শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগ 'হিরো' আলমের কাছেও অসহায় :ফখরুল

১১ ফেব্রম্নয়ারি ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা
যাযাদি রিপোর্ট
  ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
রাজধানীর নয়া পল্টনে শনিবার ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত বিভাগীয় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -ফোকাস বাংলা

বিভাগীয় সমাবেশ থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে যুগপৎ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আগামী ১১ ফেব্রম্নয়ারি পদযাত্রার অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সমমনা দল এবং জোটও। শনিবার বিকালে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ থেকে সরকার পতন আন্দোলনে তৃণমূলের জনগণকে সম্পৃক্ত করতে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের একপাশের সড়কে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের আয়োজনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা দাবিতে এই সমাবেশ হয়। ঢাকা ছাড়াও অন্য ৯টি বিভাগীয় শহরে একযোগে এই কর্মসূচি হয়েছে। বেলা ১২টা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে নয়া পল্টনে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করে। সমাবেশের কার্যক্রম বেলা ২টায় শুরু হয়ে শেষ হয় বিকাল সাড়ে ৫টায়। কাকরাইলের নাইটেঙ্গল রেস্টুরেন্ট মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতি সমাবেশ জনসমুদ্রে রূপ নেয়। নেতাকর্মী লাল-হলুদ-নীল-সবুজ টুপি পরে, তাদের কারও কারও হাতে ছিল জাতীয় ও বিএনপির পতাকা। ঢাকার আশপাশের গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ অন্য জেলার নেতাকর্মীকেও এদিন দেখা যায়।

সরকার পতনের আন্দোলনে তৃণমলের জনগণকে সম্পৃক্ত করতে আগামী ১১ ফেব্রম্নয়ারি সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে মির্জা ফখরুল বলেন, গ্যাস-বিদু্যৎ-চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা মহানগরেও একই কর্মসূচি পালিত হবে। এরপর ধীরে ধীরে উপজেলা-জেলা-মহানগর এবং এরপর জনগণ সেই ক্ষমতার মসনদ দখল করে নেবে, জনগণের সরকার গঠন করবে। মানুষের অধিকারকে রক্ষা

\হকরার জন্য সামনের দিকে এগিয়ে চলছি। একটা লং মার্চের মধ্য দিয়ে এদের পরাজিত করে সত্যিকার অর্থেই জনগণের একটা রাষ্ট্র বানাতে চাই।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার হিরো আলমের (বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্রপ্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম) কাছেও অসহায়। রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে হিরো আলমকে পরাজিত করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন ব্যক্তিকে জেতাতে আরেকজন প্রার্থীকে গুম করা হয়েছে। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগের নির্বাচন ব্যবস্থার পরিস্থিতি। তাদের অধীন কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

আইএমএফের ঋণের প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এই সরকার দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিয়েছে। তারা আজকে ঋণ গ্রহণ করছে। আপত্তি নাই। উন্নয়নের জন্য অবশ্যই ঋণ নিতে হবে, ঋণ নিতে হয়। কিন্তু সেই ঋণের টাকা নিয়ে যদি পাচার করে কানাডার বেগমপাড়াতে বাড়ি তৈরি করেন, ঋণ এনে মালয়েশিয়াতে সেকেন্ড হোম তৈরি করেন তাহলে সেই ঋণের টাকা বাংলাদেশের মানুষ পরিশোধ করবে কেন? মানুষের পিঠ এখন দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন মানুষ সরকারের পতন দেখতে চায়, পরিবর্তন দেখতে চায়।

তিনি বলেন, সরকার আবার মেগা প্রজেক্ট শুরু করেছে। পাতাল রেলের প্রকল্পে ৫২ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। আর সাধারণ মানুষের গরিব-দুস্থ ভাতার টাকা সরকার চুরি করে লুট করতে শুরু করেছে এবং সেই ভাতার টাকাও বন্ধ করে দিচ্ছে। পাকিস্তান আমলে এই আওয়ামী লীগ স্স্নোগান দিত ২২ পরিবারকে দূর করতে হবে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আজকে সেই আওয়ামী লীগ কয়েক হাজার পরিবার তৈরি করেছে যে পরিবার বাংলাদেশের সব সম্পদ লুণ্ঠন করে নিয়ে যাচ্ছে। আজকে এদেশে লুটেরাদের বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। এই লুটেরার নেতৃত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।

ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক প্রকাশের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, সামাজিক মূল্যবোধ, ঐতিহ্য সবকিছুকে ধ্বংস করেছে। দেশের সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করছে, ধর্মবোধকে ধ্বংস করছে। সত্যিকার অর্থে একটা নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করছে। এই সরকার দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে যাচ্ছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে এবং উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউলস্নাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, ডক্টর আসাদুজ্জামান রিপন, সাইফুল আলম নিরব, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী, ঢাকা মহানগর বিএনপির তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণসহ আরও প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

শনিবার ঢাকায় গণতন্ত্র মঞ্চ, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরাম-পিপলস পার্টি আলাদা আলাদা সমাবেশ করে। তারাও ১১ ফেব্রম্নয়ারি পদযাত্রার অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করে।

গণতন্ত্র মঞ্চ : সরকারের পদত্যাগসহ ১৪ দফার দাবিতে ১১ ফেব্রম্নয়ারি ঢাকাসহ সারা দেশে পদযাত্রা ও গণসংযোগের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশে বাংলাদেশের বিপস্নবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ওইদিন সকাল ১০টায় মিরপুর ১২ নম্বরে গণতন্ত্র মঞ্চের পদযাত্রা শুরু হবে। সেখান থেকে পদযাত্রা ফার্মগেট, শাহবাগ, পল্টন হয়ে মতিঝিলে গিয়ে শেষ করব। একই সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চ জেলা ও বিভাগীয় পর্য়ায়েও এই কর্মসূচি করবে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, সরকারের স্মার্টনেস মানে চাতুরি করা, ভোট চুরি করা। মানুষ আর মিথ্যাচার মেনে নেবে না। মানুষ জেগে উঠছে।

গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর বলেন, এই সরকার বাংলাদেশকে তাদের পেয়ারা পাকিস্তানের সমপর্যায়ে নিয়ে গেছে। পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশও আইএমএফ থেকে ঋণ নিয়েছে। এই সরকার বাংলাদেশকে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে আইএমএফের কাছে হাজির করেছে। আরও বক্তব্য রাখেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জেএসডির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম প্রমুখ। সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না উপস্থিত থাকলেও অসুস্থতার কারণে বক্তব্য দেননি।

এলডিপি : লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব ডক্টর রেদোয়ান আহমেদ বলেছেন, নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে সবকিছু। মনে হচ্ছে জ্বলন্ত চিতার ওপর আছে দেশের মানুষ। রাজধানীর পূর্বপান্থপথের এফডিসি সংলগ্ন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এলডিপি আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। পরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল বের করে এলডিপি। মিছিলটি মালিবাগ মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

১২ দলীয় জোট : শনিবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাংক সংলগ্ন রাস্তায় সমাবেশ করে ১২ দলীয় জোট। জাতীয় পার্টির (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদার পরিচালনায় সমাবেশ আরও বক্তব্য রাখেন লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম প্রমুখ।

জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট :রাজধানীর বিজয়নগরে আল রাজি কমপেস্নক্সের সামনে এক সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ডক্টর ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন জাগপার একাংশের খন্দকার লুৎফর রহমান, বিকল্পধারা বাংলাদেশের (একাংশ) অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারি, গণদলের এ টিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী প্রমুখ।

সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট : সকালে পুরানা পল্টন মোড়ে 'সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট'-এর উদ্যোগে সমাবেশ হয়। জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি মুহাম্মদ সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন জিয়া নাগরিক সংসদের অ্যাডভোকেট মাইনুদ্দিন মজুমদার, জাতীয়তাবাদী নাগরিক দলের সৈয়দ ওমর ফারুক প্রমুখ।

গণফোরাম ও পিপলস পার্টি: বিকালে আরামবাগে সমাবেশ করেছে গণফোরাম (মন্টু) ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি। এ দুই দলও একই কর্মসূচি ঘোষণা করে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, পিপলস পার্টির বাবুল সর্দার চাখারী প্রমুখ। এ ছাড়া দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশে করেছে চারদলীয় জোট গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য।

প্রসঙ্গত, যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে সারা দেশে ১০ বিভাগীয় সদরে পঞ্চম ধাপের কর্মসূচি এটি। এর আগে গত ২৪ ডিসেম্বর ৯ বিভাগীয় শহরে এবং ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিল, ১১ জানুয়ারি সারা দেশে অবস্থান কর্মসূচি এবং ২৫ জানুয়ারি সারা দেশে বিক্ষোভ-সমাবেশ করে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে