বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন

আজ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা
যাযাদি রিপোর্ট
  ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে রোববার ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশে তার ছোট বোন শেখ রেহানা -ফোকাস বাংলা

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনই হচ্ছেন দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি। তিনি রাষ্ট্রপতি পদে একমাত্র প্রার্থী হওয়ায় এখন আর ভোটের প্রয়োজন হবে না। রোববার দুপুরে রাষ্ট্রপতি পদে তাকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এক প্রতিক্রিয়ায় মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বলেন, 'আলস্নাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কারণ, তিনি আমাকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছেন।'

এদিকে, সব অনুমান, নানা জল্পনাকল্পনা ভুল প্রমাণ করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী মনোনীত করল আওয়ামী লীগ। জাতীয় নির্বাচনের আগে এবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিকে সবার নজর ছিল। কে হচ্ছেন নতুন রাষ্ট্রপতি- এ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেকের নাম নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছিল। কিন্তু সব আলোচনা ছাপিয়ে অনেকটা চমকের মতো এসেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর নাম।

অন্যদিকে, আর কোনো

প্রার্থী না থাকায় এখন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণার অপেক্ষা। বিধান অনুযায়ী, আজ সোমবার প্রার্থিতা বাছাইয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ বিবেচিত হলে নির্বাচন কমিশন তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করবে। এখন শুধু প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পালা।

প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা : এর আগে এদিন সকালে গণভবনে ২২তম রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ায় মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানাও উপস্থিত ছিলেন।

আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী ডক্টর হাছান মাহমুদ, চিফ হুইপ লিটন চৌধুরী, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, ফারুক খান, দপ্তর সম্পাদক বিপস্নব বড়ুয়া ও তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা।

এক নামে দুই মনোনয়নপত্র জমা : নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাঙ্গীর আলম রোববার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একই ব্যক্তির নামে দু'টি আবেদনপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, 'যার নামে দাখিল হয়েছে তিনি মো. সাহাবুদ্দিন। পিতা প্রয়াত শরফুদ্দিন আনসারী। বাসা হোল্ডিং ৮৮/১ গ্রাম রাস্তা শিবরামপুর পাবনা। পোস্ট কোড ৬৬০০ পাবনা।'

সচিব জানান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের নির্বাচনী কর্তার দপ্তরে দু'টি আবেদন বেলা ১১টা এবং বেলা ১১টা ৫ মিনিটে জমা দেওয়া হয়েছে। মনোনয়নপত্র প্রস্তাবকারীর নাম হচ্ছে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নোয়াখালী-৫ আসনের সংসদ সদস্য ওবায়দুল কাদের এবং সমর্থনকারীর নাম হচ্ছে চট্টগ্রাম-৭ আসনের সংসদ সদস্য যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডক্টর হাছান মাহমুদ।

জাহাঙ্গীর আলম জানান, মনোনয়নপত্র দাখিলের নির্ধারিত সময় রোববার বিকাল চারটা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া আর কারও মনোনয়নপত্র জমা পড়েনি। সোমবার (আজ) দুপুরের মধ্যে প্রার্থিতা বাছাইয়ের পর নির্বাচন কমিশন তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে।

একক প্রার্থী হলে তার প্রক্রিয়া কী হবে জানতে চাইলে সচিব বলেন, 'সোমবার (আজ) বাছাইয়ের পরে বৈধ মনোনয়ন যেটা হবে তার নাম ঘোষণা করা হবে। আইনানুগতভাবে প্রত্যাহারের শেষ তারিখে আমরা চূড়ান্তভাবে ঘোষণা করব কে বাংলাদেশের পরবর্তী মহামান্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন।' যেহেতু একই ব্যক্তির দু'টি আবেদন এবং দু'টি যদি বাছাইয়ে টিকে তবে সোমবারই এটি চূড়ান্ত হয়ে যাবে বলে উলেস্নখ করেন তিনি।

সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর সংক্ষিপ্ত পরিচয় : এদিন সকালে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। এটা স্পষ্ট যে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যাকে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য মনোনীত করবে, তিনিই পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হবেন। নানা আলোচনার পর অবশেষে দলটির মনোনীত প্রার্থীর নাম প্রকাশ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর নাম ঘোষণা করে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের প্রাচীনতম এবং ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে মনোনয়ন প্রদান করেছে। আওয়ামী লীগের সভাপতি, আওয়ামী লীগের সংসদীয় দল গত ৭ ফেব্রম্নয়ারি বৈঠকে সংসদীয় দলের নেতা শেখ হাসিনার ওপর যে দায়িত্ব অর্পণ করেছে, তিনি এ মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছেন।'

ওবায়দুল কাদের সম্ভাব্য রাষ্ট্রপতির পরিচয় তুলে ধরে বলেন, 'মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন পেশায় একজন আইনজীবী এবং বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্য। তিনি ১৯৪৯ সালে পাবনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইতোপূর্বে জেলা, সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একজন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।'

মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাও ছিলেন উলেস্নখ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'তিনি ১৯৭১ সালে পাবনা জেলায় স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন।' জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর হত্যার পর তিনি দীর্ঘ তিন বছর কারাগারে বন্দি ছিলেন বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।

তিনি আরও বলেন, '১৯৮২ সালে তিনি বিসিএস ক্যাডার হিসেবে বিচার বিভাগে যোগ দান করেন। ১৯৯৫ সালে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন।'

তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয়ের নিযুক্ত কোঅর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন উলেস্নখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'তিনি ২০০১ সালে সাধারণ নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতাকর্মীদের দ্বারা সংঘটিত হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন এবং মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডের অনুসন্ধানে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।'

মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ছাত্রজীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে এক পুত্র সন্তানের পিতা এবং তার স্ত্রী প্রফেসর ডক্টর রেবেকা সুলতানা সরকারের সাবেক যুগ্ম সচিব ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে