শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চলে গেলেন অভিনেত্রী অঞ্জনা

বিনোদন রিপোর্ট
  ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
চলে গেলেন অভিনেত্রী অঞ্জনা
চলে গেলেন অভিনেত্রী অঞ্জনা

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমান মারা গেছেন (ইন্না লিলস্নাহি... রাজিউন)। শুক্রবার দিবাগত রাত ১টা ১০ মিনিটে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। গণমাধম্যকে অঞ্জনার মৃতু্যর খবরটি নিশ্চিত করেছেন শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর। অঞ্জনার বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। তিনি দুই মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন। জানা গেছে, তিন সপ্তাহ ধরে অসুস্থ ছিলেন এক সময়ের জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী। শুরুতে জ্বর ছিল। সারা শরীর কেঁপে জ্বর আসত। একটা সময় ওষুধ খেয়েও কাজ হচ্ছিল না। শেষে জানা যায়, তার রক্তে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এরপর অঞ্জনাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কয়েকদিন তাকে রাখা হয় সিসিইউতে। সেখানকার চিকিৎসায় শারীরিক অবস্থার আশানুরূপ উন্নতি না হওয়ায় হাসপাতাল বদলে গত বুধবার অঞ্জনাকে নেওয়া হয় বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ওই রাতেই তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। ভেন্টিলেশনে থাকা অবস্থায় তার অবস্থার কখনো উন্নতি, কখনো অবনতি হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত চলেই গেলেন এই অভিনেত্রী। বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী অঞ্জনা নৃত্যশিল্পী থেকে নায়িকা হয়ে সর্বাধিক যৌথ প্রযোজনা এবং বিদেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন।

অঞ্জনার অভিনয় জীবন শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। বাবুল চৌধুরী পরিচালিত 'সেতু' চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। তবে অঞ্জনা অভিনীত ও একই বছর মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র 'দসু্য বনহুর'। ছবিতে তার নায়ক ছিলেন সোহেল রানা। এ ছবির পর তাকে আর ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে হয়নি। ১৯৭৬ সালের এই সিনেমার পর টানা কাজ করেছেন অঞ্জনা। একে একে অভিনয় করেন 'মাটির মায়া', 'অশিক্ষিত', 'চোখের মণি', 'সুখের সংসার', 'জিঞ্জির', 'অংশীদার', 'আনারকলি', 'বিচারপতি', 'আলাদীন আলীবাবা সিন্দাবাদ', 'অভিযান', 'মহান' ও 'রাজার রাজা', 'বিস্ফোরণ', 'ফুলেশ্বরী', 'রাম রহিম জন', 'নাগিনা', 'পরিণীতা' ইত্যাদি বাণিজ্যিক সফল সিনেমায়। জীবদ্দশায় গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অঞ্জনা জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ ছাড়াও তিনি অভিনয় করেছেন ৯টি দেশের ১৩টি ভাষার সিনেমায়।

1

অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, আন্তর্জাতিক পুরস্কার, একাধিক জাতীয় স্বর্ণপদক ও বাচসাস পুরস্কার পেয়েছেন কয়েকবার। নৃত্যশিল্পী হিসেবেও অঞ্জনা পেয়েছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক স্বীকৃতি। 'পরিণীতা' ও 'গাঙচিল'-এ অভিনয়ের জন্য দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন। অঞ্জনা বিয়ে করেন পরিচালক আজিজুর রহমান বুলিকে। তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।

অভিনয়ের পাশাপাশি অঞ্জনা চলচ্চিত্র প্রযোজনাও করেছেন। তার প্রযোজিত চলচ্চিত্রগুলো হলো- 'নেপালী মেয়ে', 'হিম্মতওয়ালী', 'দেশ বিদেশ', 'বাপের বেটস', 'রঙিন প্রাণ সজনী', 'শ্বশুরবাড়ি', 'লাল সর্দার', 'রাজা রানী বাদশা', 'ডান্ডা মেরে ঠান্ডা', 'বন্ধু যখন শত্রম্ন'।

তার মৃতু্যতে দেশের বিনোদন জগতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সহকর্মী শিল্পী ও পরিচালকরা তার মৃতু্যতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের অপূরণীয় ক্ষতির কথা উলেস্নখ করে তারা বলেছেন, 'অঞ্জনা ছিলেন এক বহুমুখী প্রতিভা। তার চলে যাওয়া আমাদের জন্য এক বিরাট শূন্যতা।' অভিনেত্রী অঞ্জনার মৃতু্যতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি এবং বিভিন্ন সংগঠন শোকবার্তা জানিয়েছে। যুক্তরা'্র থেকে নায়ক জায়েদ খান ফেসবুকে লিখেছেন, 'কত স্মৃতি আপনার সঙ্গে, কীভাবে ভুলব? না ফেরার দেশে চলে গেলেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র শিল্পী অঞ্জনা সুলতানা। তার জন্য দোয়া কামনা করছি।' নায়কা অমিত হাসান লিখেছেন, 'অঞ্জনা আপু আর দেখা হলো না। না ফেরার দেশে আলস্নাহ আপনাকে ভালো রাখুক। আমিন।'

চিত্রনায়িকা প্রার্থনা ফারদিন দীঘি লিখেন, তোমার কথা অনেক মনে পড়বে আন্টি। অনেক ভালবাসি তোমাকে। মৃতু্যর খবর শুনে পূজা চেরি লিখেছেন, ভেতরটা ধুঁক করে উঠলো। ভালো থাকবেন আপনি যেখানেই থাকুন। অভিনেত্রী রুমানা ইসলাম মুক্তি লিখেছেন, 'ইন্না লিলস্নাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন, ধরে রাখতে পারলাম না তোমাকে, জানি না কতটা ক' নিয়ে চলে গেছ। তোমার আত্মাটা যেন শান্তি পায় সেই দোয়াটা থাকল, অঞ্জনা আন্টি তুমি ভালো থেকো যেখানেই থাকো।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে