রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
এ আর রহমানের সুর বিকৃতি

সরকারিভাবেই এটার নিষ্পত্তি হওয়া উচিত

শাহীন সামাদ- আপন বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল দেশের অন্যতম নজরুল সঙ্গীত শিল্পী। সঙ্গীত নিয়েই আশৈশব সাধনা তার। '৭১ সালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী। নজরুলের 'হামদ ও নাত' এর জন্যও দর্শক-শ্রোতাপ্রিয় তিনি। বাংলাদেশের সঙ্গীতে ও সংস্কৃতিতে যেখানেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে সেখানেই তিনি প্রতিবাদকণ্ঠী হয়ে দাঁড়িয়েছেন। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া 'পিপ্পা' সিনেমায় দেখা গেছে ভারতের বিখ্যাত সুরকার অস্কার বিজয়ী এ আর রহমান নজরুলের 'কারার ঐ লৌহকপাট' গানে সুরের তারতম্য করেছেন। এ নিয়ে সোচ্চার দুই বাংলা। শুধু সঙ্গীত নয়, তিনি বদলে দিয়েছেন গানের ধরন ও সুর। গীতিকার হিসেবে নজরুলকে ক্রেডিট দিলেও কম্পোজার হিসেবে লেখা হয়েছে রহমানের নাম। বাংলাদেশ থেকে শাহীন সামাদসহ আরও অনেক শিল্পী এজন্য তীব্র প্রতিবাদমুখর হয়েছেন। বিষয়টিসহ অন্যান্য প্রসঙ্গে এ বরেণ্য শিল্পীর সঙ্গে কথা বলেছেন মাতিয়ার রাফায়েল
নতুনধারা
  ১২ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

আপনার একটি জোরাল প্রতিবাদ দেখলাম- এখন পরবর্তী করণীয় কি?

কী করণীয় সেটার জন্যই এখন রওনা দিচ্ছি নজরুল ইনস্টিটিউটে। আজ (শনিবার) ওইখানে সংবাদ সম্মেলনে বসছি বিকাল ৩টায়। এ নিয়ে প্রতিবাদসহ যার যার অবস্থান থেকে অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বক্তব্য রাখবেন। আমিও আমার বক্তব্য ওখানে তুলে ধরব। কী বলব, সত্যি বলতে কি, এ নিয়ে এখন আমার ঘুম, খাওয়া-দাওয়াও ঠিকমতো হচ্ছে না। এখনো পর্যন্ত আমি কিছু খাইনি। আমি এখন এতো ব্যস্ততার মধ্যে আছি আজকে আমাকে এ নিয়েই চার জায়গায় দৌড়াতে হবে।

এ আর রহমান যে কাজটি করলেন এটাতে কি তার হীন উদ্দেশ্য ছিল?

আমি ঠিক জানি না তিনি এমন গর্হিত কাজটি কেন করতে গেলেন। তিনি কি এটা স্বাধীনভাবে করেছেন নাকি কারও দ্বারা আদিষ্ট হয়ে করেছেন এখন আমি এটা কী করে বলব। দেশ-বিদেশে থাকা কোটি কোটি মানুষের শোনা এ গানটির সুর কেমন এটা তো কারও না জানার কথা নয়। সে হিসেবে এটা তারও না জানার কথা নয়। যেভাবেই হোক, তারা কেন এটা করল সেটাই তো বুঝতে পারছি না। এর পেছনে অন্য কেউ ছিল কিনা তাও জানি না। আর যেসব শিল্পী ওই সুরে কণ্ঠ দিল, তারাও তো অলমোস্ট অপরাধী। শিল্পীরাও তো অত্যন্ত ন্যক্কারজনক কাজ করল এমন সুরে কণ্ঠ দিয়ে। গানটি রেকর্ড করানোর আগে তাদের কাছেও তো গানের সুরটি পাঠানো হয়েছিল। তখন তারা কেন জেনে-শুনে ওটা গাইল? তখনই প্রতিবাদ করল না কেন? ও, দুইটা পয়সা পাওয়ার লোভে? তারা কি জানত না, ওটা নজরুলের গান? তারা কি জানত না, নজরুলের সুর কেমন? তাহলে তারা কেন এ আর রহমানকে বলতে পারল না, এই সুর নজরুলের সুরের সঙ্গে যায় না? আর এ আর রহমানও বা কেন কোনো এক্সপেরিমেন্টের নামে এমন গর্হিত কাজটি করতে গেল? যে কাজটি করল সেটাও তো তার নামের সঙ্গে কিছুতেই যায় না। জানি না তিনি এখন এটা বুঝতে পারছেন কিনা। কারণ এখনও তো তার কোনো প্রতিক্রিয়া পাইলাম না। কাজেই কী করে বলব, এর পেছনে অন্য কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল কিনা!

আপনার কি মনে হয় ইচ্ছে করেই নজরুলকে ক্রেডিট না দিতে ওরা এমন করেছে?

আমি জানি না। তবে ওরা যেটা করল এটা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক কাজ করল। এজন্য সবার আগে আমাদের সরকার থেকেই প্রতিবাদ করা উচিত। কারণ, এই নজরুল যখন ওদের অনাদর অবহেলার মধ্যদিয়ে তার শেষ দিনগুলো পার করছিলেন তখন কিন্তু আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই ১৯৭২ সালে ওদের সেই অনাদৃত অবস্থা থেকে বাংলাদেশে নিয়ে এসে তাকে পূর্ণ মর্যাদার সঙ্গে বাংলাদেশে থাকতে দেন। কাজেই এখন আমরা ব্যক্তি উদ্যোগেই এর প্রতিবাদ করলে হবে না। বিষয়টি নিয়ে এখন সরকারিভাবেই নিষ্পত্তি হওয়া জরুরি। প্রতিবাদ আসা উচিত আধা সরকারি, স্বায়ত্ত সংস্থা, ইউনিভার্সিটি- সব জায়গা থেকে।

এই প্রতিবাদে কেমন সাড়া আসছে মনে করছেন?

প্রচন্ড। আমি তো ইউটিউবে দেখেছি পশ্চিমবঙ্গেও এর প্রতিবাদে সবাই সোচ্চার। সরা দুনিয়াতেই সোচ্চার। আমি গতকালই (শুক্রবার) জানতে পারি, এ আর রহমান কাজী নজরুল ইসলমের 'কারার ঐ লৌহকপাট' নামে বিখ্যাত গানটি তিনি নিজে সুর করে ইউটিউবে প্রচার করছেন। তারপর ওটা দেখে এবং শুনে তৎক্ষণাৎই আমি বিভিন্ন গণমাধ্যমে এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমি দেখলাম, কবি কাজী নজরুলসৃষ্ট এ গানটি নতুন সংগীতায়োজনে তৈরি করতে গিয়ে গানটির সারমর্মই বদলে ফেলেছেন তিনি। এজন্য আমি অত্যন্ত জোরাল কণ্ঠে বলতে চাই, দেশের সব নজরুল সংগীতশিল্পীদের একত্র হয়ে এর প্রতিবাদ জানানো জরুরি। শুধু তাই নয়, আমি আরও বলব, আশা করি কবি পরিবারের সবাই এগিয়ে আসবেন। আমরা জানি, এ দেশে নজরুলপ্রেমীর অভাব নেই। আমি আশা করব. তাদের সবাই এই ন্যক্কারজনক কান্ডের জন্য সোচ্চার হবেন।

ওপার বাংলাতেও তো এ নিয়ে বেশ প্রতিবাদ হচ্ছে!

হঁ্যা, ওখানেও এ নিয়ে সবাই ভীষণ প্রতিবাদ করছে। এ আর রহমান শুধু বাংলাদেশ থেকেই না, পশ্চিমবাংলা থেকেও তোপের মুখে আছেন। ওখানে ভারতের প্রখ্যাত বাঙালি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী পন্ডিত অজয় চক্রবর্তী তো এই ন্যক্কারজনক কাজের জন্য বিচার চাইছেন। তিনি বলেছেন, 'সুমিতাব্রত দত্ত এই গানটি কী চমৎকার গেয়েছিলেন! এভাবে গানটাকে বিকৃত করার আগে তার (সুমিতাব্রত) গাওয়া গানটা অন্তত শুনে নিতে পারতেন।' সারা দুনিয়াতেই এখন এ নিয়ে মানুষ সোচ্চার। প্রতিবাদ আসছে সোস্যাল মিডিয়ার সব নেটিজেনদের থেকে। কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী গান 'কারার ঐ লৌহকপাট' গানটির যে নতুন ভার্সন তৈরি করেছেন রহমান তা আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারি না। তিনি আমাদের অন্তরে আঘাত করেছেন। বাঙালিরা এতদিন গানটি যেভাবে শুনে আসছেন, তার সঙ্গে কোনো মিলই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যে গান শুনলে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে, এ আর রহমানের সুর করা এ গান তো সে গান না!

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে