শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুখ থুবড়ে পড়েছে ধান চাল সংগ্রহ অভিযান

আলতাব হোসেন
  ২৫ জুন ২০২১, ০০:০০

চালের দামের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টানতে মৌসুমের শুরুতেই অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ধান-চাল সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। ধান-চালের ভরা মৌসুমেও সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি খাদ্য মন্ত্রণালয়। আমনের পর এবার বোরো মৌসুমেও ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান মুখ থুবড়ে পড়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের টোকেন বাণিজ্যের কারণেও অনেক জেলা ও উপজেলায় সংগ্রহ অভিযান ভেস্তে যেতে বসেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সাড়ে ছয় লাখ টন ধান কেনার কথা থাকলেও দুই মাসে কেনা হয়েছে মাত্র সোয়া দুই লাখ টন ধান। ৩০ জুনের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার পুরো ধান ক্রয়ের টার্গেট থাকলেও এখনো সংগ্রহ হয়নি লক্ষ্যমাত্রার ৬৬ শতাংশ ধান।

চালের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে গত ২২ এপ্রিল খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে মোট ১৮ লাখ টন ধান ও চাল কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে মিলারদের কাছ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে ১০ লাখ টন সেদ্ধ চাল, ৩৯ টাকা কেজি দরে দেড় লাখ টন আতপ চাল এবং কৃষকদের কাছ থেকে ২৭ টাকা কেজি দরে সাড়ে ৬ লাখ টন ধান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

চালের দাম কমাতে সরকারের সংগ্রহ বাড়াতে দ্রম্নত অর্থ ছাড় করা হয়। এরপর ২৮ এপ্রিল থেকে ধান এবং ৭ মে থেকে চাল কেনা শুরু করে খাদ্য অধিদপ্তর। এরপর থেকে খাদ্য মজুত বাড়াতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও সাড়া মেলেনি। মঙ্গলবার পর্যন্ত খাদ্য অধিদপ্তরে ১৩ লাখ ২৩ হাজার টন খাদ্যশস্য মজুত আছে। এর মধ্যে চাল ১০ লাখ ১৮ হাজার টন। গম আছে ৩ লাখ পাঁচ হাজার টন।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে বোরো

সংগ্রহ অভিযানে ২২ জুন পর্যন্ত ধান কেনা হয়েছে দুই লাখ ২১ হাজার ৫৯৮ টন, বোরোর সেদ্ধ চাল চার লাখ ৮৩ হাজার ৩৪৯ টন। আতপ চাল সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৩৮ হাজার ৬৯৩ হাজার টন।

দুই মাস পেরিয়ে গেলেও ধান-চাল সংগ্রহ হয়েছে ৩৪ শতাংশ। সময় বাকি আছে আর এক সপ্তাহ। এখনো ৬৬ শতাংশ ধান-চাল সংগ্রহ হয়নি।

গত বছর দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় আমনের ফলন কম হয়। একই সঙ্গে করোনাভাইরাস মহামারিতে কর্মহীন মানুষের একটা বড় অংশকে সরকারের মজুত থেকে খাদ্য সহায়তা দিতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে দেশের দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের ৪২ লাখ মানুষের কাছে ১০ টাকা কেজিতে চাল বিক্রি করে সরকার। দামে বনিবনা না হওয়ায় আমন মৌসুমে চালকল মালিকরাও সরকারের কাছে চাল বিক্রি করেনি। বোরো মৌসুমেও দুই লাখ টন খাদ্যশস্য কম উৎপাদন হয়। চালের দাম বাড়বে এমন আশায় কৃষকরা ঘরে ধান মজুত রাখে। এসব কারণে সরকারের মজুত কমে যায়। এই সুযোগে বাজারে চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত আছে।

এদিকে সংগ্রহ অভিযান সফল করতে খাদ্যভবনের সম্মেলন কক্ষে চালকল মালিক ও চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করা হলেও চালের দাম নাগালে আসেনি। চালের মূল্য বেঁধে দেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। ফলে সরকারের আন্তরিকতার সুফল পায়নি ভোক্তারা। বেসরকারি পর্যায়ে ৩২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বারবার চিঠি দিয়ে চাল আমদানির সময়সীমা বেঁধে দিলেও তারা এখনো চল সংগ্রহ করেনি।

এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার যায়যায়দিনকে বলেন, সারাদেশে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকের লাভ ধরে ধান ও চালের ন্যায্য দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। তারপরও খাদ্য অধিদপ্তর কেন ধান-চাল কিনতে পারছে না, তা খতিয়ে দেখা হবে। খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। ?অভ্যন্তরীণ বোরো সংগ্রহ অগ্রগতি নিয়ে প্রতিদিনই জেলা পর্যায়ের খাদ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে সংগ্রহ অভিযান সফল করার তাগাদা দিচ্ছি। সর্বশেষ তাদের অভ্যন্তরীণ বোরো সংগ্রহ ৩০ জুনের মধ্যেই অন্তত ৭৫ শতাংশ অর্জন করার বাধ্যবাধকতা দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, মিলাররা কেন চাল সরবরাহে গড়িমসি করছেন তা জানাতে বলা হয়েছে। তাদের অন্যায্য কোনো সুবিধা দেওয়া হবে না। মিল মালিকদের কাছ থেকে চুক্তি মোতাবেক ধান-চাল সংগ্রহ করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সময় বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি এখনো। চালের দাম যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে সে লক্ষ্যে স্থানীয় জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সমন্বয় করে খাদ্য সংগ্রহ অভিযান সফল করতে চেষ্টা চলছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে