শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজপথে অনড় শিক্ষার্থীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে

ম যাযাদি রিপোর্ট
  ২৯ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০

নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠা, নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসান হত্যার বিচার ও গণপরিবহণে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়াসহ ৯ দফা দাবিতে রাজপথ অবরোধ করে রোববারও আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথেই অনড় থাকবেন বলে জানিয়েছেন তারা। অর্ধেক ভাড়ার দাবিতে এদিন শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার রাপা পস্নাজার সামনে বিক্ষোভ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজ ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েকশ' শিক্ষার্থী অংশ নেন এ আন্দোলনে। দুপুর ১২টা থেকে সড়কে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করলে মিরপুর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে রাজধানীর সড়কে যানজট

ছড়িয়ে পড়ে। গাড়ি থেকে নেমে বিকল্প বাহন হিসেবে রিকশা ও মোটর সাইকেলে বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে বহু যাত্রীকে। শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হলেও অ্যাম্বুলেন্স ও ওষুধ কোম্পানির গাড়ির মতো জরুরি সেবার কাজে থাকা যান চলাচলের পথ করে দেয় তারা।

এদিকে রাজধানীর শান্তিনগর মোড়ে রাস্তা বন্ধ করে ভিকারুননিসা স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আশপাশের স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরাও আন্দোলন করে। দুপুর ৩টার দিকে মিছিল করে কয়েকশ' শিক্ষার্থী বেইলি রোড অতিক্রম করে। এ সময় নিরাপদ সড়ক ও গণপরিবহণে অর্ধেক ভাড়ার দাবিতে স্স্নোগান দেন শিক্ষার্থীরা। অনেক শিক্ষার্থীর হাতে বিভিন্ন লেখা সংবলিত পস্ন্যাকার্ড দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে 'হাফ পাস না দিলে দেখব গাড়ি কেমনে চলে' বলে সমবেত হয়ে স্স্নোগান শোনা যায়। এছাড়াও 'আমার ভাই মরল কেন প্রশাসন জবাব চাই', 'জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে', 'দাবি মোদের একটাই, নিরাপদ সড়ক চাই'- স্স্নোগান দিতে দেখা গেছে। শত শত শিক্ষার্থীর জোরালো কণ্ঠস্বরে মুখরিত ছিল রাজপথ। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, তেজগাঁও সরকারি কলেজ, লালমাটিয়া মহিলা কলেজ, মুন্সি আব্দুর রউফ কলেজ, মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজ, তেজগাঁও সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, হলিক্রস কলেজ, ধানমন্ডি গভর্মেন্ট বয়েজ হাই স্কুলসহ নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ছিলেন।

তেজগাঁও সরকারি বিজ্ঞান কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী তাহমিনা বলেন, 'দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।'

লালমাটিয়া মহিলা কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, 'বাসে উঠলে হাফ (অর্ধেক) ভাড়া নেয় না কন্ডাক্টর। নারী শিক্ষার্থীদের দেখলে বাস থামায় না। কোনোভাবে বাসে উঠলেও চালক ও চালকের সহকারী আমাদের সঙ্গে অসদাচরণ করে।'

শিক্ষার্থীদের দাবি, ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময়ের ৯ দফা দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে। দ্রম্নত সময়ের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন করা না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা। হাফ পাসের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে বলে জানান তারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের অবস্থানকালে স্থানীয় পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা আশপাশে অবস্থান নেন। পরে ওই সড়কে যান চলাচল সীমিত করে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে গাড়ি ডাইভারসন দেওয়া হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ স্স্নোগান দিচ্ছেন, কেউ রাস্তায় চলাচল করা গাড়ির লেন সচল রাখছেন। কেউ গাড়ির কাগজপত্র যাচাই করছেন। চালকের লাইসেন্স ও গাড়ির কাগজ ঠিক না থাকলে পুলিশের সহায়তা নিতেও দেখা গেছে তাদের।

ধানমন্ডি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আব্দুলস্নাহ আল মাসুম গণমাধ্যমকে বলেন, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর এলাকার মোড়ে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের কর্মসূচির কারণে দীর্ঘ যানজট দেখা দিয়েছে বিভিন্ন সড়কে।

শান্তিনগর মোড়ে দায়িত্বরত একজন ট্রফিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, শিক্ষার্থীরা ৯ দফা দাবিতে স্স্নোগান দিচ্ছেন। রাস্তায় বিভিন্ন গাড়ির চালকদের লাইসেন্সও পরীক্ষা করছেন তারা। উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হাবিবুলস্নাহ বাহার কলেজ এবং ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা শান্তিনগর মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। ৯ দফা দাবিতে দুপুর সোয়া ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত তারা শান্তিনগর থেকে কাকরাইল পর্যন্ত সড়কে মিছিল করেন। এ সময় সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে তারা কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নিলে শান্তিনগর দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের শাখাপ্রধান (কলেজ) মশিউর রহমান শিক্ষার্থীদের দীর্ঘসময় ধরে বুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। এরপর কাকরাইল এলাকার সড়কেও যানবাহন চলাচল শুরু হয়। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভ-অবরোধের কারণে আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে বলেও পুলিশের এই সদস্য জানিয়েছেন।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, মঙ্গলবারের মধ্যে তাদের দাবি পূরণ করে প্রজ্ঞাপন জারি না হলে ওই দিন দুপুরে রাজধানীর সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে তারা বিআরটিএ কার্যালয় ঘেরাও করবে। এছাড়া সোমবারও বিক্ষোভ চলবে এবং সড়কে গাড়ির ফিটনেস ও লাইসেন্স পরীক্ষা চলবে। ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনে যে ৯ দফা দাবি ছিল, সরকার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েও তা বাস্তবায়ন করেনি।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে ভিকারুননিসা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকেও বিভিন্ন দাবি তোলা হয়। দাবিগুলো হলো : ১. সিস্টেমেটিক মার্ডারের শিকার হওয়া নাইমের খুনিদের বিচার করতে হবে। ২. সরকারি ব্যবস্থাপনায় আরও বেশি গণপরিবহণ চালু করতে হবে। ৩. ড্রাইভারের লাইসেন্স না থাকলে সেই গাড়ি এবং গাড়ির মালিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। ৪. সরকারি, বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের গাড়ি দ্বারা যেসব অবহেলাজনিত দুর্ঘটনা ঘটে তা মূলত ওইসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, গাফিলতি, অবহেলা এবং পর্যাপ্ত সদিচ্ছার অভাবে। তাই নাঈমসহ প্রাতিষ্ঠানিক গাড়ি দ্বারা অবহেলাজনিত দুর্ঘটনা নামক সব হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের উপযুক্ত শাস্তি ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। ৫. নাঈমের নামে গুলিস্তানের ঝুঁকিপূর্ণ সড়কের মোড়ে ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ করতে হবে। ৬. নাঈমের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ৭. শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি, বেসরকারি সব গণপরিবহণে হাফ পাস নিশ্চিত করতে হবে। ৮. নিরাপদ সড়ক আইন -২০১৮ পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে