সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঢালিউডের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে ঈদে

মাতিয়ার রাফায়েল
  ২০ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০
ঈদে মুক্তি পাচ্ছে অনন্ত-বর্ষা অভিনীত সিনেমা 'কিল হিম'

স্বাভাবিক সময়ে দেশে ৬০টির বেশি প্রেক্ষাগৃহ খোলা থাকে কী না- এ নিয়েই আছে সংশয়। আর ঈদের বাজার এলে সেটা বড় জোর দ্বিগুণ হতে পারে। প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যায় কোনো চমক না থাকলেও এবারের ঈদে সিনেমা মুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের গত দুই দশকের ইতিহাসে একটা বড় চমক আসছে। সেই চমকটি হচ্ছে এবার একযোগে ৮টি সিনেমা মুক্তির বিষয়টি মোটামুটি চূড়ান্ত হয়ে গেছে।

সারা বছর ছবি পাড়াগুলো জাবরকাটার মতো ঝিমুতে থাকলেও বছর ঘুরে ঈদ এলেই প্রেক্ষাগৃহগুলো জমজমাট হয়ে ওঠে। তবে এখন সেই সোনালি সময়ের দর্শক প্রাচুর্যের দেখা না পেলেও গেল দুটি রোজার ঈদে বেশ ভালোই দর্শকের দেখা পেয়েছে দেশের প্রেক্ষাগৃহগুলো। সেটা মাথায় রেখেই এবার অনেকে আশান্বিত হয়ে উঠেছেন সিনেমা মুক্তির লড়াইটা আরও বেশি জমিয়ে দিতে। তারই ফলশ্রম্নতিতে এবার দেখা যেতে পারে ৮টি সিনেমা। এক ঈদে এতগুলো সিনেমা মুক্তির খবর আমাদের চলচ্চিত্রশিল্পের জন্য নিশ্চয় সুখবর। তবে এত সিনেমা একসঙ্গে মুক্তি দিলে কোনো সিনেমা সুপারহিট ব্যবসা করতে পারবে নাকি সুপার ফ্লপ হবে- এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এক সময় ঈদ এলে রেকর্ডসংখ্যক সিনেমা মুক্তি পেত। গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে এক ঈদে মুক্তি পেয়েছিল সর্বোচ্চ ১৩টি সিনেমা। তবে সেই সময়টা এখনকার প্রেক্ষাপটের মতো ছিল না। তখন শুধু ঈদ নয়- সারা বছরই সিনেমা দেখতে দর্শকের যাতায়াত ছিল প্রেক্ষাগৃহে। শুধু তাই নয় তখন ঈদে নতুন সিনেমা মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি পুরনো ভালো ছবিগুলোও ফিরে আসতো ঈদে। সেই পুরনো ছবি দেখতেও ভরপুর দর্শক হতো প্রেক্ষাগৃহে। এরকম বেশ কয়টি প্রেক্ষাগৃহই ছিল যেগুলো ঈদে নিয়মিতভাবেই পুরনো ভালো ছবিগুলো নিয়ে আসত। হারিয়ে গেছে বাংলা সিনেমার সেই সোনালি সময় কবেই। আর এই দর্শক খরার সময়ে এসে এতগুলো সিনেমা মুক্তি দেয়ার বিষয়টি তো এক প্রকার দুঃসাহসই বটে। কিন্তু এই দুঃসাহস দেখানোর পেছনে অন্য কিছু নেই তো!

এই প্রশ্নের পেছনে অবশ্য একটি জোরালো যুক্তিও আছে। যেখানে ১০০টির নিচে প্রেক্ষাগৃহ সেখানে কেন এবারের ঈদে এতগুলো সিনেমা? এখানে প্রেক্ষাগৃহ বরাদ্দের হিসাবটিও যদি ধরা হয় তাহলে একটি সিনেমা গড়ে ২০টি প্রেক্ষাগৃহও পায় না। এত কম বরাদ্দের প্রেক্ষাগৃহে একটি সিনেমা কী রকম ব্যবসা করতে পারে? তবে এর মধ্যে কোনো সিনেমা যদি গেল বারের পরাণ বা হাওয়া'র মতো দর্শকপ্রিয় হতে পারে তাহলে তখন বাকি সিনেমাগুলো প্রতিযোগিতা থেকে আপনাআপনিই দ্রম্নত ছিটকে পড়বে। এ নিয়ে নিশ্চয় সিনেমার নায়ক-নায়িকারাও একটা স্নায়ুর চাপে থাকবেন। কারা এই লড়াইয়ে টিকে থাকবেন আর কারা আলোচনা থেকে ছিটকে পড়বেন। সেই হিসাবে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট মহল থেকে বলা হচ্ছে এবারের মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলোতেই বোঝা যাবে ঢাকাই সিনেমা তার আপন কক্ষপথে টিকে থাকবে কি থাকবে না। আর তারই একটা 'কেস স্টাডি' হয়ে থাকবে এবারের ঈদ বাজার।

এবারের ঈদের ছবি নিয়ে কথা হয় চলচ্চিত্র বোদ্ধা ও প্রদর্শক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিয়া আলাউদ্দীনের সঙ্গে। যায়যায়দিনকে তিনি বলেন, এখন সারা বছর দর্শক খরার মধ্যেও ঈদ উপলক্ষে মুক্তি পাওয়া ছবিগুলোই আমাদের মনে আশা জাগাতে সাহায্য করে। কারণ, বাণিজ্যিকভাবে মানসম্পন্ন ছবিগুলোই উৎসবে মুক্তি দেয়ার প্রচেষ্টা থাকে পরিচালক ও প্রযোজকদের। তাই এই ছবিগুলোর প্রতি দর্শকের আকর্ষণ থাকে। তবে এবার একসঙ্গে এতগুলো ছবি মুক্তির যে খবর আসছে সেটা হবে বলে মনে হয় না। হয়তো পাঁচ/ছয়টি হতে পারে। আর মুক্তি দিলেই তো হবে না। ছবি ভালো হতে হবে। ছবি ভালো হলেই দর্শক হবে। বাংলাদেশে যে বছর সর্বোচ্চ ১৩টি সিনেমা মুক্তি পায় তখন আমি ছিলাম প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। তখন যে ছবি সবচেয়ে ভালো সে ছবিই মুক্তি দেওয়া হতো। কোনোটার চেয়ে কোনোটা কম ছিল না। এখনকার মতো অসম প্রতিযোগিতা ছিল না তখন। আমি মনে করি এবারে একসঙ্গে এতগুলো ছবি মুক্তি দেওয়ার মানে প্রেক্ষাগৃহকে একটা অসম প্রতিযোগিতার দিকে ঠেলে দেওয়া। তাই আমি বলব এভাবে অসম প্রতিযোগিতায় না গিয়ে ধীরেসুস্থে সিনেমা মুক্তি দেওয়াই ভালো।'

দেশের সফলতম বাণিজ্যিক ছবির নির্মাতা মালেক আফসারী যায়যায়দিনকে দেওয়া এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, 'এবারের ঈদের বাজারে বাংলাদেশের সিনেমা কেমন করবে বা করবে না এর উপরই নির্ভর করছে আমাদের দেশে ইন্ডিয়ান ছবি প্রচারের। যদি এবার আমাদের এখানকার সব ছবিই ফ্লপ হয় তাহলেই এদেশে ইন্ডিয়ান ছবি প্রবেশের দ্বার উন্মুক্ত হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে এবার একসঙ্গে এতগুলো ছবি মুক্তি দেওয়া মানে সেই ছবি ফ্লপ হওয়ার রাস্তাটিই আরও পরিষ্কার করে দেওয়া।'

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহানুর রহমান সোহান যায়যায়দিনকে বলেন, 'আমাদের চলচ্চিত্র তো এমনিতেই ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে সেক্ষেত্রে এবারের ঈদে এত সিনেমা মুক্তি দেওয়ার মানে হচ্ছে আমাদের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিকে আরও বেশি ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া। আর এটা যদি হয় আমাদের দেশে ইন্ডিয়ান ছবি প্রবেশের পথ সুগম করে দেওয়ার প্রচেষ্টা তাহলে আমি বলব, তাতেও কোনো লাভ হবে না। ইন্ডিয়ান ছবি আমাদের হলগুলোকে বাঁচাতে পারবে না। কারণ ওদের ছবি তো আরও নিম্নমানের।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে