শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শুভ জন্মদিন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা

বিনোদন রিপোর্ট
  ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
শুভ জন্মদিন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা

উপমহাদেশের বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে আবির্ভূত একজন প্রথিতযশা রবীন্দ্র্রসঙ্গীত শিল্পী। শুধু নিজ দেশ নয়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও তিনি ব্যাপকভাবে সমাদৃত। আজ তার জন্মদিন। ১৯৫৭ সালের ১৩ জানুয়ারি বাংলাদেশের রংপুর জেলায় এক উপাধ্যক্ষের পরিবারে এই গুণী শিল্পী জন্মগ্রহণ করেন। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা তার গুণানুরাগীদের কাছে শুধু 'বন্যা' নামেও পরিচিত। কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিষ্যদের মধ্যে তাকেই সবচেয়ে জনপ্রিয় গণ্য করা হয়। সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে কাজের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় এবং সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার 'স্বাধীনতা পুরস্কার' অর্জন করেছেন।

ছোটবেলা থেকে সঙ্গীত নিয়েই রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার ধ্যানজ্ঞান। তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত ছাড়াও ধ্রম্নপদী, টপ্পা ও কীর্তন গানের ওপর শিক্ষা লাভ করেছেন। গান দিয়ে তিনি কেবল বাংলাদেশ নয়, ভারতেও ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন।

1

তিনি প্রাথমিক অবস্থায় বাংলাদেশের ছায়ানট ও পরে ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে শিক্ষক হিসেবে পান শান্তিদেব ঘোষ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীলিমা সেন, এবং অশেষ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো শিক্ষকদের। তিনি বাংলাদেশে ফিরে অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা করেন এবং বুলবুল ললিতকলা অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হন। কিন্তু ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তার অধ্যয়ন সংক্ষিপ্ত করতে বাধ্য হন। তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত ছাড়াও ধ্রম্নপদী, টপ্পা ও কীর্তন গানের ওপরও শিক্ষা লাভ করেন। তার গানের অ্যালবাম পশ্চিম বাংলা ও বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি সুরের ধারা নামের একটি সঙ্গীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করেন। ২০০২ সালে তিনি আনন্দ সঙ্গীত পুরস্কার লাভ করেন। কণ্ঠ দেওয়ার পাশাপাশি রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা হারমোনিয়াম ও এস্রাজ বাজাতে পারেন।

শিক্ষাগ্রহণ সম্পন্ন হওয়ার পর থেকেই তিনি তার সঙ্গীতের প্রদর্শন, নির্ভুল উচ্চারণ এবং সবচেয়ে কঠিন ও অপ্রচলিত গানগুলোও গাওয়ার আগ্রহের কারণে বিশ্বভারতী ধারার একজন গুরু হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। তিনি অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন এবং বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতে তার বহুসংখ্যক অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে স্বপ্নের আবেশে, সকাল সাঝে, ভোরের আকাশে, লাগুক হাওয়া, আপন পানে চাহি, প্রাণ খোলা গান, এলাম নতুন দেশে, সুদূরের মিতা, মাটির ডাক, কালের সাথী, গেঁথেছিনু অঞ্জলি, মনের মাঝে যে গান বাজে, মোর দরদিয়া, সুরের আসনখানি, সুরের খেয়া, পাতার ভলা ভাষাই, শ্রাবণ তুমি ও ছিন্নপত্র অ্যালবামগুলো বেশি সমাদৃত হয়। বহু সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। কুড়িয়ে যাচ্ছেন শ্রোতা-দর্শকের আকুণ্ঠ ভালোবাসা। দেশ-বিদেশে অসংখ্য খ্যাত বিদগ্ধজনের প্রশংসা পেয়েছে তার সঙ্গীত পরিবেশনা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে প্রদত্ত বাংলাদেশের জাতীয় এবং সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার 'স্বাধীনতা পুরস্কার' ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সর্বোচ্চ পুরস্কার 'বঙ্গভূষণ' পদক দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে তাকে। ২০ মে ২০১৭ সন্ধ্যায় কলকাতার নজরুল মঞ্চে এই রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীর হাতে ২০১৭ সালের 'বঙ্গভূষণ' পুরস্কার তুলে দেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বিশিষ্ট নজরুলসঙ্গীত শিল্পী ফিরোজা বেগমের স্মৃতি রক্ষার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক ট্রাস্ট ফান্ড' কর্তৃক প্রদত্ত 'ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক ও পুরস্কার-২০১৭' পেয়েছেন এই প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি মন্ত্রক প্রদত্ত 'সঙ্গীত সম্মান পুরস্কার', শ্রেষ্ঠ নারী রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী হিসেবে আনন্দ সঙ্গীত পুরস্কার, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫০তম জন্মবার্ষিকীতে সিটি ব্যাংক এনএ প্রদত্ত গানে গানে গুণীজন সংবর্ধনা এবং সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস অর্জন করেছেন তিনি।

এছাড়া, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে রবীন্দ্র সঙ্গীতের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক 'পদ্মশ্রী' পদকে ভূষিত করা হয়েছে। ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে ২০২৪ সালের জন্য এই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে একথা বলা হয়। 'পদ্মশ্রী' পুরস্কার ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কারগুলোর মধ্যে একটি। 'পদ্মবিভূষণ', 'পদ্মভূষণ' এবং 'পদ্মশ্রী' নামে তিনটি বিভাগে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু গত বছর ১৩২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে 'পদ্ম' সম্মাননার জন্য মনোনীত করেছেন। মার্চ বা এপ্রিলে রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিক ভারতের রাষ্ট্রপতি এই পুরস্কার প্রদান করেন। পুরস্কারের তালিকায় ৫ জনকে পদ্মবিভূষণ, ১৭ জনকে পদ্মভূষণ এবং ১১০ জনকে পদ্মশ্রী পুরস্কার দেয়া হয়েছে। পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে ৩০ জন মহিলা এবং ৮ জন বিদেশি এবং ৯ জন মরণোত্তর পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিও রয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা দুই সন্তানের মা। তার স্বামী জিএইচ চৌধুরী। বন্যার মেয়ে প্রিয়দর্শিনী, ছেলে অর্ক দুইজনেই যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে লেখাপড়া শেষ করে সেখানেই চাকরি করছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে