণ করো।

ঘ. উক্ত শাসকের আমলে তার দেশ মৃতু্যপুরী ও বন্দিশিবিরে পরিণত হয়েছিল-বিষয়টি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর :

ক. মুসোলিনী ইতালির শাসক ছিলেন।

খ. ফ্যাসিবাদের মূলনীতি চারটি। যথা-

১. ফ্যাসিবাদ গণতন্ত্রকে অস্বীকার করে।

২. ফ্যাসিবাদ সমাজতন্ত্রকে অস্বীকার করে।

৩. ফ্যাসিবাদ শান্তিবাদকে অস্বীকার করে।

৪. ফ্যাসিবাদ ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদকে অস্বীকার করে।

গ. উদ্দীপকের ফাহিমের বাহিনীর সঙ্গে আমার পাঠ্যবইয়ের জার্মানির এডলফ হিটলারের মিল পাওয়া যায়।

ফাহিমের বাহিনী তার নিজ দেশে একচেটিয়া কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। সংবাদপত্র ও অন্যান্য মিডিয়ার অধিকার কেড়ে নেয়।

দেশটিতে প্রতিদিন সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ঘটতে থাকে। রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সন্ত্রাসী কার্যকলাপে উৎসাহ দিতে থাকে।

উদ্দীপকের এ ঘটনার সঙ্গে হিটলারের নাৎসি বাহিনীর মিল পাওয়া যায়। মূলত হিটলারের নেতৃত্বে ১৯৩৪ সালে সাজানো

নির্বাচনের মাধ্যমে নাৎসি বাহিনী ক্ষমতায় আসার পর নানা ধরনের একনায়কতান্ত্রিক কর্মসূচি গ্রহণ করে। এ বাহিনী জার্মানির সর্বত্র একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৩৪ সালের ২৪ জুলাই নাৎসি দল ছাড়া সব দলকে নিষিদ্ধ করা হয়। ফ্যাসিস্ট লুই-এর নেতৃত্বে একটি ট্রেড ইউনিয়ন ছাড়া আর সব কয়টি ট্রেড ইউনিয়নকে নিষিদ্ধ করা হয়। দেশের সংবাদপত্র, বেতার, শিক্ষাসহ সব প্রতিষ্ঠানের অধিকার কেড়ে নেয়। যে কোনো সময় দেশের যে কোনো নাগরিককে গ্রেপ্তার করা ও বিনা বিচারে আটক করে রাখা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। সে সময় হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসি বাহিনী জার্মানিতে একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সূচনা করে। তিনি বিভিন্ন উত্তেজনাকর বক্তৃতা দ্বারা বেকার যুবক, ভবঘুরে, কর্মহারা

শ্রমিকদের নিজ দলে ভিড়িয়ে নেন। তিনি নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য নানা ধরনের মানবতাবিরোধী কর্মকান্ড শুরু করেন।

পরিশেষে বলা যায়, ফাহিমের বাহিনীর কর্মকান্ডের সঙ্গে হিটলারের নাৎসি বাহিনীর কর্মকান্ডের সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. উক্ত শাসক অর্থাৎ এডলফ হিটলারের আমলে তার দেশ মৃতুপুরী ও বন্দি শিবিরে পরিণত হয়েছিল উক্তিটি যথার্থ।

কেননা হিটলার ১৯৩৩ সালের ৩০ জানুয়ারিতে জার্মানির শাসনক্ষমতা দখল করার পর কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে ওঠেন। তিনি ১৯৩৪ সালে প্রেসিডেন্ট ও চ্যান্সেলর দুটি পদই দখল করেন। এভাবে তিনি বিরোধী দলগুলোর কবর রচনা করেন। তার বাহিনী বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আটক করে। জার্মানিতে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে হিটলারের সহযোগী হিসেবে গ্রেপ্তার স্ট্রেমার, পল যোসেফ গোয়েবেলস প্রমুখ প্রসিদ্ধ। তারা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর নানা ধরনের দমন নিপীড়নমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করে। দেশের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য বন্দি শিবির খোলা হয়। তার বিরুদ্ধে অভু্যত্থানের অভিযোগে অনেক মানুষকে হত্যা করা হয়। এটিকে লম্বা ছুরির রজনী বলে ভয়ার্তচিত্রে স্মরণ করা হয়। গোস্টপ পুলিশ বাহিনী হিটলারের শ্রেষ্ঠ পুলিশ বাহিনীতে পরিণত হয়। হিটলারবিরোধী কোনো শিক্ষিত মানুষের পক্ষে দেশে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়ে।

তাই বলা যায়, হিটলারের শাসনামলে পুরো দেশ মৃতু্যপুরী ও বন্দি শিবিরে পরিণত হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে