শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুগদায় প্রথম পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকাদান

আমানুর রহমান
  ২৬ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

করোনার টিকা দেওয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল মুগদা, ঢাকা কর্তৃপক্ষ। বুধবার (২৭) জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে টিকার কার্যক্রম উদ্বোধন করার পরদিন মুগদা জেনারেল হাসপাতালে টিকা দেওয়া শুরু হবে। হাসপাতালে করোনা প্রতিরোধের সম্মুখসারির প্রথম যোদ্ধা হিসেবে স্বাস্থ্যকর্মীদের এই টিকার দেওয়ার জন্য মনোনীত করা হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক ডা. অসীম কুমার নাথ যায়যায়দিনকে বলেন, 'ডিজি অফিসের নির্দেশনার আলোকে সব প্রস্তুতি

সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরপরই আমরা টিকার ডোজ দিতে পারব। তবে, টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হবে, তার পরদিন অর্থাৎ ২৮ জানুয়ারি থেকে।' হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, টিকার ডোজ দেওয়ার জন্য প্রথম পর্যায়ে এক হাজার ৪২৭ জনকে প্রস্তুত ও চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের সবাই স্বাস্থ্যকর্মী।

গতকাল দুপুরে হাসপাতাল পরিদর্শন করে দেখা গেছে, টিকা দেওয়ার জন্য বিশেষভাবে চিহ্নিত এলাকাটিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। সব কিছুই ঝকঝকে তক-তক। বর্তমান সরকারের আমলেই নির্মিত ও চালু করা নতুন এই হাসপাতালটির টিকা প্রদান কেন্দ্রেই করোনার টিকার ডোজ দেওয়া হবে। করোনার টিকার ডোজ দেওয়ার সময় অন্য যেসব টিকা নিয়মিত ও বিশেষ বিশেষ কর্মসূচির আওতায় দেওয়া হয়, সেটি পাশে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সে কার্যক্রমও যেন ব্যাহত না হয়, সেদিকেও নজর রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. অসীম কুমার নাথ বলেন, 'টিকার সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও মান বজায় রাখার জন্য সবরকম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুসরণ করা হয়েছে।'

টিকার ডোজ দেওয়ার জন্য পুরো প্রক্রিয়াকে তিন ভাগে সাজানো হয়েছে। এই তিন ভাগের মধ্যে রয়েছে- টিকার সংরক্ষণ, টিকার ডোজ প্রদান কেন্দ্র এবং ডোজ প্রদানের পর পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসা কার্যক্রম। সর্বপ্রথম রয়েছে টিকা পাওয়ার পরই সেগুলোর সংরক্ষণ। বিশেষ শীতল সংরক্ষণাগার এবং টিকার মান কোনো অবস্থায়ই যেন প্রশ্নের মুখে না পড়ে, সেটা নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানান পরিচালক ডা. নাথ।

পরিচালক জানান, 'টিকার ডোজ প্রদানের জন্য একটি বিশেষ টিম কাজ করার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। এই টিমের সহায়তার জন্য আরও কয়েকটি উপ-টিম কাজ করবে। মূল টিমের বাইরে একটি বিশেষজ্ঞ টিম প্রস্তুত রেখে দায়িত্বও বন্টন করা হয়েছে। এই বিশেষ টিমে একজন করে হৃদরোগ, একজন মেডিসিন এবং একজন অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ থাকবেন। তারা সবাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে সিনিয়র প্রফেসর।'

দেখা গেছে, ভ্যাকসিনেশন সেন্টারকে বিশেষভাবে সাজানো হয়েছে। যারা টিকার ডোজ নিতে আসবেন, প্রথমে তাদের অপেক্ষমান এলাকায় বসানো হবে। সেখানে নিয়োজিত একটি মেডিকেল টিম তাদের শারীরিক অবস্থা চেকআপ করবেন। তাদের ছাড়পত্রের পর টিকা নিতে আসা ব্যক্তিকে টিকার ডোজ প্রদান করা হবে। এই টিকা অন্যসব টিকার মতোই বিশেষ কিছু নয়। তবে, যেহেতু নতুন টিকা, তাই এর আগে কিছুটা সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। প্রথম ধাপের প্রথম দিন ১০০ স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেওয়া হবে। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে এই হার বাড়ানো হবে।

টিকা দেওয়ার পর থেকে টিকা গ্রহণকারীকে প্রথমে ৩০ মিনিট পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। এখানে আরেকটি মেডিকেল টিম থাকবে। চিকিৎসার সব সুবিধা নিয়ে ৩০ মিনিটে যদি কারও কোনো সমস্যা দেখা দেয়, এর জন্য। এই টিমের সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য একটি টেলিফোন নম্বর দেওয়া হবে। এই নম্বর দিয়ে ডোজ গ্রহণকারীদের টেলিমেডিসিন সেবা দেওয়া হবে।

ডা. অসীম কুমার নাথ আরও জানান, 'টিকার ডোজ গ্রহণকারী কোনো ব্যক্তি যদি মনে করেন, টিকা নেওয়ার পর তিনি আরও কয়েকদিন পর্যবেক্ষণে থাকবেন, তার জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে হাসপাতালের মধ্যে। টিকা নেওয়ার পর পরবর্তী ২৪ ও ৪৮ দিন পর্যবেক্ষণ সময় ধরে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার প্রস্তুতি রেখেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।'

টিকার ডোজ নিয়ে আতঙ্ক বা কোনো ধরনের শঙ্কা না করার পরামর্শ ও টিকার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে পরিচালক ডা. অসীম বলেন, টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার বড় সুনাম ও অনেক অর্জন রয়েছে। একদিনেই সারাদেশে তিন কোটি টিকার ডোজ দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে বাংলাদেশের। ফলে কোনো সমস্যার আশঙ্কা নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে