সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

গানে নিয়মিত হচ্ছেন জেমস

বিনোদন রিপোর্ট
  ১৪ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

জেমস নামটি শুনলেই এ দেশের গানপিপাসুদের মনের পর্দায় ভেসে ওঠে ক্ষ্যাপাটে এক রকস্টারের অবয়ব; যার গান মুগ্ধ করেছে দেশের কোটি মানুষকে, কেড়ে নেয় হাজারও তরুণ-তরুণীর ঘুম! বাংলাদেশের রক মিউজিক ইতিহাসের সেই জীবন্ত কিংবদন্তি নগর বাউল খ্যাত এই ব্যান্ড তারকা এখন আর আগের মতো নিয়মিত নন গানে। এক সময় নতুন গান প্রকাশের পাশাপাশি নিয়মিত কনসার্ট করতেন বছর জুড়ে। কনসার্ট থেকে কনসার্টে ছুটতেন দেশ-বিদেশের নানা জায়গায়। সুরের মূর্ছনায় দর্শক-শ্রোতা মাতাতেন গানে গানে। দর্শক উন্মাদনায় ভরে উঠত জেমসের সব অনুষ্ঠান। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে অনেকটাই নিজেকে আড়ালে রেখেছেন এই শিল্পী। মাঝ সময়ে গান থেকে একেবারেই দূরে ছিলেন জেমস। বছর দুয়েক ধরে কালেভদ্রে দু/একটি কনসার্টেই সীমাবদ্ধ থেকেছেন তিনি। অসংখ্য ভক্ত অপেক্ষায় থাকলেও সেভাবে দেখা মেলেনি তার। তবে আবারও গানে সরব হচ্ছেন জেমস। নতুন গানের পাশাপাশি কনসার্টে নিয়মিত হচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় দেশ ও বিদেশে কয়েকটি কনসার্ট করেছেন এই তারকা শিল্পী। ৩০ জুলাই রোববার ব্যান্ড তারকা জেমসের গিটারের সুর ও গান আনন্দে মেতে উঠেন মিশিগানে বসবাসরত বাংলাদেশি আমেরিকানরা। দর্শক ও স্রোতাদের বাঁধভাঙা উলস্নাসে প্রায় ২০ হাজার মানুষের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে ওঠে ডিট্রয়েট সিটির বাংলা টাউন নামক জেইন ফিল্ডের মেলা প্রাঙ্গণ। তিন দিনব্যাপী ২২তম নর্থ আমেরিকা বাংলাদেশি ফেস্টিভ্যালের শেষদিন ছিল সেই দিন। ২২ বছর ধরে এই ফেস্টিভ্যালে গান করে আসছেন জেমস। বিকাল ৬টায় নগর বাউল জেমসের আসার কথা থাকলেও তাকে না পেয়ে তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করেন প্রিয় শিল্পীর গান শুনতে ও দেখতে মানুষ। রাত ১০টায় স্টেজে উঠেন গামছা পরিহিত বাবরি দোলানো চুলের বাহারে সজ্জিত জেমস। তার গানের সুরে উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়ে পুরো আঙ্গিনায়। দর্শকদের অনুরোধে একে একে অনেকগুলো গান পরিবেশন করেন এই তারকা শিল্পী। ভক্ত-দর্শকদের উদ্দেশ্যে নগর বাউলখ্যাত এই তারকা বলেন, 'বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে।' সঙ্গে এও জানান, জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভক্ত-দর্শকদের গান শুনিয়ে যেতে চান তিনি। ভক্ত-শ্রোতাদের ভালোবাসাই তাকে এগিয়ে যাওয়ার উৎসহ দেয়। স্টেজ শো'র পাশাপাশি এখন থেকে নিয়মিত নতুন গান প্রকাশের কথাও বলেন জেমস। জেমসের মুখপাত্র রুবাইয়াৎ ঠাকুর রবিন বলেন, 'গুরু আপনাদের জন্যই গান করেন। স্টেজ শো'র পাশাপাশি এখন নতুন গানের পরিকল্পনা চলছে। আশা করি, এর ঘোষণাও আসবে অতি শিগগিরই। গুরুর কথায় বলতে হয়, 'বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে'। কথা হবে গান হবে।' বিদেশে দর্শক মাতিয়ে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন জেমস। দেশে ফিরেই গত ৫ আগস্ট অংশ নেন দেশের একটি কনসার্টে। চলতি মাসে আরও কয়েকটি কনসার্টে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে তার। সঙ্গে প্রকাশ করবেন নতুন গানও। গত ঈদুল-ফিতরে 'সবই ভুল' শিরোনামে নতুন গান প্রকাশ পায় জেমসের। এর আগে ব্যান্ড মিউজিকে অসংখ্য আলোচিত গান উপহার দিয়েছেন জেমস। তার উলেস্নখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে 'তারায় তারায়', 'লেইস ফিতা লেইস', 'সুলতানা বিবিয়ানা', 'হতেও পারে এই দেখা শেষ দেখা', 'কবিতা তুমি স্বপ্নচারিণী', 'দুষ্টু ছেলের দল', 'দিদিমণি', 'দুঃখিনী দুঃখ করোনা', 'তোর সব কিছুতে নয়ছয়', 'বাবা কত দিন দেখি না তোমায়', 'গুরু ঘর বানাইলা কী দিয়া', 'লিখতে পারি না কোনো গান', 'এক নদী যমুনা', 'মা', 'বাংলাদেশ' ইত্যাদি। ব্যান্ডের পাশাপাশি এই শিল্পী গান গেয়েছেন সিনেমাতেও। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। শুধু দেশেই নয় ভারতের সিনেমাতেও গান গেয়ে দারুণ প্রশংসিত হয়েছেন তিনি।

১৯৬৪ সালের ২ অক্টোবর নওগাঁ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন বাংলা রক গানের এই উজ্জ্বল নক্ষত্র। তবে তার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। বাবা ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা। গান জেমসের পছন্দের হলেও তার পরিবার তা পছন্দ করতেন না। তাই গানের নেশায়, কিশোর বয়সেই বাবার ওপর অভিমান করে ঘর ছাড়েন। এরপর চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিং নামক একটি বোর্ডিংয়ে তার সঙ্গীতের ক্যারিয়ার শুরু হয়। ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ব্যান্ড দল 'ফিলিংস'। ১৯৮৭ সালে তার প্রথম অ্যালবাম 'স্টেশন রোড' প্রকাশ পায়। ১৯৮৮ সালে 'অনন্যা' অ্যালবাম মুক্তি পাওয়ার পর পরিচিতি পেতে শুরু করেন জেমস। এর চার বছর পর ১৯৯৩ সালে 'জেল থেকে বলছি', ১৯৯৬ সালে 'নগর বাউল' এবং ১৯৯৮ সালে 'লেইস ফিতা লেইস' ১৯৯৯ সালে 'কালেকশন অব ফিলিংস' অ্যালবামগুলো ফিলিংস ব্যান্ড থেকে বের হয়। পরবর্তীকালে ব্যান্ডের নাম বদলে রাখেন 'নগর বাউল'। তার অন্যান্য অ্যালবামগুলোর মধ্যে রয়েছে, নগর বাউল থেকে 'দুষ্টু ছেলের দল', 'বিজলি'। একক অ্যালবাম 'পালাবি কোথায়', 'দুঃখিনী দুঃখ করোনা', 'ঠিক আছে বন্ধু', 'আমি তোমাদেরই লোক', 'জনতা এক্সপ্রেস', 'তুফান', 'কাল যমুনা'।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে