সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

৬ মার্কিন কংগ্রেসম্যানের চিঠি মিথ্যা ও বাস্তবতা বিবর্জিত

প্রত্যাখ্যান করেছে সেকুলার সিটিজেন
যাযাদি ডেস্ক
  ১৩ জুন ২০২৩, ০০:০০

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু কমে আসা নিয়ে গত ১৭ মে লেখা ৬ মার্কিন কংগ্রেসম্যানের চিঠির তথ্য মিথ্যা এবং বাস্তবতা বিবর্জিত বলে মন্তব্য করে সেই চিঠি প্রত্যাখ্যান করেছে সেকুলার সিটিজেন বাংলাদেশ।

সংগঠনটির নেতারা বলেন, মার্কিন ৬ জন কংগ্রেসম্যান বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের অবস্থা নিয়ে যেভাবে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন তা দেখে বেশ আতঙ্কিত ও হতবাক হয়েছেন বাংলাদেশের নাগরিক বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতারা।

সোমবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে এক সংবাদ সম্মেলনে সেই চিঠি প্রত্যাখ্যানের কথা জানান সংগঠনটির আহ্বায়ক ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের কাছে পাঠানো এক ই-মেইলে সেকুলার সিটিজেনস, বাংলাদেশের সদস্যরা দাবি করেছেন যে, মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের উলিস্নখিত চিঠিটি পক্ষপাতদুষ্ট এবং সংখ্যালঘুর সংখ্যা কমানোর বিষয়ে ইতিহাস বিকৃত করে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করেছেন।

উলেস্নখ্য, কংগ্রেস সদস্যদের চিঠিতে দাবি করা হয়েছে যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়

আসার পর বাংলাদেশে হিন্দুদের সংখ্যা অর্ধেক হয়ে গেছে। পাশাপাশি খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষও একইভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কিন্তু সেখানে একেবারেই উলেস্নখ করা হয়নি যে, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতার বাইরে থেকেও বিগত ২০০১-৬ সালে তাদের নেতৃত্বে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করা হয়। এছাড়াও এই জোটের নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলেও সংঘটিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে কোনো আলোচনাই করেননি এই কংগ্রেসম্যানরা, যার বিষয়ে সাহাবুদ্দিন কমিশনের রিপোর্টে পরিষ্কারভাবে উলেস্নখ করা হয়েছে।

কংগ্রেসম্যানরা এই চিঠিতে গত এক দশকে হিন্দু ধর্মীয় শারদীয় দুর্গাপূজার সংখ্যা সামগ্রিকভাবে সারা বাংলাদেশে বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নেননি। বিএনপি-জামায়াত সরকারের ধর্মীয় ও জাতিগত সম্প্রদায়ের মেধাবী তরুণেরা সরকারি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়ে চাকরি পাননি। একইভাবে যারা তখন সরকারি চাকরিতে ছিলেন তারা বিভিন্নভাবে তাদের ধর্মীয় ও জাতিগত পরিচয়ের কারণের প্রোমোশনসহ বিভিন্ন অধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। বর্তমান সরকারের সময়ে ধর্মীয় ও জাতিগত সম্প্রদায়গত পরিচয় ভুলে গিয়ে যোগ্যতা ও মেধার সঠিক মূল্যায়নের মাধ্যমে সবার সরকারি চাকরি করার অধিকার এবং পেশাগত সুবিধা লাভের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে- এই বিষয়গুলো মার্কিন কংগ্রেসম্যানরা তাদের বিবেচনায় নেননি।

ব্যারিস্টার তাপস কান্তি আরও বলেন, মনে রাখা উচিত যে, ১৯৭৫ সালের পরে বাংলাদেশের সংবিধানের অসাম্প্রদায়িক চরিত্র হরণ করা হয়েছিল; সংবিধানের সেই অসাম্প্রদায়িক চরিত্র কিছুটা হলেও এই সরকার ফিরিয়ে এনেছে দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। আমরা সবাই জানি, নির্বাচন আসলেই ধর্মীয় ও জাতিগত সম্প্রদায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কংগ্রেসম্যানদের উচিত এবারের নির্বাচনে ধর্মীয় ও জাতিগত সম্প্রদায়গুলোকে নিরাপত্তা প্রদানের জন্যে সরকারকে উৎসাহিত করা। উলিস্নখিত ৬ জনের অভিযোগের ভিত্তিতে কিছু করা হলে তা হবে বাস্তবতা বিবর্জিত এবং মানবাধিকার ও বিচার প্রার্থনার নামে প্রতারণা। সেইসঙ্গে বিভিন্ন ধর্মের নেতারা মনে করেন এই চিঠির মাধ্যমে জামায়াত-বিএনপির সময়কার সংখ্যালঘু নির্যাতন ও অপরাধমূলক কর্মকান্ডের দায়মুক্তির সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সুনন্দ প্রিয় ভিক্ষু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর সুবর্ণ বড়ুয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি এবং বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর বিমান বড়ুয়া প্রমুখ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে