শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বারবার সিদ্ধান্ত বদলে টিকা নিতে ভোগান্তি

এ পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৬১৩ জন মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২২ লাখ ৯৮ হাজার নিবন্ধন
জাহিদ হাসান
  ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০

করোনাভাইরাসের টিকা দেশে আসা থেকে শুরু করে মানবদেহে প্রয়োগ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে সরকার সংশ্লিষ্টদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। বিশেষ করে টিকার নিবন্ধন প্রক্রিয়া, খুদে বার্তা নির্দেশনা ও পরবর্তী ডোজের তারিখ সংক্রান্ত ব্যাপারে নীতিনির্ধারকদের একাধিকবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে অনেককেই জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ভুক্তভোগীরা এই সমস্যার আশু সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জোরালো ভূমিকা পালনের দাবি জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার দেশে ৪০ বছরের বেশি বয়সি নাগরিক ও অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের টিকা নিতে নিবন্ধনের সুযোগ দিয়েছে। তবে নিবন্ধন করতে হয় অনলাইনে, সরকারের সুরক্ষা ওয়েবসাইটে গিয়ে। কয়েক দিন আগেও টিকাকেন্দ্রে গিয়ে তাৎক্ষণিক নিবন্ধনের সুযোগ ছিল। যা গত ১১ ফেব্রম্নয়ারি থেকে আকস্মিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন অনলাইন ছাড়া বিকল্প নেই। এসব কারণে বয়স্ক ও নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যে যাদের ইন্টারনেট সুবিধা ও দক্ষতা নেই তাদের টিকা নিবন্ধনে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

গত কয়েকদিন রাজধানীর একাধিক এলাকা ঘুরে সেখানে অনেক স্টেশনারি দোকানে টাকার বিনিময়ে সরকারের সুরক্ষা ওয়েবসাইটে করোনা টিকার নিবন্ধনে সহায়তা করতে দেখা গেছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে

কথা কথা বলে জানা যায়, যারা টিকা নিতে আগ্রহী, কিন্তু ইন্টারনেট সুবিধা নেই বা ব্যবহারে দক্ষ নন, তারা কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে টাকার বিনিময়ে নিবন্ধন করিয়ে নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের কাছ থেকে ৫০ থেকে ১০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।

আব্দুর রহমান নামে মোহাম্মদপুর এলাকার এক ব্যক্তি যায়যায়দিনকে বলেন, বাবার টিকার জন্য নিজে রেজিস্ট্রেশনের পর মুঠোফোনে খুদেবার্তা আসছে। সেখানে টিকাগ্রহীতার নাম, তারিখ ও কেন্দ্র উলেস্নখ্য রয়েছে। টিকা নিতে জাতীয় পরিচয়পত্র ও টিকা সংগ্রহ কার্ড নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। কিন্তু টিকা কার্ড সংগ্রহের ব্যপারটি তিনি বুঝতে পারেননি। পরে কম্পিউটারের দোকানে গেলে বলা হয় কার্ড সংগ্রহ করতে সুরক্ষা ওয়েবসাইটের নির্ধারিত ট্যাবে ঢুকে ৫ মিনিটের মধ্যে (ওয়ানটাইম পাসওয়ার্ড) ওটিপি পিন নম্বর বসাতে হয়। আর দোকান থেকে টিকা কার্ড সংগ্রহে টাকা দিতে হবে।

তবে গত ১৩ ফেব্রম্নয়ারি স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান জানিয়েছেন, যাদের বয়স বেশি বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষ, তারা জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে টিকাদান কেন্দ্রে গেলে তাদের নিবন্ধন করে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করার কথা ভাবছে সরকার। স্বাস্থ্য সচিব বলেন, গ্রামের মানুষের আগ্রহ বাড়াতে প্রয়োজনে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

এদিকে সব টিকাদান কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও অনেকেই তা করছে না। সোমবার তেজগাঁওয়ের জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউট (ইনএনটি) হাসপাতালে দুপুর ১টার মধ্যে টিকা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী আড়াইটা পর্যন্ত টিকা দেওয়ার কথা। গত বৃহস্পতিবার টিকাকেন্দ্রগুলাতে স্পট নিবন্ধন বন্ধ করে দেওয়ায় ওইদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মতো বড় কেন্দ্রগুলোতে টিকা নিতে আসা সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে দেখা যায়। এছাড়া শনিবার পুরান ঢাকার মহানগর জেনারেল হাসপাতালে কারিগরি ত্রম্নটির কারণে কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়।

এদিকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবিলায় গণ-টিকাদান শুরুর নবম দিনে অর্থাৎ গতকাল মঙ্গলবার একদিনে ২ লাখ ২৬ হাজার ৯০২ জন মানুষ টিকা নিয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্র যায়যায়দিনকে জানিয়েছে দেশে গত ২৭ জানুয়ারি টিকা কার্যক্রম শুরুর পর গতকাল পর্যন্ত টিকাগ্রহীতার সংখ্যা ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৬১৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ৯ লাখ ২৩ হাজার ৫১৬ জন এবং নারী ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৯৭ জন।

প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার ঢাকা বিভাগে ৭২ হাজার ৭৩৯ জন, ময়মনসিংহে ৯ হাজার ৮৭২ জন, চট্টগ্রামে ৪৯ হাজার জন, রাজশাহীতে ২৪ হাজার ৯২০ জন, রংপুরে ২০ হাজার ৮১১ জন, খুলনায় ২৫ হাজার ২৬ জন, বরিশালে ১২ হাজার ১৩৬ জন এবং সিলেটে ১২ হাজার ৩৯৮ জনসহ নবম দিন আট বিভাগে গতকাল ২ লাখ ২৬ হাজার ৯০২ জন করোনা টিকা নিয়েছেন। আর দেশে ড্রাই রানসহ এ পর্যন্ত ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৬১৩ জন টিকা নিয়েছেন। এখন পর্যন্ত টিকা নেওয়ার পর ৪৯০ জনের শরীরে সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালের চিত্র :

অন্যান্য দিনের মতো মঙ্গলবার ঢাকা মহানগরীর হাসপাতালগুলোর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৫৩২ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭৮০ জন, স্যার সলিমুলস্নাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭৯০ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮১৮ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ হাজার ৫ জন, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ৭১১ জন, ?কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৯২০ জন, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউটে ১ হাজার ৪৩৩ জন, শিশু ও মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে (মাতুয়াইল) ৭৯০ জন, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ৩ হাজার ৬৪৬ জন। সব মিলে গত একদিনে ঢাকা মহানগরে ৪৬টা হাসপাতালে মোট ৩৪ হাজার ৪৪ জন করোনা টিকা নিয়েছেন।

জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্যবিদরা যায়যায়দিনকে বলেন, প্রথম ডোজ টিকা দেওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ কতদিন পর দেওয়া হবে সে ব্যাপারে সরকার এখন পর্যন্ত তিনবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে। অথচ কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণবিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটি প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের মধ্যকার টিকা প্রয়োগের ব্যবধান ৮ থেকে ১২ সপ্তাহের পরামর্শ দিয়েছিলেন। মাঝখানে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে টিকাগ্রহীতাদের কার্ডে ৪ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজের কথা লিখে দেওয়া হয়। এখন পুনরায় খুদেবার্তা দিয়ে ও গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে ৮ সপ্তাহের কথা বলা হচ্ছে।

একইভাবে দেশে করোনা টিকার প্রয়োগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জাতীয়ভাবে কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরি করা খসড়া অনুযায়ী প্রথম ধাপের ৫০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করে। তবে টিকার ড্রাই রান শুরুর পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তনের এনে ৩৫ লাখ টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায়। সর্বশেষ আগামী ২২ থেকে ২৫ ফেব্রম্নয়ারির মধ্যে ভারত থেকে দ্বিতীয় চালানে ৫০ লাখের পরিবর্তে ২০ থেকে ৩০ লাখ টিকা দেশে আসবে বলা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে