শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডিএনসিসি হাসপাতাল নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় কর্তৃপক্ষ

লাইজুল ইসলাম
  ২৮ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০
আপডেট  : ২৮ নভেম্বর ২০২১, ০৯:২১

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সামনের দিনগুলোতে কোন ধরনের রোগী ওই হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হবে- তা এখনো জানে না কেউ। ঢাকার সব হাসপাতালকে নন-কোভিড ঘোষণা করে আপাতত একমাত্র কোভিড হাসপাতাল হিসেবে এই হাসপাতালকে রাখার কথা বলা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত এখনো আসেনি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এক হাজার শয্যার হাসপাতালে মাত্র ৭০ জন রোগী ভর্তি আছে। বর্তমানে কোভিড পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক থাকার কারণে হাসপাতালে রোগী থাকে ৬৫-৭৫ জন। বাকি শয্যাগুলো খালি পড়ে থাকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখানে ২১২টি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) আছে। এইচডিইউ আছে ৩শ' আর সাধারণ বেড আছে ৫শ'। প্রত্যেকটি শয্যায় সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা রয়েছে।

হাসপাতালটির এক কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পুরো হাসপাতালটি এখন শূন্য বললেই চলে। বেশির ভাগ সিট ফাঁকা। বালুর আস্তরণ যাতে না পড়ে সেজন্য কাজ করছি। কিন্তু লোকবল কম থাকায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরও কোনো কিছু যাতে নষ্ট না হয়, সেদিকে নজর রেখে কাজ করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, কয়েকমাস আগেও হাসপাতালটির সব শয্যায় রোগী ভর্তি ছিল। রোগী

থাকায় বেডগুলোতে অন্তত বালুর আস্তরণ জমত না। এখন রোগী নাই, তাই শয্যাগুলো ব্যবহার হয় না।

একটি সূত্র জানায়, এই হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের ভর্তির সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু কোনো এক কারণে তা বন্ধ হয়ে গেছে। অধিদপ্তরের চিন্তা ছিল এখানে করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু চিকিৎসাও চলবে। কিন্তু ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষের চাপে তা আর সম্ভব হয়নি। তাই বর্তমানে শুধু করোনা রোগী ভর্তি আছে হাসপাতালটিতে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল বিভাগের পরিচালক ফরিদ মিয়া বলেন, 'হাসপাতালটি নিয়ে এখনো আমার কাছে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে শুনেছিলাম এখানে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হবে। যেহেতু করোনা রোগী কম, তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।'

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান বলেন, ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালটিকে একটি জেনারেল হাসপাতাল করার পরিকল্পনা ছিল। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের মতো। কিন্তু করোনার কারণে এটিকে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে পরিণত করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এই হাসপাতালকে কোভিড হাসপাতাল হিসেবে রেখে দেওয়ার কথা বলেছি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে। তারা আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। যেহেতু রোগীর সংখ্যা কম, তাই একটি কোভিড হাসপাতাল রাখাই ভালো। অন্যগুলোতে নন-কোভিড চিকিৎসা চলতে পারে। এতে সাধারণ রোগীরাও বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা পাবে। যদি কোভিড রোগী বৃদ্ধি পায় তখন না হয় আবার সব হাসপাতালে কোভিড ইউনিট চালু করা যাবে। এটা যেহেতু বড় হাসপাতাল, তাই রোগীদের আপাতত চাপ সামলাতে পারবে।

তিনি বলেন, আমাদের এই হাসপাতালটি এক হাজার শয্যার। এখানে বিশাল আইসিইউ ব্যবস্থা রয়েছে। সাধারণ শয্যা সংখ্যাও কম না। তাই আমরা আপাতত সব কোভিড রোগীর চিকিৎসা দিতে প্রস্তুত রয়েছি। হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্স বা আন্য কোনো কিছুরই অভাব নেই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ডিএনসিসি কোভিড হাসপালতটিকে কীভাবে ব্যবহার করা হবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার পর এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেশ খানিকটা কমেছে গত কয়েকমাসে। তিনশ'র নিচে রয়েছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এতে করে হাসপাতালে করোনা রোগীর সংখ্যাও কমেছে। এই কারণে করোনা ইউনিটের সিট ফাঁকা রয়েছে ৯০ শতাংশের বেশি।

প্রসঙ্গত, করোনা প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি বড় হাসপাতাল তৈরির চিন্তা করে। যেখানে ভবন আছে শুধু অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। ঠিক এমন সময় উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র তাদের মহাখালির একটি মার্কেটকে হাসপাতাল বানানোর প্রস্তাব দেয়। তাতেই সাড়া দিয়ে মহাখালির উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি মার্কেটকে ডিএনসিসি কোডিভ ডেডিকেটেড হাসপাতালে রূপান্তর করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে