শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুপুরে কারাগারে, সন্ধ্যায় মুক্ত মাহী

ডিজিটাল আইনে মামলা
গাজীপুর প্রতিনিধি
  ১৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

পুলিশের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং জমি দখল অভিযোগের মামলায় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহী। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় গাজীপুর জেলা কারাগার থেকে জামিনে তিনি মুক্তি পান। এর আগে তিনি এদিন বেলা পৌনে ১২টার দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে গ্রেপ্তার হন। পরে দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।

মাহীর আইনজীবী আনোয়ার সাদত সরকার জানান, 'মাহী ও তার স্বামী রাকিব সরকার সম্প্রতি সৌদি আরবে ওমরাহ পালন করতে যান। সেখান থেকে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের খবর শুনে শনিবার সকালে মাহী আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন নিতে দেশে ফেরেন। কিন্তু আদালতে পৌঁছার আগে বিমান বন্দর থেকেই তাকে গাজীপুর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করেন। পরে তাকে দুপুর দেড়টার দিকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৫ এ তোলা হলে নিরাপত্তার স্বার্থে সি/ডবিস্নউ মূলে দ্রম্নততার সঙ্গে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালতের বিচারক মো. ইকবাল হোসেন। এজন্য আমরা তখন তার জামিন আবেদন করার সময় পাইনি। পরে আদালতের সময়ের মধ্যে আমরা বিচারকের কাছে তার বিরুদ্ধে দুইটি মামলায় জামিনের জন্য আবেদন করি। আদালতে একজন নামী চলচ্চিত্র অভিনেত্রী এবং ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি আদালতের বিচারকের সামনে উত্থাপন করলে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তিনি মাহীর বিরুদ্ধে দায়ের করা দুইটি মামলায় জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। পরে বিকালে তার জামিনের কাগজপত্র গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।'

গাজীপুর জেলা কারাগারের সুপার মো. আনোয়ারুল করিম জানান, তার জামিনের কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

আসামি পক্ষের আইনজীবীরা হলেন- মো. আনোয়ার সাদত সরকার, রিপন চন্দ্র সরকার, নবীজুল ইসলাম ও কামরুল হাসান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন মহানগর আদালতের পুলিশের এসআই মো. ফয়েজ আহমেদ শামীম।

এর আগে শুক্রবার রাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এবং জমি দখল অভিযোগে মামলা দুইটি দায়ের করা হয়।

মাহীকে গ্রেপ্তারের পরপরই গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার মোলস্না নজরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেন, 'মাহিয়া মাহী জমি সংক্রান্ত ঘটনায় পুলিশ বিভাগ ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ব্যাপারে ফেসবুক লাইভে মিথ্যা

মন্তব্য করেছেন। তিনি প্রতিপক্ষের ব্যাপারেও মন্তব্য করেছেন। এভাবে একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে তিনি মন্তব্য করার অধিকার রাখেন না।'

দুপুর পৌনে ১টায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম বলেন, 'মাহীর বিরুদ্ধে পুলিশ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছে। তার প্রতিপক্ষের লোকজন জমি সংক্রান্ত ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা অবনতি সংক্রান্ত মামলা করেছেন।'

তিনি জানান, শুক্রবার রাতে মাহীর প্রতিপক্ষের দেওয়া মামলায় অভিযুক্ত সাজ্জাদ হোসেন সোহাগ, আশিকুর রহমান, ফাহিম হোসেন হৃদয়, জুয়েল রহমান, জমশের আলী, মোস্তাক আহমেদ, খালিদ সাইফুলস্নাহ জুলহাস, সুজন মন্ডল ও মাহবুব হাসান সাব্বিরকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

কমিশনার বলেন, 'মাহীর স্বামী রকিব সরকারের বিরুদ্ধে এর আগে অস্ত্র, হত্যা ও ধর্ষণের তিনটি মামলা রয়েছে। ওই মামলাগুলোতে কেউ সাক্ষী দেননি। কিন্তু ঘটনা সত্য ছিল। তবে এখন মামলাগুলো পুনরায় তদন্ত ও সাক্ষ্যপ্রমাণ গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া রকিবের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত আমাদের কাছে বিভিন্ন অভিযোগ আসছে।'

স্বামী রকিব সরকারের সঙ্গে মাহী ওমরাহ হজ পালনের জন্য সৌদি আরব গিয়েছিলেন। মাহীর সঙ্গে দেশে ফেরেননি রকিব। তিনি গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

শুক্রবার রাতে মাহী ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ। বাসন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রোকন মিয়া বাদী হয়ে এ মামলা করেন।

এ ছাড়া জমি দখলের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে হুকুমের আসামি করে আরও একটি মামলা করেন স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন।

এর আগে শুক্রবার ভোরে স্বামীর সঙ্গে ওমরাহ পালনরত মাহী সৌদি আরবের মক্কা শহর থেকে ফেসবুক লাইভে রকিবের গাড়ির শোরুম ভাঙচুর ও হামলার অভিযোগ করেন।

এ সময় তিনি দাবি করে বলেন, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের পূর্ব পাশে 'সনিরাজ কার প্যালেস' নামে তার স্বামীর একটি গাড়ির শোরুম রয়েছে। সেখানে দুর্বৃত্তরা হামলা করেছে। তারা শোরুমের গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে আসবাব, দরজা-জানালা, টেবিল-চেয়ার ভাঙচুর করেছে। শোরুমের সাইনবোর্ড খুলে ফেলেছে। অফিসকক্ষ তছনছ করে টাকা-পয়সা লুট করে নিয়ে গেছে।

ইসমাইল হোসেন ওরফে লাদেন ও মামুন সরকার নামে দুজনের নেতৃত্বে ওই হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মাহী। এ সময় ফেসবুকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বিরুদ্ধে 'ঘুষ' নেওয়ার অভিযোগ তোলেন তিনি।

মাহীর ফেসবুক লাইভের পর সংবাদ সম্মেলন করেন স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন। তিনি সংবাদ সম্মেলনে পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেন, রকিব তার প্রায় সোয়া ১১ শতাংশ জমি দখল করে গাড়ির শোরুম করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে তিনি এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে