বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১
বিজ্ঞান

পঞ্চম শ্রেণির পড়াশোনা

রোমানা হাবিব চৌধুরী, সহকারী শিক্ষক, ব্রাইট ফোর টিউটোরিয়াল হোম, চট্টগ্রাম
  ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
পঞ্চম শ্রেণির পড়াশোনা

প্রশ্ন : বায়ুচাপ কীভাবে বায়ুপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে?

উত্তর : কোথাও বায়ুচাপ কমে গেলে সেখানে পার্শ্ববর্তী উচ্চ বায়ুচাপবিশিষ্ট এলাকা থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়। এভাবে বায়ুচাপ বায়ুপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে।

বায়ু তার ওজনের কারণে ভূপৃষ্ঠের ওপর চাপ প্রয়োগ করে। এই বায়ুচাপ আবহাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। কোনো এলাকায় খাড়াভাবে সূর্যের কিরণ পড়লে সেখানে বায়ু উষ্ণ হয়ে হালকা হয় ও উপরের দিকে উঠে যায়। ফলে সেখানে সৃষ্টি হয় শূন্যস্থানের ও কমে যায় বায়ুচাপ। একে বলে নিম্নচাপ। আবার কোনো এলাকায় বায়ু ঠান্ডা হয়ে নিচের দিকে নেমে এলে বায়ুচাপ বৃদ্ধি পায় যা উচ্চ বায়ুচাপ নামে পরিচিত। কোনো এলাকায় নিম্নচাপ বিরাজ করলে সে এলাকায় স্বাভাবিকভাবেই উচ্চ বায়ুচাপবিশিষ্ট এলাকা থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়।

প্রশ্ন :বর্ষাকালে বাংলাদেশে বায়ুর আর্দ্রতা বেশি থাকার কারণ ব্যাখ্যা করো।

উত্তর :বর্ষাকালে বায়ুর আর্দ্রতা বেশি হওয়ার কারণ : আর্দ্রতা হলো বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে বায়ুর আর্দ্রতাও বৃদ্ধি পায়।

১. বর্ষাকালে বাংলাদেশে অধিক বৃষ্টিপাত হয় বলে বায়ুর আর্দ্রতা বেশি থাকে। ২. বর্ষাকালে সে সময় বাংলাদেশের জলভাগ অপেক্ষা বেশি উষ্ণ থাকে স্থলভাগ। ৩. স্থলভাগে বায়ুর নিম্নচাপ ও জলভাগে বায়ুর উচ্চচাপ বিরাজ করে। ৪. তখন বঙ্গোপসাগর এলাকা থেকে অধিক জলীয় বাষ্প সমৃদ্ধ বায়ুস্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয় এবং সেখানে সংঘটিত হয় প্রচুর বৃষ্টিপাত। তাই বর্ষাকালে বাংলাদেশে বায়ুর আর্দ্রতা বেশি থাকে।

প্রশ্ন :উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ সৃষ্টির কারণ ব্যাখ্যা করো।

উত্তর :দিনে স্থলভাগ জলভাগ থেকে উষ্ণ থাকে। উষ্ণ স্থলভাগ তার উপরে থাকা বাতাসের উষ্ণতা বৃদ্ধি করে। বায়ু উষ্ণ হলে তা হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। ফলে ঐ স্থান ফাঁকা হয়ে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। অপরদিকে সমুদ্রের উপরের বায়ু স্থলভাগ থেকে ঠান্ডা হওয়ার কারণে তা ভারী হয়ে নিচে নেমে আসে। এর ফলে সমুদ্রের উপর বায়ুর চাপ বেড়ে যায়। নিম্নচাপ অঞ্চলের গরম বায়ু হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। এর ফলে সৃষ্ট ফাঁকা স্থান পূরণের জন্য উচ্চচাপ অঞ্চলের শীতল বায়ু নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। রাতে স্থলভাগ সমুদ্রের তুলনায় ঠান্ডা থাকে। তাই তখন স্থলভাগে বায়ুর উচ্চচাপ ও সমুদ্রে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়।

প্রশ্ন :বিরূপ আবহাওয়া কী? তাপদাহ ও শৈত্যপ্রবাহ সম্বন্ধে যা জান লেখ।

উত্তর :আবহাওয়ার কোনো উপাদান যখন অস্বাভাবিকভাবে পরিবর্তিত হয়, তখন তাকে বিরূপ আবহাওয়া বলা হয়।

তাপদাহ ও শৈত্যপ্রবাহ : অতি গরম আবহাওয়ার দীর্ঘস্থায়ী অবস্থাই হলো তাপদাহ। অস্বাভাবিক তাপদাহের ফলে ফসল উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। আবার এই তাপদাহের কারণে কখনো কখনো মানুষসহ হাজার হাজার জীবের মৃতু্য হয়।

উত্তরের শুষ্ক ও শীতল বায়ু আমাদের দেশের উপর দিয়ে প্রবাহের ফলে শীতকালে তাপমাত্রা কখনো কখনো অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। এই অবস্থাই হলো শৈত্যপ্রবাহ। তবে উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্য অসহনীয় শৈত্যপ্রবাহ বাংলাদেশে খুব কমই দেখা যায়।

প্রশ্ন :বন্যা ও খরা কী? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর :স্বাভাবিক স্থলভাগ সাময়িকভাবে পানিতে পস্নাবিত হয়ে যাওয়াকে বন্যা বলে। পরবর্তীতে পানি নেমে গেলে আবার স্থলভাগ স্বাভাবিক হয়। বাংলাদেশে বর্ষাকালে অর্থাৎ জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে এক পঞ্চমাংশ পানিতে তলিয়ে যায়। প্রবল বৃষ্টিপাত বা বহিরাগত পানির কারণে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতাও সৃষ্টি হয়। এ এ জলাবদ্ধতাই বন্যা নামে পরিচিত।

দীর্ঘসময় ধরে আবহাওয়া শুষ্ক থাকলে মাটির সতেজতা হ্রাস পেয়ে মাটি ফেটে যায়। এ অবস্থাকে খরা বলে। দীর্ঘসময় ধরে বৃষ্টিপাতের অনুপস্থিতির কারণে ভূমির জলীয়ভাব হ্রাস পায়। এসময় সেচ দেওয়া না গেলে মাটি ফেটে চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। গাছপালা স্বাভাবিক সতেজতা হারায়, পাতা পড়ে যায়। পরিবেশের এই বিরূপ অবস্থাই খরা নামে পরিচিত। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে খরা দেখা যায়।

প্রাকৃতিক সম্পদ

প্রশ্ন : প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার কেন প্রয়োজন?

উত্তর : প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের জন্য এর যথাযথ ব্যবহার প্রয়োজন। কেননা আমরা শক্তি উৎপাদন এবং নতুন কিছু তৈরি করার জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে প্রাকৃতিক সম্পদের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ সীমিত। যদি যথাযথভাবে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার করা না হয়, তবে অদূর ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক সম্পদ ফুরিয়ে আসবে। যেমন- তেল, গ্যাস, কয়লা ইত্যাদি একবার ব্যবহার করলে তা হাজার বছরেও ফিরে পাওয়া যায় না। তবে যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা এ সম্পদ সংরক্ষণ করতে পারি, যা আমাদের ভবিষ্যৎ চাহিদা মেটাতে সাহায্য করবে। তা ছাড়া, প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের ফলে পরিবেশ দূষণ ধীরে ধীরে কমতে থাকে। তাই প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের জন্য এর যথাযথ ব্যবহার করা প্রয়োজন।

প্রশ্ন : কেন নবায়নযোগ্য সম্পদ অনবায়নযোগ্য সম্পদের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা উচিত?

উত্তর : আমরা জানি, নবায়নযোগ্য সম্পদ বারবার ব্যবহার করা যায়। অর্থাৎ এ সম্পদ অফুরন্ত। অন্যদিকে অনবায়নযোগ্য সম্পদ সীমিত যা একবার নিঃশেষ হয়ে গেলে হাজার হাজার বছরেও ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। যেমন- তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা। অনবায়নযোগ্য সম্পদ যা সীমিত আকারে থাকে। যদি আমরা এসব অনবায়নযোগ্য সম্পদের ব্যবহার কমিয়ে নবায়নযোগ্য সম্পদ যেমন- সূর্যের আলো, বায়ুপ্রবাহ, নদীর স্রোতকে আমাদের প্রয়োজনে ব্যবহার করি তাহলে অনবায়নযোগ্য সম্পদ সহজে ফুরিয়ে যাবে না। এ ছাড়া অনবায়নযোগ্য সম্পদ ব্যবহারের ফলে পরিবেশ ব্যাপকভাবে দূষিত হয়। এ কারণে নবায়নযোগ্য সম্পদকে অনবায়নযোগ্য সম্পদের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা উচিত।

প্রশ্ন : প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার কেন প্রয়োজন?

উত্তর : আমরা শক্তি উৎপাদন এবং নতুন কিছু তৈরি করার জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ মানবসৃষ্ট সব সম্পদের উৎস হলো প্রকৃতি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে প্রাকৃতিক সম্পদের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ সীমিত। যদি যথাযথভাবে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার করা না হয় তবে অদূর ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক সম্পদ ফুরিয়ে আসবে। এর অভাবে আমাদের প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই আমরা তৈরি করতে পারব না। ফলে আমাদের পৃথিবী আর বসবাস উপযোগী থাকবে না। তাই প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের জন্য এর যথাযথ ব্যবহার করা প্রয়োজন।

\হপরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে